কথা রাখেনি যুদ্ধবাজ তালেবান ॥ ‘এখনও অনেকেই কাবুলে নিজেদের নিরাপদ বোধ করেন না’

3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
যুদ্ধবাজ তালেবানের আফগানিস্তান দখলের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। ১৫ আগষ্ট কট্টর ইসলামপন্থী সংগঠনটি কাবুল দখলের পর বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেসব প্রতিশ্রুতির ছিটেফোঁটাও রাখতে পারেননি তালেবান নেতারা। আফগানদের সুন্দর ভবিষ্যত, নারী অধিকার, শিক্ষা এসব বিষয়ে নেতারা বহু কথা বলেছিল। কিন্তু তালেবান সরকারে কোন নারী প্রতিনিধি নেই। নারীদের খেলাধুলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সহশিক্ষা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কাবুলের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে পর্দা টাঙিয়ে ক্লাস নেয়া হয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন নারীরা। কয়েকটি দেশ এর বিরুদ্ধে কথাও বলেছে। এই এক মাসে নগদ অর্থ সরবরাহ কমে গিয়ে দেশটির অর্থনীতির সংকট আরও গভীরতর হয়েছে। জীবনের নানা ক্ষেত্রে এর প্রভাব দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান সীমান্তের এক ব্যবসায়ী বলেন, এই অঞ্চলের কিছু ব্যবসায়ী তালেবানকে স্বাগত জানিয়েছিল। তাদের ধারণা ছিল-তালেবানী শাসনে ব্যবসা বাড়বে। তবে ফল হয়েছে উল্টো। আফগান ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বলছে, বাণিজ্য কমেছে ব্যাপকভাবে। কারণ আফগান আমদানিকারকরা অর্থ দিতে পারছেন না।
হাইরাতান বন্দরে তালেবানের হেড অব কাস্টমস মৌলভী সাইদ বলছেন, বাণিজ্য বাড়াতে তারা শুল্ক কমিয়ে দিচ্ছেন এবং সম্পদশালী ব্যবসায়ীরা দেশে ফিরুক, সেটিকে তারা উৎসাহিত করতে চান। তার মতে, এটি কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াবে। আর পরবর্তীতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। আফগানিস্তানের চতুর্থ বৃহত্তম শহর মাজার-ই-শরীফের মানুষের জীবনযাত্রা আরও নিম্নমুখী। তাদের অনেকই অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভুগছেন। এক নারী বলেন, তালেবানী আমলের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সমস্যা হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালী তালেবান নেতা হাজী হেকমতের বলেন, আপনারা হয়ত নিরাপত্তা দিচ্ছেন কিন্তু সমালোচকরা বলছে আপনারা এখানকার সংস্কৃতিকে হত্যা করছেন। তিনি বলেন, মোটেও তা নয়। গত বিশ বছরে এখানে পশ্চিমা প্রভাব ছিল। চল্লিশ বছর আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ এক বিদেশী থেকে আরেক বিদেশীর কাছে গেছে। আমরা আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে হারিয়েছি। এখন আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনছি। তার মতে, ইসলামে নারী-পুরুষে মেলামেশা নিষিদ্ধ।
আমি ভাল আছি- বরাদর : তালেবানের ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্বের খবর প্রকাশ হয়েছে। খবর বেরিয়েছিল যে, দলেরই অন্য এক প্রতিপক্ষের হাতে আহত হয়েছিলেন তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও অন্যতম শীর্ষ নেতা মোল্লা আবদুল গনি বরাদর। তবে সেসব খবর উড়িয়ে দিয়ে একটি ভিডিও সাক্ষাতকারে তিনি ভাল ও সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন। নয়া সরকারে উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া বরাদর আহত হওয়ার কথাও অস্বীকার করেছেন। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ দাবি করেন। কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থিত তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে টুইটারে প্রকাশ করা একটি ভিডিও সাক্ষাতকারে বরাদর বলেন, না, এটি (দলীয় কোন্দলে আহত হওয়ার খবর) সত্য নয়। আমি ভাল আছি, সুস্থ আছি। তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমগুলো তালেবানের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা প্রচার করছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন কিছুই হয়নি। এটি সত্য নয়।