স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করুন

8

দেশের স্বাস্থ্য তথা চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে গবেষণা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনে বাংলাদেশে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে উচ্চমাত্রায় ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বা ‘আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার’। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে অনেক। গবেষকরা মনে করেন, ব্যক্তির সিংহভাগ টাকা চলে যায় ওষুধের পেছনে। অর্থাৎ, বছরে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে মোট ১০০ টাকা খরচ করলে তার মধ্য থেকে ৬৪ টাকা চলে যায় ওষুধ কিনতে। বিষয়টি উদ্বেগজনক অবশ্যই। দেশের ৮৬ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা নেয় বেসরকারী খাত থেকে। বেসরকারী খাতে অন্য যেসব জায়গা থেকে মানুষ চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়, সেখানে খরচ অনেক বেশি এবং তাতে সরকারের প্রায় কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সেবার মান বাড়ার পরও দেশের সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা ৯৩ শতাংশ রোগী কোন ওষুধ পায় না। হাসপাতালের ওষুধ তাহলে যায় কোথায়?
সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এক সুবিশাল কর্মযজ্ঞ। এ লক্ষ্য পূরণে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রণয়ন আবশ্যক। এজন্য চাই বিশাল বাজেট। জনকল্যাণমুখী সরকার এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন। কিন্তু সাধ ও সাধ্যের ব্যবধান এক কঠিন বাস্তবতা। এটি স্বীকার করেই স্বাস্থ্য খাতের গঠনমূলক সমালোচনা করতে হবে। মোটা দাগে বিবেচনা করতে হবে কোভিড পূর্ব ও কোভিড পরবর্তী বাস্তবতা। সংক্রামক এবং অসংক্রামক রোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে নিয়েও বলা যায়, শিশুস্বাস্থ্য পরিচর্যাসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছে। উদ্ভাবনের পর থেকে এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে সাত কোটির বেশি মানুষের জীবন রক্ষা করেছে ওআরএস। গর্বের বিষয় হচ্ছে, ওআরএসের উদ্ভাবন ও গবেষণার সিংহভাগ কাজ হয়েছিল বাংলাদেশে- আইসিডিডিআরবিতে।
করোনা মহামারীর কারণে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা যে কতটা ভঙ্গুর, সেটির বহু উদাহরণ মিলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন করতে হলে ব্যক্তিকে তার প্রয়োজনের সময় মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। রোগীকে আর্থিক বিপর্যয় থেকে রক্ষার লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, সরকারী হাসপাতালে সেবার মান বৃদ্ধি, ওষুধের যৌক্তিক ব্যবহার বৃদ্ধি, জনবল বৃদ্ধি, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদকরণ, বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিকে নজরদারি বাড়ানোসহ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছেন দুই গবেষকরা। তার আগে সার্বিক মেডিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কতটা সন্তোষজনক এবং সরকারী স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতির পরিমাণ কতটা, এসব প্রশ্নেরও সদুত্তর পেতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক প্রয়োজন। সেটি পূরণে আন্তরিক ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই।