ফাইনালে ওঠার লড়াই আজ পাকিস্তান অস্ট্রেলিয়ার

4

স্পোর্টস ডেস্ক :
টি২০ বিশ্বকাপে আগের ছয় আসরে ৬ বার মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া। সমান তিনটি করে জয় দু’দলের। দুবাইয়ে আজ এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। সপ্তম আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি বাবর আজম ও এ্যারন ফিঞ্চের দল। সুপার টুয়েলভে পাঁচ ম্যাচের সব জিতে গ্রুপ ২-এর সেরা হিসেবে শীর্ষ চারে নাম লেখানো পাকিরা এবার ভয়ঙ্কর সুন্দর ক্রিকেট খেলছে! ব্যাটে-বলে উড়ছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, শাহিন শাহ আফ্রিদিরা। ২০০৯-এর পর দ্বিতীয় শিরোপার পথে এগিয়ে যেতে টগবগ করে ফুটছে বাবর এ্যান্ড কোং। অন্যদিকে গ্রুপ ১-এ রানরেটে দ.আফ্রিকাকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিতে উঠে আসে অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডেতে রেকর্ড পাঁচ বিশ^কাপের চ্যাম্পিয়ন অসিরা টি২০-তে এখনও শিরোপার স্বাদ পায়নি। এবারও তারা সেই অর্থে ফেবারিট ছিল না। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ দলীয় নৈপুণ্য, দারুণ বোলিং এবং অদম্য মানসিকতায় ফাইনালের এক পা দূরে দাঁড়িয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখে অস্ট্রেলিয়া, প্রতিপক্ষ উড়তে থাকা পাকিস্তান। দুবাইয়ে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় রাত আটটায়।
২০০৭ সালে প্রথম টি২০ বিশ^কাপের ফাইনালে ভারতের কাছে হারের দুঃখ পাকিস্তান ভুলেছিল পরের আসরে, ২০০৯-এ শিরোপা জিতেছিল ইউনুস খানের দল। এরপর চার আসরে দু’বার সেমিফাইনাল খেললেও, ফাইনালে উঠতে পারেনি পাকিস্তান। এবার ফাইনালে ওঠার সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না তারা, ‘প্রতিপক্ষ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া শক্তিশালী। আমরা নিজেদের নিয়ে ভাবছি। আসরে এ পর্যন্ত আমাদের যা পারফর্মেন্স, তাতে আমরা ফাইনালে ওঠার যোগ্য দল। আর সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাই না’- বলেন রিজওয়ান। টি২০ বিশ^কাপে এক বারই ফাইনালে খেলেছে অস্ট্রেলিয়া, ২০১০-এ ইংল্যান্ডের কাছে তারা হারে ৭ উইকেটে। ২০১২ সালের পর আর সেমিতে ওঠা হয়নি অসিদের। ওয়ানডেতে রেকর্ড পাঁচ বিশ^কাপের চ্যাম্পিয়ন দলটি টি২০ শিরোপার জন্য ১৪ বছর ধরে অপেক্ষা করছে। সেমিতে আজ পাকিস্তানকে মোকাবেলায় ইনফর্ম বাবর-রিজওয়ানের ব্যাটিং নিয়ে ভাবতে হবে, তবে অধিনায়ক ফিঞ্চের চিন্তা শাহিন শাহ আফ্রিদিকে নিয়ে। বল হাতে শুরুতেই বড় উইকেট শিকার করে প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙ্গে দিচ্ছেন সেনসেশনাল এ পেসার। ফিঞ্চ বলেন, ‘পাকিস্তান কেমন খেলছে, আমরা সবাই তা দেখছি। সব বিভাগেই ওরা ভাল করছে। তবে পেসার শাহিন আফ্রিদিকে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা করতে হবে, এটা হতে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ লড়াই।’ তিনি আরও যোগ করেন, আমার মনে হয় বোর্ডে রান তোলাই হবে সবচেয়ে সুবিধাজনক, বিশেষ করে নকআউটের মতো পর্বে। আমরা এ নিয়ে কথা বলেছি। আমরা আত্মবিশ্বাসী।
