১৩ সেপ্টেম্বর মেডিক্যালের ক্লাস শুরু

2

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা সংক্রমণ কমে আসায় অবশেষে খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বশরীরে ক্লাসে উপস্থিতির মাধ্যমেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করবে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও খুলে দেয়া হবে। আগামী রবিবারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকের পরই অন্যান্য প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সরকারী ঘোষণা আসবে।
শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকেই দেশে করোনা সংক্রমণের হার বিবেচনা এবং মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পর করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে সেটির ভিত্তিতে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে নমুনা সংগ্রহের বিপরীতে করোনা সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের নিচে নামলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, মেডিক্যাল সংশ্লিষ্ট সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মোটামুটি এ মাসের ১৩ তারিখ থেকে স্বশরীরে ক্লাস নেয়া হবে। দু-একদিন এদিক-ওদিক হতে পারে। তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই আমাদের যে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী-বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ, নার্সিংসহ কয়েক শ’ প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে আনুমানিক দেড় লাখের মতো শিক্ষার্থী। তাদের লেখাপড়া ফিজিক্যালি বন্ধ ছিল দুই বছর, তারা অনলাইনে ক্লাস করছে।
জাহিদ মালেক বলেন, গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়েছে। লকডাউন দিতে হয়েছে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য। সেই সঙ্গে আমাদের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হয়েছে। মেডিক্যাল শিক্ষা বিভিন্ন ক্লাস বন্ধ রাখতে হয়েছে। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম বজায় রাখতে চেষ্টা করেছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশে কোভিডের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে এসেছে। আমাদের দেশেও বিভিন্ন কার্যক্রম নিতে হয়েছে। সবমিলিয়ে ৫০ হাজারের অধিক লোক নিয়োগ দিতে হয়েছে। চার হাজার ডাক্তার, আট হাজার নার্স নিয়োগ দিতে হয়েছে। এ কার্যক্রমগুলো চলমান আছে। টিকা কার্যক্রমও পুরোদমে চালু আছে।
শিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেড় লাখ শিক্ষার্থী মেডিক্যাল-নার্সিংয়ে আছে। তাদের রোগীর কাছে যেতে হবে। নইলে শিক্ষা অপূর্ণ রয়ে যাবে। সে পরিপূর্ণ শিক্ষা পাবে না। আমাদের টেকনিক্যাল কমিটি, ভিসি মহোদয়রা, মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডিজিরা, সকলের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের ফিজিক্যালি ক্লাস শুরু করা দরকার। না হলে অনেক বড় গ্যাপ পড়ে যাবে। আমরা ইন্টার্ন ডাক্তার পাব না। সে সকল চিন্তা করে আমরা প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম বর্ষের ক্লাস সরাসরি নিতে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়েছি। তাদের সুরক্ষিত করার চেষ্টা করেছি। ক্লাসে গেলে মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। পর্যায়ক্রমে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা পর্যায়ক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলব। কোন সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করব। রোগীর কাছে শিক্ষার্থীদের যেতে হবে। যথাযথ নিরাপত্তার সঙ্গে তাদের রোগীর কাছে নিতে হবে। সেখান থেকে তারা চিকিৎসা দেয়া শিখবে। সে জন্য নন-কোভিড রোগীদের কাছে নেব। পর্যায়ক্রমে কোভিড-১৯ রোগীদের কাছেও নেব।
গত কয়েকদিন ধরে দেশে নমুনার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ধারাবাহিকভাবে কমছে। গত ২৫ আগষ্ট দেশে নমুনা সংগ্রহের বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২৬ তারিখ এই করোনা শনাক্তের হার দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২৭ আগষ্ট শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২৮ আগষ্ট শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ২৯ আগষ্ট ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, ৩০ আগষ্ট শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ০৭ শতাংশ ও ৩১ আগষ্ট করোনা শনাক্তের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ। বুধবার করোনা সংক্রমণের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১১ শতাংশে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে থেকে খোলা হবে সেটি নিয়ে আগামী রবিবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেই বৈঠকে স্কুল-কলেজ খোলার পর কী কী করণীয় হবে সেসব বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে গেছে, সেই ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে নেয়া যায় সে বিষয়ে আমরা কিছু পরিকল্পনা তৈরি করেছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোন দেশে নমুনার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মনে করা হয়ে থাকে। কিন্তু দেশে করোনায় সংক্রমণের হার এখনও ১১ শতাংশের ওপরে রয়েছে। তবে বুধবার এই হার ১০ শতাংশে নেমেছে।