রোহিঙ্গাদের রক্তক্ষয়ী সংঘাত অশনি সঙ্কেত

2

কাজিরবাজার ডেস্ক :
উখিয়া টেকনাফের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ভবিষ্যত দিন দিন গভীর অন্ধকারে নিপতিত হচ্ছে। এর মূল কারণ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে এদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি। এদেশ নিজেদের সমস্যার উত্তরণ ঘটিয়ে একদিকে যেমন এগিয়ে চলেছে, অন্যদিকে এ আশ্রিত রোহিঙ্গারা সরকারের জন্য, জাতির জন্য বড় ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার অর্থাৎ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থেকে অতি কৌশলে দূরে রাখার কারণেই এসব রোহিঙ্গাকে নিয়ে বড় ধরনের বিপাকে রয়েছে এদেশের প্রশাসন। দিন দিন রোহিঙ্গা ইস্যুটি সরকারের জন্য বড় ধরনের বাড়তি বোঝার পাশাপাশি দুশ্চিন্তার বড় একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টি বারবার উঠছে। কিন্তু সমস্যা সমাধানের কোন উপায় বের করা হচ্ছে না। মিয়ানমারকে বাধ্য করানো যাচ্ছে না তাদের নাগরিকদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে নেয়ার জন্য। আর মিয়ানমারও এমনভাবে ঘাপটি মেরে আছে যাতে এদের ফিরিয়ে নিতে না হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে পুরো কক্সবাজার অঞ্চলের স্থানীয়রা চরম আতঙ্কে রয়েছে। শুক্রবারের হামলার ঘটনায় শনিবার আরও ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মোট ৮ জন গ্রেফতার হয়।
রোহিঙ্গাদের সবকিছুতেই রয়েছে অতি উগ্রতা। এ উগ্রতা নিয়েই এরা এদেশে আশ্রিত অবস্থায় তাদের নিজেদের স্বরূপ উন্মোচন করে চলেছে একে একে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘শরণার্থী শিবির’ এখন উখিয়া টেকনাফ অঞ্চল। আর রোহিঙ্গাদের নিয়ে এ শরণার্থী শিবির। যদিও শরণার্থী মর্যাদা নিয়ে এরা ঘোষিত নয়। সরকারের খাতায় এরা ‘মিয়ানমারে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিক’।
এই রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা মাদক ও মানব পাচার থেকে শুরু করে নানা অপকর্মে জড়িত। এদেশে আশ্রিত হওয়ার পর গত ৪ বছরেরও বেশি সময় হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কমপক্ষে ৮০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার ভোরে। যেখানে ৬ নিরীহ মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্রকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রশাসন কোনভাবেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। এছাড়া উখিয়া টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্প দিনের বেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে প্রতিভাত হলেও রাতের বেলা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। রাতেই সশস্ত্র রোহিঙ্গা ক্যাডারদের যত অপকর্ম চলে। যে কারণে প্রতিটি শিবির বর্তমানে ভয়ঙ্কর উৎকণ্ঠা থাকছে। অধিকার আদায়ের নামে রোহিঙ্গাদের রয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। মূলত বিদেশী কিছু রাষ্ট্র ও কিছু এনজিওদের পৃষ্ঠপোষকতায় এসব সংগঠন দিন দিন বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে।
ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ ‘আরসা’ আশ্রয় শিবিরে মিয়ানমারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে বলে তথ্য মিলছে। রোহিঙ্গাবিরোধী মিয়ানমারে যে শক্তিগুলো তৎপর মূলত তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী আরসা কমান্ডারের নির্দেশে ক্যাম্পে ঘাপটি মেরে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের হত্যা করে চলেছে। আশ্রয় ক্যাম্পে নানান অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে আরসার পূর্ব পরিকল্পনা মতে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রাতের বেলায় আরসা ক্যাডারদের চলছে রাম রাজত্ব। শুক্রবার ভোররাতে উখিয়ার বালুখালী ময়নারঘোনা ক্যাম্পে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ মাদ্রাসায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হামলায় ছয় জন নিহতের ঘটনায় আট সন্ত্রাসীকে আটক করেছে এপিবিএন পুলিশ। শুক্রবার গভীর রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এর আগে শুক্রবার ভোরে সন্ত্রাসী হামলার পর একটি অস্ত্র ও গুলিসহ জসিম উদ্দিন নামে এক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়। এরপর আর কাউকে আটক করা যায়নি। শুক্রবারের ৬ হত্যাকান্ডের সুনির্দিষ্ট ক্লুও এখনও উদঘাটিত হয়নি।
বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, দিনের বেলায় ক্যাম্প পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকে প্রশাসনের। রাতের বেলায় সশস্ত্র অবস্থায় ঘুরে বেড়ায় সন্ত্রাসীরা। এসব সন্ত্রাসীকে আটক করতে সেনা বাহিনী, পুলিশ, ও আর্মড পুলিশসহ যৌথ অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন আশ্রিত সাধারণ রোহিঙ্গারা। সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসার আনুগত্য না করায় এবং সাধারণ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে রাজি করাতে তৎপরতা চালানোর কারণে শুক্রবার ছয় রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ক্যাম্পের একাধিক সূত্র দাবি করেছে। ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী সংস্থা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব হত্যা মিশনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
ছয় রোহিঙ্গা হত্যার কারণ : সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসা ক্যাডাররা উখিয়া টেকনাফে অবস্থিত ৩৪টি ক্যাম্পে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে থাকে। এসব ক্যাম্পে অন্তত ২ শতাধিক মাদ্রাসা ও হেফজখানা রয়েছে। প্রতিটি মাদ্রাসা থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হারে আরসা ক্যাডারদের চাঁদা দিতে হয়। টাকা দেয়ার সময় হাসিমুখে না দিয়ে মুখভার করে দিলেও তা দোষ হয়ে দাঁড়ায়। ওইসব মাদ্রাসায় শিক্ষকতার দায়িত্বে থাকা প্রত্যেক জন থেকে মাসিক ৫শ’ টাকা হারে চাঁদা আদায় করতে হয় আরসাকে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে কেউ আরসার আনুগত্য স্বীকার না করলে তার প্রাণ উড়ে যায় ক্যাডারদের বন্দুকের গুলিতে। দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ মাদ্রাসা থেকে আরসা ক্যাডারদের মাসিক চাঁদা দিতে গড়িমসি করতেন শিক্ষকরা। তাই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শীর্ষ নেতার নির্দেশে শুক্রবার ভোরে শিক্ষকদের হত্যা করা হয়েছে। ওস্তাদদের বাঁচাতে এগিয়ে আসলে শিক্ষার্থীদের ওপরও নির্দয়ভাবে গুলি চালায় আরসা ক্যাডাররা।
