করোনা টিকার বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনার টিকার শূন্য সক্ষমতার জায়গা থেকে বুস্টার ডোজের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। অনেক উন্নত দেশও যেখানে টিকার বুস্টার ডোজ শুরু করার সাহস দেখাতে পারেনি সেখানে দেশে প্রথম করোনার টিকাগ্রহীতা নার্স রুনু বেরুনিকা কস্তাকে দিয়েই শুরু হলো এ কার্যক্রম। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরুনিকার পরই বুস্টার ডোজের টিকা নেন সরকারের প্রভাবশালী ৪ মন্ত্রীও। বুস্টার ডোজের জন্য এখন পর্যন্ত সরকারের কাছে ৬০ লাখ টিকা মজুত আছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন জানান, ভারত থেকে কেনা এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যেকোনো মুহূর্তে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে দেশটি। তাই বুস্টার ডোজের জন্য টিকার অভাব হবে বলে মনে করছেন তারা।
প্রথম দিকে শুধু সম্মুখসারীর ডাক্তার, নার্স, গণমাধ্যমকর্মীসহ জরুরী সেবায় নিয়োজিতদের বুস্টার ডোজের টিকা দেয়া হলেও পর্যায়ক্রমে সকল নাগরিককেই বুস্টার ডোজের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। বুস্টার ডোজে আগে যেকোন কোম্পানির টিকাগ্রহীতাদের সবাইকে ফাইজারের টিকাই দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। টিকা পেতে নিবন্ধন জরুরী হলেও এখনও সুরক্ষা এ্যাপের আপডেট না হওয়ায় আপাতত টিকা কার্ডের মাধ্যমে দেয়া হবে বুস্টার ডোজ।
রবিবার দুপুরে মহাখালী বিসিপিএস মিলনায়তনে বুস্টার ডোজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা জানান। নার্স রুনু বেরুনিকার পর এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বুস্টার ডোজের টিকা নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শম রেজাউল করিম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ এবিএম খুরশীদ আলম।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশের আগেই আমরা টিকা কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছি। ডাক্তার, নার্সসহ ফ্রন্টলাইনারদের টিকা দিতে পেরেছি। এবার বুস্টার ডোজের কার্যক্রম শুরু করলাম। টিকার ফলেই দেশ নিরাপদে আছে। মৃত্যুর সংখ্যা এখন এক ডিজিটে আছে। গত শনিবার এক শতাংশেরও নিচে এসেছে। এত জনবহুল দেশে খুবই বিরল একটি বিষয়। সবার সহযোগিতায় আমরা কাজটি করে যাচ্ছি। প্রতিটি মানুষকেই তার প্রাপ্য টিকা দেব। বুস্টার ডোজের টিকার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক টিকা কার্যক্রমও চলবে বলে তিনি জানান।
মন্ত্রী বলেন, এখনও সুরক্ষা এ্যাপে বুস্টার ডোজের জন্য নিবন্ধন করার বিষয়ে আপডেট করা হয়নি। তবে আগামী ২৮ ডিসেম্বরের পরে নিবন্ধন করা যাবে, এই সময়ের মধ্যে কেউ বুস্টার ডোজ নিতে চাইলে আগের টিকা কার্ডের মাধ্যমে নিতে পারবেন। ষাটোর্ধ্বদের বুস্টার ডোজ দিতে যা যা প্রস্তুতি দরকার, আমরা নিচ্ছি। তবে আমাদের প্রস্তুতি এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। সুষ্ঠুভাবে এ কার্যক্রম চালাতে আমরা সুরক্ষা এ্যাপ আপডেট করছি। আইসিটি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা আরেকটু সময় নেবে, আগামী ২৮ ডিসেম্বরের আগে তারা এ্যাপটা আপডেট করতে পারবে না। তাই এ্যাপের মাধ্যমে বুস্টার ডোজের রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) এখনই করতে পারছি না। কিন্তু বুস্টার ডোজ কর্মসূচী চলমান থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বেশ কয়েক ধরনের ভ্যাকসিন আমরা দিয়েছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রটোকল অনুযায়ীই এসব দিয়েছি। বুস্টার ডোজও আমরা ডব্লিউএইচও’র প্রটোকল অনুযায়ী দেব। প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা ফাইজারের টিকা দেব। ডব্লিউএইচও বলেছে, যারা অন্যান্য টিকা নিয়েছে তারাও বুস্টার হিসেবে ফাইজারের টিকা নিতে পারবে। আমরা শুনেছি মডার্নাও বুস্টার ডোজ হিসেবে দেয়া যায়। আমাদের স্টকে মডার্নার টিকাও আছে। তবে আমরা ফাইজারকে বেছে নিয়েছি। কারণ আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ সবকিছুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুসরণ করে থাকে।