সুপার টুয়েলভে পাকিস্তানের শতভাগ সাফল্যের পেছনে বড় রহস্য ক্রিকেটারদের ধারাবাহিক পারফর্মেন্স। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধিনায়ক বাবর আজম। অধিনায়কত্ব ছাড়াও ব্যাট হাতে সফল তিনি। ৫ ইনিংসের ৪টিতে হাফ সেঞ্চুরিতে আসরের সর্বোচ্চ ২৬৪ রানের মালিক বাবর। এছাড়া বাবরের ওপেনিং পার্টনার মোহাম্মদ রিজওয়ানও আছে তুখোড় ফর্মে। ২টি হাফ সেঞ্চুরিতে ২১৪ রান করেছেন তিনি। বুড়ো মোহাম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মালিকের ভেল্কি তো ছিলই। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ১৮ বলে ৫৪ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলেন মালিক। বোলিং বিভাগে দুই পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হাসান রউফ সেরা ফর্মে আছেন। আফ্রিদি ৬ ও রউফ ৮ উইকেট শিকার করেছেন। দুই স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম ও শাদাব খান রান আটকে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টির পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। ইমাদ ৪টি ও শাদাব ৫টি উইকেট শিকার করেছেন। চিরশত্রু ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়ে শুরু, এরপর ৫ উইকেটে নিউজিল্যান্ডবধ। মোহাম্মদ নবি, রশিদ খানদের আফগানিস্তানকেও সমান ব্যবধানে হারায় বাবর-বাহিনী। দুর্বল নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ডকে উড়িয়ে দেয়ার পথে জয় ৪৫ ও ৭২ রানে।
অন্যদিকে গ্রুপ-১ এ পাঁচ ম্যাচের চারটিতে জয় পাওয়া অস্ট্রেলিয়া নেট রানরেটে দক্ষিণ আফ্রিাকে পেছনে ফেলে সেমির টিকেট পায়। সুপার টুয়েলভে ব্যাটসম্যানরা খুব একটা আলো ছড়াতে পারেননি। শুধু ডেভিড ওয়ার্নার ও অধিনায়ক ফিঞ্চই মোট সংগ্রহ তিন অঙ্কে নিতে পারেন। ৫ ইনিংসে ১৩০ রান ফিঞ্চের। তাই স্টিভেন স্মিথ-মার্কাস স্টয়নিস-ম্যাথু ওয়েড-গ্লেন ম্যাক্সওয়েলদের জ্বলে উঠতে হবে। তবে প্রতি ম্যাচেই জ্বলে উঠেছেন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। বিশেষভাবে লেগস্পিনার এ্যাডাম জাম্পা। ৫ ইনিংসে ১১ উইকেট নিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৯ রানে ৫ উইকেট সেরা বোলিং ফিগার জাম্পার। তার সঙ্গে পেসাত্রয়ী জশ হ্যাজেলউড ৮টি, মিচেল স্টার্ক ৭টি ও প্যাট কামিন্স ৪ উইকেট নেন। বিশ্ব ক্রিকেটে বড় আনপ্রেডিক্টেবল এক দল পাকিস্তান। কিন্তু এবার তারা যেমন প্রেডিক্টেবলের মতো একের পর এক জয় তুলে নিচ্ছে, সেটিই হয়ত শঙ্কার। পেশাদারিত্বের বড় উদাহরণ অসিদের সঙ্গে বড় ম্যাচে আজই না আবার ভেঙ্গে পড়ে, আনপ্রেডিক্টেবল হয়ে ওঠে! তবে নিজেদের দ্বিতীয় হোম ভেন্যু আমিরাতে এবার এই দলটা ব্যর্থ হবে, ভক্তরা তা মনে করেন না। বড় কিছুর স্বপ্নে বিভোর তারা। অন্যদিকে ওয়ার্নার, স্মিথ, মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজেলউডের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে মরণ কামড় দিতে প্রস্তুত এ্যারন ফিঞ্চের অস্ট্রেলিয়া। বিশ^কাপের অতীত পরিসংখ্যান সমানে-সমান হলেও সর্বোপরি টি২০-তে এগিয়ে পাকিস্তান। এ পর্যন্ত ২৩ দেখায় পাকিদের জয় ১২ ম্যাচে। অসিদের ৯টি। ১টি করে ম্যাচ টাই ও পরিত্যক্ত হয়।