মিয়ানমার ও আরসার উদ্দেশ্য এক সুতায় গাঁথা : সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী মিয়ানমারের সৃষ্টি। মিয়ানমারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এই সন্ত্রাসী বাহিনী। মিয়ানমার ও আরসার উদ্দেশ্য এক সুতায় গাঁথা। মিয়ানমার সরকার চাইছে, রোহিঙ্গারা সেদেশে আর ফিরে না যাক। আরসা ক্যাডাররাও চাইছে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসন থেকে বিরত থাকুক। বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা স্থায়ীভাবে বাস করুক এই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে মিয়ানমার ও আরসা। এ জন্য মিয়ানমারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে পিছপা হচ্ছে না সশস্ত্র ক্যাডাররা। যারা আশ্রয় ক্যাম্প থেকে নিজ দেশে (মিয়ানমার) ফিরে যাবে বলে ইঙ্গিত পাচ্ছে- তাদেরই চিহ্নিত করে খুন করছে সন্ত্রাসীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, প্রত্যাবাসনে জনমত গঠনে প্রশাসনকে যারা সহযোগিতা দিচ্ছে, ওইসব রোহিঙ্গার তালিকা করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের এজেন্ট আল-ইয়াকিন তথা এই আরসা ক্যাডাররা।
রোহিঙ্গা নেতাদের হত্যা করার মূল কারণ : ২০১৭-২০২১ প্রায় পাঁচ বছর হয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের প্রবাস জীবন। এদের মধ্যে একটি অংশ আশ্রয় ক্যাম্পে থাকতে চাইছে না। নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। শান্তিপ্রিয় কিছু রোহিঙ্গা নেতা প্রত্যাবাসনে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের বিষয় নিয়ে ক্যাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দিচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হলে প্রত্যাবাসন বিরোধী গ্রুপটির (আরসা) সুযোগ সুবিধা কমে যাবে। মিয়ানমার এবং কিছু এনজিও থেকে মাসিক মোটা অঙ্কের অর্থ পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। আশ্রয় শিবির থেকে মাসোয়ারা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে আরসা ক্যাডাররা। তাই প্রশাসনকে প্রত্যাবাসনে সহযোগিতাকারী রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে হত্যা করে চলেছে আরসা ক্যাডাররা।
আরসা ক্যাডারদের গুলিতে নিহত কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা : ইতোপূর্বে প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক ও জনমত গঠনে তৎপর বালুখালী ক্যাম্পের মাস্টার আরিফ উল্লাহ, হাফেজ শফিকুল ইসলাম, মুফতী আবদুল্লাহ, আরসার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সমালোচনা করে ফতোয়া জারির কারণে তাকে ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই এশার নামাজরত অবস্থায় জামতলী ক্যাম্প থেকে আরসা সন্ত্রাসীরা নিয়ে হত্যা করে লাশ ঘুম করে ফেলে। এ পর্যন্ত তার লাশও পাওয়া যায়নি।
মাওলানা মোঃ হাশিম একজন প্রখ্যাত আলেম ও বর্ষীয়ান শিক্ষক। আরসার সন্ত্রাসবাদী মতবাদের সমালোচনা করায় ২০১৮ সালের ৭ মে উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া থেকে তাকে অপহরণ করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। মাস্টার আরিফ উল্লাহ রোহিঙ্গাদের মাঝে হাতেগোনা কয়েকজন ইয়াঙ্গুন (রেঙ্গুন) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েটদের মধ্যে একজন। আরসার বহু বর্বরতার সাক্ষী ছিলেন এই আরিফ উল্লাহ। আরসার হয়ে কাজ না করায় ২০১৮ সালের ১৮ জুন বালুখালী থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার পথে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে আরসা সন্ত্রাসীরা। হাফেজ মাওলানা শফিকুল ইসলাম একটি মামালায় আরসার পক্ষে সাক্ষী দিতে অস্বীকার করায় ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এই হাফেজে কোরান শিক্ষককে ধরে নিয়ে হত্যা করে টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকির ভিতর লাশ লুকিয়ে রাখে আরসা সন্ত্রাসীরা। এক সপ্তাহ পর (২ মার্চ) নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সেখান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করা, প্রত্যাবাসনে জনমত গঠনে প্রশাসনকে সহযোগিতাকারী ও সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আরসার আনুগত্য স্বীকার না করা বিশিষ্ট রোহিঙ্গা নেতাদের এভাবে হত্যা করে চলেছে মিয়ানমারের সৃষ্টি সন্ত্রাসী বাহিনী আরসা।
শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এপিবিএন এসপি নাঈমুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় কিলিং স্কোয়াডের ৫ জন অস্ত্রধারী ছিল। যারা মাত্র ২ মিনিটেই মুহিবুল্লাহ হত্যার মিশন শেষ করে পালিয়ে যায়। এ হত্যাকান্ডে সর্বমোট ১৯ জন কাজ করেছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। একই সঙ্গে হত্যাকান্ড পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। মুহিবুল্লাহর হত্যার কিলিং স্কোয়াডের সদস্য আজিজুল হককে গ্রেফতারের পর শনিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি নাঈমুল হক। এসপি বলেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে নিহত রোহিঙ্গা শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডে জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এসপি নাঈমুল হক বলেন, আজিজুল হক ছাড়াও কুতুপালং ক্যাম্প-১ এর ডি ৮ ব্লকের আব্দুল মাবুদের ছেলে মোহাম্মদ রশিদ প্রকাশ মুরশিদ আমিন ও একই ক্যাম্পের বি ব্লকের ফজল হকের ছেলে মোহাম্মদ আনাছ ও নুর ইসলামের ছেলে নুর মোহাম্মদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুলের স্বীকারোক্তির কথা জানিয়ে এসপি নাঈমুল আরও বলেন, মুহিবুল্লার হত্যার দুদিন আগে কিলিং মিশনের জন্য মরগজ পাহাড়ে বৈঠক করে সন্ত্রাসী ক্যাডাররা। সেখান থেকে ৫ জনকে অস্ত্রসহ মোট ১৯ জনকে নির্দেশ দেয়া হয় মিশন শেষ করার জন্য। তিনি জানান, দিনে দিনে মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের নেতা হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। তাকে থামাতে হবে। সেটা যেকোন মূল্যে। তাই ২৯ সেপ্টেম্বর মুহিবুল্লাহকে বাসা থেকে অফিসে প্রত্যাবাসন বিষয়ে কথা আছে বলে ডেকে আনে গ্রেফতারকৃত মুরশিদ। তারপর বাকিদের সঙ্কেত দিয়ে দেয় সে। তিনি আরও জানান, প্রথমে একটি, তার পরেরজন দুটিসহ চারটি গুলি করে মুহিবুল্লাহকে। তারপর মুহিবুল্লার বাড়ির পেছন দিয়ে পালিয়ে যায় স্কোয়াডের ৫ জন। পরে সবাই সতর্ক হয়ে যায়। বিভিন্নজনের ওপর দোষ চাপাতে থাকে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-১ ইস্ট-ওয়েস্ট (ডি ব্লকে) নিজ অফিসে অবস্থান করছিলেন মুহিবুল্লাহ। এ সময় বন্দুকধারীরা গুলি করে তাকে হত্যা করে। এখন পর্যন্ত এ হত্যা মামলায় ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তার মধ্যে মোহাম্মদ ইলিয়াছ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। উল্লেখ্য, মুহিবুল্লার মূল উত্থান হয় ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা আগমনের বর্ষপূর্তিতে। ওই দিন তিনি লাখো রোহিঙ্গার সমাবেশ ঘটিয়ে আলোচনার তুঙ্গে এনেছিলেন নিজেকে। সেদিন তার নেতৃত্বে ছিল অন্তত ৫ লাখ রোহিঙ্গার মহাসমাবেশ। এরপর তিনি উখিয়া-টেকনাফের ৩২ রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়েছিলেন। রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে দক্ষ মুহিবুল্লাহ ধীরে ধীরে প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন।
