গার্মেন্টসে অর্ডার হারানোর শঙ্কা

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনে চাপের মুখে রয়েছে শতভাগ রফতানিমুখী পোশাক (গার্মেন্টস) শিল্প। বর্তমানে ১৪ দিনের লকডাউন চলমান, যা শুরু হয়েছে গত ২৩ জুলাই থেকে। এরপর লকডাউন অব্যাহত রাখা হবে কি হবে না এ নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছে নানা মহল। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে সরকারী-বেসরকারী সকল পর্যায়ে। পোশাক শিল্পের মালিকরা আশা করছেন আগামী ১ আগস্ট থেকে এ শিল্পকে এবং এরসঙ্গে জড়িত ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিঙ্কেজের কারখানাগুলো লকডাউনের আওতামুক্ত করার সম্ভাবনাই বেশি। এ আশায় রয়েছে বিজিএমইএ (বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন) ও বিইপিজেডআইএ (বাংলাদেশ ইপিজেড ইনভেস্টরস এ্যাসোসিয়েশন)। এসব সংগঠনের পক্ষ থেকে নীতিনির্ধারক মহলে তৎপরতাও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
চলমান লকডাউনে প্রধানত দুটি শঙ্কার মধ্যে রয়েছে পোশাক শিল্প। এরমধ্যে প্রথমটি হলো উৎপাদিত পণ্য যথাসময়ে জাহাজীকরণে বিলম্ব এবং দ্বিতীয়টি বিদেশী ক্রেতাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ বা অর্ডার হারানোর ভয়। চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে পোশাক উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও আশ্চর্যের কিছুই থাকবে না। লক্ষণীয় বিষয় যে, গত অর্থবছরে করোনায় বৈশ্বিক মন্দাবস্থায়ও বাংলাদেশের পোশাক রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর অনেক অর্ডার শিফট হয়েছে এদিকে। কিন্তু এবারের বিধিনিষেধে পোশাক শিল্পও বন্ধ থাকায় সেই ক্রয়াদেশ ফের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে, এমনই আশঙ্কা শিল্প মালিকদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনার প্রথম ঢেউ চলাকালে পোশাক শিল্প কারখানা খোলা রাখা হয়েছিল রফতানি খাত থেকে বৃহৎ অংশের আয়ের বিষয়টি আমলে নিয়ে। ফলে ওই সময়ে দেশের সকল পোশাক শিল্প কারখানা চালু ছিল। রাতদিন শিফটিংয়ের মাধ্যমে প্রস্তুত হয়েছে বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদার পোশাক। ফলে গ্রীষ্মকালীন (স্প্রিং সামার) পোশাকের রফতানি সম্পন্ন করা গেছে। বায়ারদের কোন ধরনের অর্ডার বাতিল হয়নি। কিন্তু এখন চলমান কড়া লকডাউনে পোশাক শিল্প কারখানাও বন্ধ রয়েছে। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে শীতকালীন (ফল উইন্টার) পোশাক রফতানি কার্যক্রম। দ্বিতীয় লকডাউন শুরু হওয়ার আগে বিভিন্ন কারখানায় শীতকালীন পোশাক তৈরির কার্যক্রম অব্যাহত ছিল এবং কিছু শিল্প ছিল প্রস্তুতিতে। এ অবস্থায় গত ২৩ জুলাই থেকে ১৪ দিনের লকডাউনে রয়েছে বেশিরভাগ সেক্টরের ন্যায় এই শিল্পখাতও। ফলশ্রুতিতে এটা নিশ্চিত এ খাতের রফতানি আয় পিছিয়ে যাবে। এরপরও ১ আগস্ট থেকে এই শিল্পকে লকডাউনের আওতামুক্ত করার উদাত্ত আহ্বান রয়েছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিইপিজেডআইএ-এর পক্ষ থেকে। বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন মহলের সূত্র থেকে মত ব্যক্ত করা হয়েছে লকডাউন অব্যাহত রাখা বা নতুন করে লকডাউন দেয়ার চেয়ে জনগণকে টিকাকরণের (ভ্যাকসিনেশন) আওতায় আনায় সুফল বয়ে আনবে। এক্ষেত্রে সরকার পক্ষে ইতোমধ্যে গার্মেন্টস কর্মীদের মাঝে টিকাকরণ কার্যক্রম