বুস্টার ডোজের টিকা নিয়ে উচ্ছ্বসিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন এ সময় বলেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তির মাধ্যমে কেনা অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যে কোন মুহূর্তেই আসা শুরু হবে। মন্ত্রী বলেন, ভারত আমাদের কখনই বলেনি যে টিকা দেবে না। তাদের দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় টিকা পাঠানো কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এখন আবার সেখানে করোনা স্থির আছে। তারা আমাদের জানিয়েছে যে কোন মুহূর্তেই আমাদের টিকা সরবরাহ করবে।
টিকা গ্রহণের অনুভূতি জানতে চাইলে আবদুল মোমেন বলেন, টিকা দিয়েছি, কোন সমস্যা ফিল করছি না। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাইকেই টিকা নেয়া উচিত। আমরা শুনেছি এই টিকা খুব ভাল। এটি গ্রহণ করলে অন্য কোন নতুন ভ্যারিয়েন্ট রোধের ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ কার্যকরী এবং ওমিক্রনের বিরুদ্ধেও এই টিকা যথেষ্ট কার্যকরী। তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ টিকা মজুদ আছে তাই আমরা বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু করেছি। যারা সম্মুখযোদ্ধা তারা আগে আগেই এই টিকা পাবেন। দেশে টিকা যথেষ্ট মজুদ আছে। আমাদের সাপ্লাইয়ের কোন সমস্যা নেই। বরং আমরা যদি টিকা যথাযথভাবে না দেই আমাদের নতুন যে সাপ্লাই আসার কথা সেগুলো আসতে বিলম্ব হবে।
বুস্টার ডোজ কীভাবে নেয়া যাবে, আবেদন প্রক্রিয়া কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, বুস্টার ডোজের টিকা নিতে হলে কাউকে কোন আবেদন করতে হবে না। যেসব কেন্দ্রে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন, এমনকি যাদের টিকার সময়সীমা ছয় মাস পেরিয়েছে, তাদের সেসব কেন্দ্র থেকে তৃতীয় ডোজের জন্য এসএমএস দেয়া হবে। এরপর ওই ব্যক্তি নির্ধারিত টিকা কেন্দ্রে এসে এসএমএস দেখিয়ে বুস্টার ডোজ নিতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, যারা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন তারা কিন্তু আমাদের সুরক্ষা এ্যাপে রেজিস্টার্ড, এমনকি তাদের সকল তথ্য আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। আমরা আবারও স্পষ্ট করে বলছি, তাদেরই আমরা তৃতীয় ডোজ দেব, যাদের দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে। সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এই মুহূর্তে তাদের বুস্টার ডোজ দেয়া হচ্ছে, যাদের ছয় মাস পূর্বে অধিকাংশই অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন অনুযায়ী তৃতীয় ডোজের টিকাটি আমরা যে কোন টিকাগ্রহীতাকে দিতে পারি। প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ আমরা যেভাবে দিয়ে আসছিলাম বুস্টার ডোজও সেভাবে দেয়া হবে। এখানে মিক্সার ডোজের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে বুস্টার ডোজ কার্যক্রম শুরু হলেও আপাতত শুধুমাত্র রাজধানীর কয়েকটি কেন্দ্রে শুরু হচ্ছে। তবে পর্যায়ক্রমে সারাদেশেই বুস্টার ডোজ টিকা সম্প্রসারিত করা হবে।