অতিমারীকালীন নিজের স্বার্থে মেনে চলুন স্বাস্থ্যবিধি

8

ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী :

বাংলাদেশ বৈশ্বিক মন্দা ও অতিমারীর কারণে সমস্যা আক্রান্ত হলেও অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হচ্ছে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার সুচিন্তিত নেতৃত্ব গুণ এবং বিচক্ষণতার কারণে তিনি মানব কল্যাণে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। এক্ষণে দেশের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত করোনায় আক্রান্ত। তার পরও সরকার প্রয়াস গ্রহণ করেছিল যেন আর্থিক অসুবিধা ছাড়াই সমস্ত মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সেবাসমূহে যাতে অন্তর্ভুক্তি ঘটে। এদেশ একটি জনবহুল দেশ। জনসংখ্যাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক সৃষ্টি করেছেন। প্রথমবার করোনা যখন আঘাত হানল, দ্বিতীয়বারের ঢেউ কিন্তু আরও শক্তিশালী ছিল। সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা সংগ্রহের প্রয়াস নিয়েছে। আসলে করোনা যে এভাবে একের পর এক আঘাত হানবে, ক্রমশ শক্তিশালী হবে, তা কিন্তু আগে থেকে অনুধাবন করা যায়নি। এ ছাড়া হাসপাতালসমূহের সীমাবদ্ধতা প্রকট হয়ে উন্মুক্ত হতে থাকে। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে দেখা যাচ্ছে যে, হাসপাতালে ডাক্তার শয্যাপ্রতি ১০০০ জনে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ০.৮, ভারতের ক্ষেত্রে ০.৫, শ্রীলঙ্কায় ৪.২, থাইল্যান্ডে ২.১, মিয়ানামারে ১.০, নেপালে ০.৩ এবং ভুটানে ১.৭। বস্তুত ০.৫ থেকে ০.৮ এর মাধ্যমে বোঝায় যে, সে দেশের মাঝারিমানের মানব উন্নয়ন ঘটেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার তৃতীয় লক্ষ্যের অষ্টম অভীষ্ট (টার্গেট) হচ্ছে-আর্থিক ঝুঁকির সুরক্ষা, মানের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোতে অন্তর্ভুক্তি, নিরাপদ ও কার্যকর মান, সকলের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের ওষুধ ও টিকার ব্যবস্থাকরণ করা। করোনা শুরুর আগে এবং বিদ্যমান করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়েও সরকার নানাভাবে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে প্রয়াস নিয়েছে। যদিও এ ধরনের দৈবদুর্বিপাকের সঙ্গে আমরা আগে থেকে কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। জাতিগতভাবে বাঙালী যেমন শক্তিধর তেমনি স্বাধীনচেতা। এ জন্য কিন্তু অতি স্বাধীনচেতার কারণে বার বার সরকার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করলেও অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানেননি। এমনকি ন্যূনতম মাস্ক ব্যবহার করা, হাত ধৌত করা এবং দূরত্ব বজায় রাখার মতো সামাজিক কর্মসূচীতে জনসম্পৃক্ত করা যায়নি। এটি আসলে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিব নির্বিশেষে অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োজন। এটি কেবল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্ব নয়, বরং ধর্মীয় উপাসনালয়সমূহ, পাড়া-মহল্লার মুরব্বিশ্রেণী ও নির্বাচিত গণতান্ত্রিক প্রতিনিধি ও শিক্ষক সমাজকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
অবশ্য ইদানীং শিক্ষকদের মধ্যে এমন একটি ঘরানা তৈরি হয়েছে, যারা বিএনপি-জামায়াত সমর্থকই কেবল নন। বরং ধর্মীয় মতবাদেও সম্পৃক্ত করছেন। একই অবস্থা চিকিৎসকদের মধ্যেও। তবে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর জঙ্গীবাদকে জিরো টলারেন্স দেখিয়েছেন। শিক্ষকদের জনসম্পৃক্ত কাজে সব সময় আগে ব্যবহার করা হলেও কোন এক কারণে হয়ত আগের মতো শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করা যায় না। ফলে শিক্ষকদের সামাজিক মান-মর্যাদাও কিন্তু ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। যখন সমাজে নিজের অস্তিত্ব অসাড় হয়ে যায়, মানি সেন্ট্রিক সোসাইটিতে অর্থের বলে বলীয়ান হওয়া যায়, তখন পা-িত্য ও জ্ঞানগরিমাকে চতুরতার সঙ্গে অসাড় করা যায়। সমাজের যে কাঠামো তাতে গণতান্ত্রিক সুস্থ ব্যবস্থা বিদ্যমান আছে এটি যেমন সত্য ও কাউকে নিচে ফেলে উপরে কেউ উঠতে পারে না সেটাও সত্য। বছরখানেক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্বাস্থ্য বীমার ওপর জোর দিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে স্বাস্থ্য বীমার তেমন প্রসার ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে ঘটতে দেখা গেল না। এটি অবশ্যই দুঃখজনক। ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা বাধ্যতামূলক করা অবশ্যই প্রয়োজন। আজকের যে ছাত্রছাত্রী তারাই আগামীদিনের ভবিষ্যত নেতৃত্ব দেবেন। অতিমারীর পূর্ব থেকেই এদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রোগের দুই/তিন গুণ বোঝা, স্বল্প পরিষেবার ব্যবস্থা, একশ্রেণীর কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর দুর্নীতির প্রতি মাত্রাতিরিক্তভাবে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা, রোগীর প্রতি সেবার বদলে অচিকিৎসাসুলভ আচরণ, বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের একশ্রেণীর অর্থগৃধ্রু ব্যবস্থা, কার্যকর আর্থিক ঝুঁকি সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। আসলে স্বাস্থ্যসেবা খাতকে চারটি ভাগে বিভক্ত করা যায়- সরকারী প্রতিষ্ঠান, মুনাফা গ্রহণকারী বেসরকারী স্বাস্থ্য খাতসমূহ ও বেসরকারী সংস্থাসমূহ এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাসমূহ। এক্ষণে এ চারটি ভাগকে আমরা যদি পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব যে, নিম্নস্তর ও মধ্যম স্তরের জন্য উচ্চস্তরে যেতে আমাদের মতো আমজনতাকে সেবা পেতে সরকারী সংস্থায় নানা বিরূপতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এটি দুর্ভাগ্যজনক। আবার মুনাফার ক্ষেত্রে মোটামুটিভাবে অধিকাংশ বেসরকারী স্বাস্থ্য খাতের মালিকরা যতটুকু বোঝেন ততটুকু কিন্তু রোগীর সেবার ক্ষেত্রে বোঝেন না। অন্যদিকে যারা বলেন যে, মুনাফা নেন না, তেমনি বেসরকারী সংস্থাসমূহ, বিশেষত এনজিওগুলো বাস্তবে কেমন ধরনের সেবা প্রদান করে তা খতিয়ে দেখা উচিত। কেননা করোনাকালে স্যাটেলাইট ক্লিনিক, মোবাইল স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহ এদেশে কাজ কেন করল না, তা বোধগম্য নয়। যদিও কোভিডকালীন গ্রামীণ মানুষ যথাযথভাবে স্বাস্থ্যসেবা মোবাইল স্বাস্থ্য খাতের মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাননি। তার পরও একটি সময় পর্যন্ত এটি ইতিবাচক ছিল। এদেশের গ্রাম পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারী বিভিন্ন চ্যানেলসমূহের মাধ্যমে পরিষেবাসমূহ প্রদান করা হয়ে থাকে। মাঠের কর্মীরা যারা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে করোনার পূর্বকালে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করত, উঠোন বৈঠকের আয়োজন করে মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে জ্ঞান বিতরণ করত, স্যাটেলাইট অঞ্চলসমূহ, সম্প্রদায়ের ক্লিনিকসমূহ, ইউনিয়নে সরবরাহের ব্যবস্থা করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রসমূহ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্য ভৌত অবকাঠামো এবং পর্যাপ্ত নার্স-চিকিৎসকের অভাব অনুভূত হলেও মোটামুটি চলে যেত। অথচ সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসক-নার্স নিয়োগ করলেও অধিকাংশই কিন্তু চেষ্টা-তদ্বিরে ব্যস্ত থাকেন শহরাঞ্চলে বিশেষত রাজধানী অথবা বিভাগীয় শহরে নিজেদের পদায়নের ব্যবস্থা করতে। সরকারের যে বরাদ্দ তাও অনেক ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ যেখানেই পদায়ন হোক, সেখানেই তাকে থাকতে হবে। এ নীতি বহুবার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। এতে সরকারের তথা জনস্বাস্থ্য সেবা খাতের ক্ষতিও হয়েছে। যদি পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স চিকিৎসা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে না থাকে। তখন যেমন রোগীর সেবা হয় না তেমনি ওই প্রতিষ্ঠানটিও গড়ে ওঠে না। আমাদের মূল জাতীয় সমস্যা হচ্ছে আমরা বড় বেশি পার্টটাইম হিসেবে কাজ করতে যাই। আবার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশী- বিদেশী সংস্থা নানা ধরনের ফন্দি-ফিকির বিক্রি করে থাকেন। ফলে সরকারী হাসপাতালকে এনজিওদের কাছে দেয়ার প্রস্তাবও সুবিধাভোগী শ্রেণী করে থাকেন। অথচ যারা পরনির্ভর, নিজেদের গায়ে এখনও ঠিকমতো দাঁড়ায়নি তাদের পক্ষে কি গ্রামীণ পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা খাতের সুযোগ-সুবিধা দেয়া সম্ভব। আসলে দেশের যে অগ্রযাত্রা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে হচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মেলাতে হলে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দকৃত অর্থকে যথাবিহীত নিয়ম মেনে দুর্নীতিমুক্তভাবে ব্যবহার করতে হবে। চলতি অর্থবছরেও সরকার ১০০ কোটি টাকা স্বাস্থ্য খাতে গবেষণার জন্য রেখেছে। এটি প্রয়োজনে আরও বাড়ানো যেতে পারে। তবে শুধু এলোপ্যাথি চিকিৎসা নয়, বরং হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদ, ভেষজ, ইউনানী চিকিৎসার মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় গবেষণার অর্থ বরাদ্দ করা দরকার। শেষোক্ত খাতসমূহের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যথার্থ গবেষণা ও উন্নয়নের ব্যবস্থা নেই। দেশের অনেকেই হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদ, ভেষজ, ইউনানী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন এবং আরও অনেকে নিতে প্রস্তুত। কিন্তু এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের সংখ্যা খুব কম। পাশাপাশি এ ধরনের ওষুধ নিলে পরে কি ধরনের সমস্যা হবে সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানও নেই। আবার বায়োকেমিক চিকিৎসাটিও বেশ কার্যকর। কিন্তু দেশে যদি অন্যান্য চিকিৎসাসমূহের মান উন্নয়নের জন্য অতিমারীর সময়ে কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ফার্মেসি বিভাগের ল্যাব ব্যবহারের ব্যবস্থা করা যেত এবং গবেষণার মান সফল হলে তা জানানোর ব্যবস্থা থাকত, তবে তা জনস্বাস্থ্যের উন্নতির ক্ষেত্রে বহুমাত্রিকতা প্রদর্শন করত। দেশে বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি হলেও উপরের দিকে কেন যেন ঠিকমতো কাজ হচ্ছে না। স্বাস্থ্যসেবা এখন আর জনকল্যাণ না হয়ে টাকা দিয়ে কিনে নেয়া হচ্ছে। হতে পারে জনবহুল দেশ স্বল্পসংখ্যক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং দ্রুত বড়লোক হওয়ার পন্থায় আছেন কোন কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। সরকারী চাকরির পাশাপাশি চারটি পর্যন্ত বিভিন্ন চেম্বার, বেসরকারী হাসপাতাল, নার্সিং হোমে কাজ করে থাকেন। আসলে দোষে-গুণে মানুষ। যারা করোনাকালে ভাল কাজ করছেন, তাদের অবশ্যই স্বীকৃতি দেয়া উচিত। স্বীকৃতি পেলে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে ইচ্ছুক হবেন তারা। আর যারা নীতি জ্ঞানবিহীন কর্মকা- করছেন, উপযুক্ত প্রমাণসহ তাদের মুখোশ জনসমক্ষে উন্মোচন করা উচিত। অতিমারীর এ সময়ে অবশ্যই আঞ্চলিক সেবা গ্রহণ করা যুক্তিযুক্ত। বিমসটেকের আওতায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। বিমসটেকের দেশগুলোর উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনার জন্য সাতটি চেন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্ব-স্ব দেশে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নীতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ ও একমত হতে পারেন। এ হাসপাতালসমূহ জেসিআই কর্তৃক অনুমোদিত হতে পারে। আবার স্বাস্থ্যসেবা খাতের গবেষণার জন্য পরীক্ষাগার ও ফার্মাসিউটিক্যালস সমন্বিত পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, যাতে প্রতিটি দেশে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বেঞ্চ মার্কিং করে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করা যায়। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্যবিদরা কাজের জন্য নিজেরটা না বুঝে জীবন ও জীবিকার মেলবন্ধনে আমজনতার যে যুদ্ধ তাতে শরিক হোন। এটি অবশ্যই অনস্বীকার্য শিশু মৃত্যুর হার এদেশে কমেছে, মাতৃমৃত্যুর হারও কমেছে, এমনকি জীবনচক্র বেড়ে ৪৪ বছর থেকে গড়ে ৭২ বছর হয়েছে। আসলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা খাতটি সরকার অত্যন্ত সুন্দরভাবে গুছিয়ে এনেছে। কিন্তু করোনকালে দেখা গেল, স্বাস্থ্যবিধি বিশেষ করে মাস্ক পরিধানে প্রচ- অনীহা রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে মোট দেশজ উৎপাদনের অংশ হিসেবে ন্যূনপক্ষে ২% বিনিয়োগ করা উচিত এবং এটি সক্ষমতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা গেলে পরবর্তী অর্থবছরে ক্রমান্বয়ে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো যেতে পারে। আসলে স্বাস্থ্য যেমন সকল সুখের মূল, তেমনি স্বাস্থ্য পরিচর্যার জন্য যে ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি রয়েছে, সেগুলোও দূরীভূত করা বাঞ্ছনীয়। আসলে স্বাস্থ্য খাতের ক্রমিক অগ্রগতি দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছিল, কিন্তু সেটি হচ্ছে দেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা খাত। এ খাতের ক্রমিক উন্নতিতে দেশের বিদ্যমান ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোও ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। বিদেশে ওষুধ রফতানি করে রফতানি আয়ও অতিমারীর সময়ে বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে। আসলে এদেশে সুন্দর একটি উন্নয়ন অবকাঠামো সরকার গ্রহণ করেছে। এ খাতে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য দুটোই অন্তর্ভুক্ত। আমরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য খাতটি শক্তিমত্তার সঙ্গে গঠন করতে পেরেছি। কিন্তু যেটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষত বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও উন্নতমানের নার্স দ্বারা পরিচালিত হয়, সেখানে সংখ্যাল্পতা, ভৌত কাঠামো, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে অদক্ষতার জন্য সমস্যা রয়ে গেছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এর মধ্যে বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে অতিমারী করোনা। আসলে রোগীকে কেন্দ্র করেই কিন্তু স্বাস্থ্যসেবার মূল কাঠামো। আর রোগী তখনই সুষ্ঠু সেবা পায় যখন দুর্নীতিমুক্ত, কলুষমুক্ত পরিবেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা কাজ করবেন। ব্যবস্থাপনায় বলে থাকে কোন প্রতিষ্ঠানে ঢুকলে তার দ্বার রক্ষী থেকে আরম্ভ করে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সর্বস্তরে সেবা যথাযথভাবে দিলে মানুষ সন্তুষ্ট হন। এখন সেবা প্রদানকারী কিসে খুশি থাকবেন সেটি তো রোগীর জানার কথা নয়। বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের ওপর গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছি যে, মালিক পক্ষ আবার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের অনেক ক্ষেত্রেই অসহনীয় পর্যায়ে রোগীর ওপর বিভিন্ন ধরনের চার্জ বসাতে বলেন। ফলে রোগী আর তার স্বজনরা মুক্তবাজার অর্থনীতির যাঁতাকালে পিষ্ট হয়ে পড়েন। তার পরও অতিমারীর সময়ে প্রথমদিকে এক অজানা শঙ্কা সবার মধ্যে কাজ করলেও আস্তে আস্তে কিছুটা উন্নততর সেবা টাকার বিনিময়ে দিচ্ছে, তবে কেউ কেউ মাত্রাতিরিক্ত চার্জ করা, লোক ঠকানোও কোন কোন ক্ষেত্রে বন্ধ রাখেনি। অবশ্য সরকারের নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে। তার পরও বলব করোনাভাইরাস আক্রমণের প্রথম থেকে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন, সেটি প্রতিপালন করতে আমাদের আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল। ঢাকার কাছেই আশুলিয়াতে ঈদের আগের দিন গেলাম- কারও মুখে কোন মাস্ক নেই, এমনকি সামাজিক রীতিনীতি মানার কোন বালাই নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলোতে অধিক হারে বিজ্ঞাপন দেয়া বাঞ্ছনীয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা খাতের যে প্রশংসনীয় ভিত দেশে গড়ে উঠেছে তাকে কেন্দ্র করে আমাদের নিজেদের কারণে, পরিবারের কারণে, সমাজ ও রাষ্ট্রের কারণে আরও বেশি মাত্রায় সচেতন হতে হবে। এর মধ্যে সরকার বেশ দক্ষতার সঙ্গে বিভিন্ন দেশ ও সোর্সের মাধ্যমে টিকা আনছে, টিকা দেয়াও হচ্ছে। তবে টিকা দিলেই যে অতিমারীতে মানুষ আক্রান্ত হবে না, এর নিশ্চয়তা কোথায়।
লেখক : ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট ও আইটি এক্সপার্ট।