চালু হয়েছে। এতে আরও গতিশীলতা আসলে পোশাক শিল্প খাতে রফতানি আয় যে কিছু পরিমাণ চাপে পড়েছে তা অতিক্রম করা সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পোশাক শিল্প সরাসরি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিঙ্কেজের বহু শিল্প কারখানা। যেসব কারখানা থেকে পোশাক তৈরি সম্পন্ন করতে বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী যোগান হয়ে যায়। লকডাউনে এসব শিল্প কারখানাও বন্ধ রয়েছে। দেশে রফতানি আয়ে বড় ধরনের ভূমিকা রাখার নেপথ্যে পোশাক শিল্প। অন্যতম আরেকটি আয় আসে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থে (রেমিটেন্স)। দেশে আমদানি খাতে যে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা চলে যায় তা পূরণ করার ক্ষেত্রে পোশাক শিল্পের আয় ও রেমিটেন্সের অর্থ বড় ধরনের সহায়ক ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি উদ্বৃত্তও থাকে।
সূত্রমতে, করোনার প্রথম ঢেউ চলাকালে যেভাবে পোশাক শিল্প খাতকে উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল। অনুরূপভাবে এবার তা না হলেও আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত তা বহাল রেখে ১ আগস্ট থেকে উন্মুক্ত করা আবশ্যক। অন্যথায় নিঃসন্দেহে রফতানি আয় যেমন পিছিয়ে যাবে, তেমনি বাংলাদেশের সঙ্গে এ খাতে যারা প্রতিযোগিতায় রয়েছে তারা এগিয়ে যাবে। বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের অনেকে সহমত পোষণ করেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। এখন শুধু সিদ্ধান্তের অপেক্ষা। এছাড়া বর্তমান জুলাই মাস শেষের পথে। চলতি মাসের বেতন আগামী ১ থেকে ১০ আগস্টের মধ্যে পোশাক শিল্পের মালিকরা প্রদান করে থাকেন। এ শিল্প ঘোষণা অনুযায়ী ৫ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বিভিন্ন শিল্পে বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যার উদ্ভব হওয়া সমস্যা বেশি। সঙ্গতকারণে শতভাগ রফতানিমুখী এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকাকরণের আওতায় এনে যাবতীয় কর্মকা- লকডাউন মুক্ত করার প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
বিইপিজেডআইএ-এর চেয়ারম্যান এম নাসির উদ্দিন আবারও জানিয়েছেন, তিনি লিখিতভাবে বিষয়টি বেপজাকে (বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি) অবহিত করেছেন। তার সংগঠনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত আহ্বান সরকারের নীতি নির্ধারক মহলকেও জানানো হয়েছে। তিনি জানান, কোভিড-১৯ এর তৃতীয় ঢেউ চলছে দেশে। এরপরও গার্মেন্টস শিল্প খাতে পণ্য রফতানির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। করোনার কারণে প্রতিটি গার্মেন্টস শিল্পে সম্পূর্ণভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ফলে গার্মেন্টস শিল্পে করোনা সংক্রমণের হার কম। আসন্ন লকডাউন গার্মেন্টস শিল্পের ওপর আরোপিত হলে বিদেশী আমদানিকারক বা ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা কখনও সম্ভব হবে না। তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন বছরে প্রায় ৬ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে থাকে। মাসে যার পরিমাণ প্রায় ৫৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২২ মিলিয়ন ডলার, যা বিদেশী অন্যান্য প্রতিযোগী দেশসমূহের ক্ষেত্রে উচ্চতর পর্যায়ে রয়েছে।