লকডাউনের অজুহাতে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম, নেই বাজার মনিটরিং

4

স্টাফ রিপোর্টার :
করোনায় চলমান লকডাউনে মানুষ গৃহবন্দি ও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কর্ম না থাকায় বহু মানুষ হয়েছেন বেকার। মানুষের পকেট খালি। এরইমধ্যে লকডাউনকে পুঁজি করে সিলেটে বেড়েছে সবজি, মাছ ও নিত্যপণ্যের জিনিসের দাম। সব ধরনের কাঁচা সবজি ১০-১৫ টাকা বেশি দরে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০-৪০ টাকা। সেই সাথে প্রতি কেজি চালে ৫-৮ টাকা বেড়েছে। বেশিদামে পণ্য কিনতে হিমসিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। কঠোর লকডাউন চলাকালে সিলেটে আইনশ্ঙ্খৃলা বাহিনী তৎপরতা দেখা গেলেও বাজার মনিটরিংয়ে প্রশাসনের কোন তদারকি নেই। যার কারণেই ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে দাম বৃদ্ধি করে যাচ্ছেন। এদিকে মাছ ও সবজির দাম বৃদ্ধির জন্য বিক্রেতারা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া কম সময়কে দায়ী করছেন।
তবে ক্রেতারা বলছেন, লকডাউনের অযুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীয়রা অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন। কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষকে বাঁচাতে বাজার মনিটরিং করা খুবই জরুরী। অন্যথায় মানুষ আরও বিপদে পড়বে। মূলত লকডাউনের কারণে মাছ-মাংসসহ সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ক্রেতারা।
গতকাল শনিবার সকালে সিলেটের কয়েকটি কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, কঠোর বিধিনিষেধের কারণে কাঁচাবাজারে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ক্রেতার ভিড় বেশ কম। তবে পণ্যের দামে তা প্রভাব ফেলেনি।
সিসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুনন্দা রায় বলেন, প্রতিদিনই সিলেটের বাজারগুলোতে অভিযান চালিয়ে জরিমানাও করা হচ্ছে। সিসিকের অভিযান সবসময় অব্যাহত আছে। আমরা যখন বাজারগুলোতে অভিযানে যাই তখন ক্রেতারা যদি বেশী দামে পণ্য করার অভিযোগ আমাদেরকে জানান তখন আমরা আরও কঠোর হবো। এজন্য তিনি সবার সহযোগীতা কামনা করেন।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলু ২০ টাকা থেকে বেড়ে কেজি প্রতি ২৫ টাকা, বেগুনের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকার কেজি বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঝিঙে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। চিচিঙ্গার কেজি সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা হয়ে গেছে। ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটির দাম বেড়ে ৮০ টাকা হয়েছে। আগের মতো ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বাজারে চাল কুমড়া পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি পিস লাউ আকারভেদে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার পিস ৪০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ টাকা। কাঁচামরিচের কেজি ৪০ টাকা। শশার দাম ৪০ টাকা। কাঁকরোল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকায়। এদিকে,আমদানি করা আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। আর দেশি আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। দেশি পেঁয়াজের কেজি গত সপ্তাহের মতো ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাছের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে বেশি। তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে, যা আগে ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। মৃগেল মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। রূপচাঁদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকায়।
মেজরটিলা এলাকার মাছ বাজারের ক্রেতা সাকিব মাহমুদ বলেন, যে তেলাপিয়া মাছ কিনতাম ১২০-১৩০ টাকায় আজ সেটা ১৪০ টাকায় কিনেছি। তবে বাজার মনিটরিং না থাকায় বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
মাছ বিক্রেতা আকরাম মিয়া বলেন, আমরা বাজার থেকে দাম দিয়ে কিনে একটু লাভ করেই মাছ বিক্রি করছি। লকডাউনে শ্রমিক সংকট থাকায় ঘের মালিকরা মাছ ধরতে পারছেন না। তাছাড়া বাইরে থেকে মাছ আসছে কম। এই কারণে সাধারণ মাছের দাম বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম বাড়লেও কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। বন্দরবাজারের লালবাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ টাকা কেজি। এদিকে, ব্রয়লার মুরগির দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালী মুরগি এবং লাল লেয়ার মুরগি। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। আর সোনালী মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা।
চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৪-৫ টাকা। বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা। গত সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। বাজারে এখন মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা, গত সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৫৮ টাকা থেকে ৬০ টাকা কেজি। এখন পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৪৮ টাকা কেজি। বাজারে নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা গত সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৬৭ কেজি।