নিহতের সংখ্যা বাড়েনি : শুক্রবারের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বাড়েনি। কিছু প্রচার মাধ্যমে নিহতের সংখ্যা ৭ বলে প্রচার করা হলেও সেটি ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন প্রশাসন। এদিকে, উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৩টি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) দায়িত্ব পালন করছে। প্রায় ২ হাজারের বেশি এপিবিএন সদস্যের পাশাপাশি ৩৯ আনসার ব্যাটালিয়নের ৩৭০জন আনসার সদস্য, ২ শতাধিক পুলিশ এবং ৩ শতাধিক বিজিবি দায়িত্ব পালন করে চলেছে। তারা ইতোপূর্বে দিনের বেলায় বিকেল ৪টা পর্যন্ত টহলদান করলেও বর্তমানে হত্যাকা-সহ নানা অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ও অপরাধীদের গ্রেফতারে রাতের বেলায়ও যৌথটহল চলছে।
মুহিবুল্লাহ কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছিল ৫ অস্ত্রধারী : গত ২৯ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা নেতা ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ হত্যার নেপথ্যের তথ্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। শনিবার এপিবিএন জানিয়েছে মুহিবুল্লাহকে হত্যা করতে কিলিং স্কোয়াডে ছিল ৫ সশস্ত্র সন্ত্রাসী। মাত্র ২ মিনিটে তারা মুহিবুল্লাহ কিলিং মিশন সম্পন্ন করে। তবে সব মিলিয়ে হত্যাকান্ডে জড়িয়ে ছিল ১৯ জন।
শনিবার দুপুরে উখিয়ায় মুহিবুল্লাহ কিলিং স্কোয়াডের অন্যতম সদস্য আজিজুল হককে গ্রেফতারের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি নাঈমুল হক।
তিনি জানান, আজিুজল হক ছাড়াও কুতুপালং ১-এর ডি ব্লকের আব্দুল মাবুদের ছেলে মোহাম্মদ রশিদ প্রকাশ মুরশিদ আমিন ও এই ক্যাম্পের বি ব্লকের ফজল হকের ছেলে মোহাম্মদ আনাছ ও নুর ইসলামের ছেলে নুর মোহাম্মদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এসপি আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুলের স্বীকারোক্তির বিষয়টি তুলে ধরা হয়। তিনি জানান, মুহিবুল্লার হত্যার দুদিন আগে কিলিং মিশনের জন্য মরগজ পাহাড়ে বৈঠক করে সন্ত্রাসী ক্যাডাররা। সেখান থেকে ৫ জনকে অস্ত্রসহ মোট ১৯ জনকে নির্দেশ দেয়া হয় মিশন শেষ করার জন্য। তিনি জানান, দিনে দিনে মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের নেতা হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। তাকে থামাতে হবে। সেটা যেকোন মূল্যে। তাই ২৯ সেপ্টেম্বর মুহিবুল্লাহকে বাসা থেকে অফিসে প্রত্যাবাসন বিষয়ে কথা আছে বলে ডেকে আনে গ্রেফতারকৃত মুরশিদ। তারপর বাকিদের সঙ্কেত দিয়ে দেয় সে। তিনি আরও জানান, প্রথমে একটি, তার পরেরজন দুটিসহ চারটি গুলি করা হয় মুহিবুল্লাহকে। তারপর মুহিবুল্লার বাড়ির পেছন দিয়ে পালিয়ে যায় স্কোয়াডের ৫ জন। পরে সবাই সতর্ক হয়ে যায়। বিভিন্নজনের ওপর দোষ চাপাতে থাকে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-১ ইস্ট-ওয়েস্ট (ডি ব্লকে) নিজ অফিসে অবস্থান করছিলেন মুহিবুল্লাহ। এ সময় বন্দুকধারীরা গুলি করে তাকে হত্যা করে। এখন পর্যন্ত এ হত্যা মামলায় ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তার মধ্যে মোহাম্মদ ইলিয়াছ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। উল্লেখ্য, মুহিবুল্লার মূল উত্থান হয় ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা আগমনের বর্ষপূর্তিতে। ওই দিন তিনি লাখো রোহিঙ্গার সমাবেশ ঘটিয়ে আলোচনার তুঙ্গে এনেছিলেন নিজেকে। সেদিন তার নেতৃত্বে ছিল অন্তত ৫ লাখ রোহিঙ্গার মহাসমাবেশ। এরপর তিনি উখিয়া-টেকনাফের ৩২ রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়েছিলেন। রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে দক্ষ মুহিবুল্লাহ ধীরে ধীরে প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন।