তৃতীয় দফায় বন্যায় গোয়াইনঘাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পাহাড়ি ঢল অব্যাহত

66
গোয়াইনঘাটে উজানের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় প্লাবিত ব্রীজ ও স্কুল।

কে. এম লিমন গোয়াইনঘাট থেকে :
ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গোয়াইনঘাটে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে মানুষের বসত বাড়িসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
বসত বাড়িতে পানি উঠায় পানিবন্দি হয়ে অনেকেই তাদের গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন। বসত বাড়ির পাশাপাশি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কের উপর দিয়ে কোথাও কোথাও দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতায় পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যার ফলে সারী-গোয়াইনঘাট ও রাধানগর-গোয়াইনঘাট এবং সালুটিকর গোয়াইনঘাট সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।
একই সঙ্গে ডাউকি নদীর প্রবল স্রোতে নদীর তীরবর্তী এলাকার কয়েক জায়গায় ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে উপজেলার সারী ও ডাউকি নদীর পানি।
পাহাড়ে বৃষ্টিপাত হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি আরও অবনতি হয় তাহলে মানুষের জান মাল রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্লাবিত এলাকার ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এদিকে আকস্মিক বন্যায় জাফলং ও বিছনাকান্দি কোয়ারি সংশ্লিষ্ট কয়েক সহস্রাধিক পাথর ও বালু শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত বৃহস্পতিবার থেকে উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে থাকে। সারী, গোয়াইন, ডাউকি ও পিয়াইন নদী দিয়ে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় পাহাড়ি ঢল। এতে করে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। উপজেলা সদরের প্রধান তিনটি সড়কসহ তলিয়ে যায় গ্রামীণ জনপদের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েন সহস্রাধিক পরিবার। বসত বাড়ি প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি কৃষকের আউশ, বোনা আমন, আমন ধানের বীজ তলা এবং সবজি ক্ষেতসহ প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে ফসলি জমি নিমজ্জিত হওয়ার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সুলতান আলী জানান, পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দেয়ায় উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে আউশ ধান, বোনা আমন ও আমন ধানের বীজতলা এবং সবজি ক্ষেতসহ সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৮শ’ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হওয়ার খবর পেয়েছি। তবে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে এর পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর যদি বন্যার পানি দুয়েকদিনের মধ্যে কমে যায় তাহলে তলিয়ে যাওয়া ফসলের তেমন কোন ক্ষতি হবে না বলে তিনি জানিয়েছেন বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুস সাকিব বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে।
ইতিমধ্যে ডাউকি, গোয়াইন এবং সারী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সবকটি ইউনিয়নের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। বন্যায় জনগণের দুর্ভোগ লাগবে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পানিবন্ধি মানুষজনের জন্য জরুরী ত্রাণ সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তবে, এ প্রতিবেদন লেখার সময় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত রয়েছে। সারী, গোয়াইন, ডাউকি ও পিয়াইন নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছে।