মোতাওয়াল্লীকে অপহরণ চেষ্টায় দুই পুলিশ সদস্য জড়িত! আদালতে পিবিআই’র অনুসন্ধানী তদন্ত প্রতিবেদন

8

জাহাঙ্গীর আলম খায়ের বিশ্বনাথ থেকে :
বিশ^নাথ সীমান্তের পাশর্^বর্তি দক্ষিণ সুরমার বেতসুন্দি (ফকিরেরগাঁও) জামে-মসজিদের মোতাওয়াল্লী ষাটোর্ধ নিজাম উদ্দিনকে ডিবি পরিচয়ে অপহরণের চেষ্টা করে সঙ্গবদ্ধ দুর্বৃত্তরা। ঘটনার ছয়মাস পর পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেল, ওই অপহরণ চেষ্টার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যও জড়িত ছিলেন! দুই পুলিশ সদস্যসহ ৪জনকে অভিযুক্ত করে গত ১১ আগষ্ট সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী ৩য় আদালতে চূড়ান্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দাখিল করেন সিলেট পিবিআই’র এসআই শাহ ফজলে আজিম পাটোয়ারী। তার তদন্ত প্রতিদেবন মতে, ঘটনার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন মোতাওয়াল্লীর প্রতিপক্ষ তার পাশের বাড়ির বাসিন্দা আব্দুস শহীদ (৩৫)। আগামি ৪ সেপ্টেম্বর ওই মামলার শুনানীর দিন ধার্য্য করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোতাওয়াল্লী ও তার প্রতিপক্ষ আব্দুস শহীদের মধ্যে গ্রামের পাশর্^বর্তি (ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে) শাহ আব্দুর রহিম (র:) মাজার পরিচালনা নিয়ে দীর্ঘ দিনের বিরোধ রয়েছে। আর মোতাওয়াল্লী ওই মাজার পরিচালনা কমিটিরও সাবেক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষে মামলাও রয়েছে।
চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিবি পরিচয়ে মোতাওয়াল্লী নিজাম উদ্দিনকে বাড়ি থেকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়। ঘটনার দিন রাতে হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে ঘর থেকে বের করে অপহরণকারীদের সঙ্গে থাকা নোহা (সিলেট-ছ-১১-০৫৩৫) গাড়িতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনার ৫ দিন পর (গত ১ মার্চ) বাড়ির সিসি টিভির ফুটেজসহ সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী ৩য় আদালতে অপহরণ চেষ্টা মামলা দায়ের করেন, (সিআর মামলা নং ৪৪/২১ইং)।
মামলায় অভিযুক্ত করেন পাশর্^বর্তি মোগলাবাজার থানার গঙ্গারচর (আলমপুর) গ্রামের দিলোয়ার হোসেনের ছেলে কথিত সাংবাদিক নিজামুল হক লিটনকে (৩৫)। ওইদিন শুনানী শেষে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিলেট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই’কে।
তবে, মামলায় কেবল লিটনকে অভিযুক্ত করা হলেও পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহ ফজলে আজিম পাটোয়ারীর দীর্ঘ তদন্তে বেরিয়ে আসে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন সিলেটের দুই পুলিশ সদস্যও। আর এ ঘটনার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন মোতাওয়াল্লীর প্রতিপক্ষ আব্দুস শহীদ। ওই ৪জনকে অভিযুক্ত করে গত ১১ আগষ্ট তিনি সিলেট আদালতে চূড়ান্ত অনুসন্ধানী তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন, (প্রতিবেদন স্মারক নং-পিবিআই/সিলেট জেলা/২৩১৩)।
অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্যের একজন হলেন কনস্টেবল (ভিপি ৮৪০৩০৯২৯৫৭) শরীফ রানা (৩৭)। তার বিরুদ্ধে ছিনতাই মামলা থাকায় ২০১৫ সালে সিলেট কোতোয়ালী থানা থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়, (মামলা মামলা নং-১১)। ব্রাহ্মণ বাড়িয়ার নবীনগর থানার ব্রহ্মণহাতা গ্রামের হেফজুল বারীর ছেলে শরীফ বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
আর অভিযুক্ত অপর পুলিশ কনস্টেবল (ভিপি নং ৯০১১১২৬৩৫৬) হলেন সিরাজুল ইসলাম (৩০)। ঘটনার সময় তিনি সিলেট জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে বানিয়াচং থানায় কর্মরত সিরাজুল সুনামগঞ্জ জেলার বিশ^ম্ভরপুর থানার কাছিরগাতি গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিলেট পিবিআই’র এসআই শাহ্ ফজলে আজিম পাটোয়ারী এ প্রতিবেদককে বলেন, সিসি টিভির ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করি। তদন্তকালীন সময়ে এজাহার নামীয় একমাত্র আসামি লিটন মারা যাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেই। আর অনুসন্ধান শেষে বাকি তিনজনকে অভিযুক্ত করে প্রতিদবেদন দাখিল করি।