রক্তাক্ত মাতৃভাষা বঙ্গবন্ধু ও বাংলা ভাষা-৬

1

মোস্তাফা জব্বার :

বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তানোত্তর রাজনীতির ধারা অত্যন্ত স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেয় যে, তিনি বাংলা ভাষাকেই তাঁর রাজনৈতিক আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছেন। একই সঙ্গে বাংলা ভাষা আন্দোলনই তাঁকে তরুণ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ৪৭ সালের আগস্ট মাসে নতুন স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেবার পরপরই মুসলিমপ্রধান পূর্ব পাকিস্তানে মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ বা তার রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের বিপক্ষে কোন রাজনৈতিক শক্তির জন্ম নেয়াটা অসাধ্য ছিল। এটি একটি চরম দুঃসাহসের বিষয় ছিল যে, জিন্নাহ ও মুসলিম লীগের বিপক্ষে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তির জন্ম হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অতি দূরদর্শিতার সঙ্গে সেই কাজটি করেছিলেন এবং পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার দাবিকে সামনে এনে একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্যোজাত পাকিস্তানের কারাগারে জীবনে প্রথমবারের মতো জেল খেটে বের হয়ে এসে রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন আরও বেগবান করে তোলার পথে গেলেন। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের পুকুর ধারে একটি ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন সদ্য কারামুক্ত ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। সভাটি শুধু প্রতিবাদ সমাবেশ হিসেবে শেষ হতে পারত; কিন্তু সমাবেশের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে সমাবেশ সংক্ষিপ্ত হয় এবং এ্যাসেম্বলি ঘেরাওয়ের কর্মসূচী নেয়া হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন আরও এগিয়ে যায়। সভায় ঢাকা ও অন্যান্য জেলায় পুলিশী বাড়াবাড়ি সম্পর্কে সংগ্রাম কমিটির সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা, পরিষদে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব রাখার জন্য দিন ধার্য করা, উপরোক্ত সংশোধনী প্রস্তাবগুলো অনুমোদন করাতে ব্যর্থ হলে মন্ত্রিসভার পদত্যাগ করা- এ প্রস্তাবনাগুলো গৃহীত হয়।
এসব প্রস্তাব অলি আহাদের মাধ্যমে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোও হলো। উক্ত সভার বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে পরিষদ ভবন গেটে তারা প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের সাক্ষাৎপ্রাপ্ত হলে কয়েক মিনিটের মধ্যে স্থান পরিত্যাগ করতে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে পুলিশবাহিনী হিংস্র মূর্তি ধারণ করে তাদের ওপর লাঠিচার্জ আরম্ভ করে। মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে কিছু অংশ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে এবং কিছু অংশ সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের মধ্যবর্তী মাঠে জমায়েত হয়। এসব ঘটনা এটি স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের জন্ম কাঠামোর সূচনাতেই বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে একটি রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলার সংগ্রাম শুরু করেন। পাকিস্তানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে তাঁর অন্তরের আবেগের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য বাংলা ভাষাকে ভিত্তি করে আন্দোলন করাটা ছিল একটি অসাধারণ দূরদর্শিতা। সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানীদের নির্যাতন ও অত্যাচারের চেহারাও ফুটিয়ে তোলেন। বঙ্গবন্ধুসহ ছাত্রনেতাদের জেলে ঢোকানো ছাড়াও গণপরিষদ ভবনের সামনে ছাত্রদের ওপর হামলা করার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানীরা তাদের স্বৈরাচারী চরিত্রের বহির্প্রকাশ ঘটায়। এই আন্দোলন বেগবান করতে জিন্নাহর ঢাকা সফর অগ্নিতে ঘৃতাহুতির মতো কাজ করে।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রায় সাত মাস পর ১৯ মার্চ পাকিস্তানের গবর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা সফরে আসেন। এটি ছিল পূর্ব বাংলায় তার প্রথম এবং শেষ সফর। ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অনুষ্ঠিত জনসভায় পাকিস্তানের প্রথম গবর্নর জেনারেল পূর্ব বাংলার ছাত্র-জনতার অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করে ‘উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ ঘোষণা প্রদান করলে জনগণ বিশেষ করে ছাত্ররা দারুণভাবে হতাশ হয়। তার বক্তৃতা তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় বিচ্ছিন্নভাবে। জিন্নাহর সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে বলতে গিয়ে পুনরায় ‘উর্দুই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে’ ঘোষণা দিলে সেখানেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে কিছু সংখ্যক ছাত্র তরুণ ‘নো’, ‘নো’ বলে প্রতিবাদের ধ্বনি উচ্চারণ করেন। পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতি তখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অন্ধ আবেগ ও মোহ ব্যাপকভাবে কার্যকর থাকার কারণে সে মুহূর্তে পাকিস্তানের প্রথম গবর্নর জেনারেলের পূর্ব বাংলায় প্রথম আগমন প্রথম অনুষ্ঠিত জনসভার গুরুত্ব ও পরিবেশই ছিল আলাদা। এই জনসভায় জিন্নাহর কোন কথার প্রতিবাদ হতে পারে তা ভাবাই অকল্পনীয় ব্যাপার। কিন্তু পূর্ব বাংলার তরুণদের এক অংশ এই জনসভার এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে জিন্নাহর রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর ঘোষণাকে বিনা প্রতিবাদে ছেড়ে দেননি। সেদিন মৃদুস্বরে হলেও পরদিন তা ব্যাপকতা লাভ করে। পরদিন অর্থাৎ ২২ মার্চ কার্জন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান নির্ধারিত ছিল। তবে ছাত্রনেতারা সমাবর্তনের অনুষ্ঠানেও জিন্নাহর রাষ্ট্রভাষা উর্দু সম্পর্কে যে কোন বক্তব্যের বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত মনে মনে নিয়ে রাখেন। জিন্নাহ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তার ভাষণে আগের দিনের মতো কেবল উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা প্রদান করলে পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক ছাত্রদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তাৎক্ষণিকভাবে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে থাকেন। জিন্নাহর ভাষণ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। পরিবেশ শান্ত হলে তিনি ভাষণ সমাপ্ত করেন, তবে ভাষণের এই অংশের সুর নরম এবং সংযত। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কাছে স্মারকলিপি দাখিল করা হয়। কিন্তু জিন্নাহ রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে ছিলেন অনমনীয়। পরপর দু’দিন জিন্নাহর ভাষণে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণাকে পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজের প্রতিবাদী অংশ তাৎক্ষণিকভাবে বিরোধিতা করবে এ ধারণা সরকার এবং জিন্নাহর কাছে অকল্পনীয়। তবে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অগণতান্ত্রিক চরিত্রের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার উদীয়মান গণতান্ত্রিক শক্তির ক্রমবর্ধমান উত্থানের স্পষ্ট লক্ষণ হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে যে, তা পাকিস্তান রাষ্ট্র ও সরকার বুঝতে পারেনি। তবে পূর্ব বাংলার তরুণ ছাত্রদের নেতৃত্বে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ একটি শক্তির উন্মেষ ঘটতে শুরু করে, যা পরবর্তীকালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।
এদিকে জিন্নাহর বক্তৃতার কয়েকদিন পর ফজলুল হক হলের সামনে একজন ছাত্রনেতা উর্দু ভাষার পক্ষে বক্তৃতা দিলে বঙ্গবন্ধু তীব্র প্রতিবাদ জানান। জিন্নাহ চলে যাওয়ার কয়েকদিন পর ফজলুল হক হলের সামনে এক ছাত্রসভা হয়। তাতে একজন ছাত্র বক্তৃতা করে বলেছিল, ‘জিন্নাহ যা বলবেন তাই আমাদের মানতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু তার প্রতিবাদ করে বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, কোন নেতা যদি অন্যায় কাজ করতে বলেন তার প্রতিবাদ করা এবং তাকে বুঝিয়ে বলার অধিকার জনগণের আছে। বাংলা ভাষা শতকরা ছাপ্পান্নজন লোকের মাতৃভাষা। পাকিস্তান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সংখ্যাগুরুদের দাবি মানতেই হবে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা না হওয়া পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব। তাতে যাই হোক না কেন, আমরা প্রস্তুত আছি। সাধারণ ছাত্ররা আমাকে সমর্থন করল। এরপর পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ও যুবকরা ভাষার দাবি নিয়ে সভা ও শোভাযাত্রা করে চলল।
দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ ছাপিয়ে দাবি আদায়ের জন্য ভাষা সংগ্রাম কমিটি অক্লান্তভাবে কাজ করে যেতে লাগল। এই ভাষা সংগ্রাম কমিটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যাঁরা নিরলসভাবে কাজ করেছেন সেই সব ছাত্রনেতার মধ্যে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অন্যতম। বঙ্গবন্ধু আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে ১৯৪৯ সালে দুবার গ্রেফতার হন।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বে ছিলেন তাঁদের প্রায় সকলেই স্বীকার করেছেন যে, বঙ্গবন্ধু জেলখানা থেকে এবং পরে হাসপাতালে থাকাকালীন আন্দোলন সম্পর্কে চিরকুটের মাধ্যমে নির্দেশ পাঠাতেন।
১৯৪৯ সালের মার্চ মাসের শেষের দিকে অথবা এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে টাঙ্গাইলে উপনির্বাচন হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। শামসুল হক সাহেবকে বঙ্গবন্ধুসহ ছাত্রনেতারা রাজি করালেন মুসলিম লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়তে। এদিকে ছাত্রনেতাদের বিশ^বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে- বঙ্গবন্ধু অনুভব করলেন এর প্রতিবাদ করা প্রয়োজন। ছাত্রলীগ ও অন্যান্য ছাত্রকর্মী যারা ঢাকায় ছিলেন, ১৫০ নম্বর মোগলটুলিতে বসে এক সভা করে তারা ঠিক করলেন যে, ১৭ তারিখ থেকে প্রতিবাদ দিবস পালন করা হবে। ছাত্ররা ধর্মঘট করবে যে পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ তাদের ওপর থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার না করে। ১৮ তারিখ ধর্মঘট হয়েছিল আবার ১৯ তারিখ ধর্মঘট হবে বলে ঘোষণা করা হলো। ধর্মঘট করে বোধ হয় কিছু করা যাবে না মনে হওয়ায় ১৮ তারিখ ছাত্র শোভাযাত্রা করে ভাইস চ্যান্সেলরের বাড়িতে গেলেন এবং বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করলেন, ‘আমরা এখানেই থাকব, যে পর্যন্ত শাস্তিমূলক আদেশ প্রত্যাহার না করা হয়।’ ১৯ তারিখ বিকেল ৩টায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, এসপি বিরাট একদল পুলিশ বাহিনী নিয়ে হাজির হলেন। বঙ্গবন্ধু তাড়াতাড়ি সভা ডেকে একটা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে বলে দিলেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পাঁচ মিনিট সময় দিলেন তাদের স্থান ত্যাগ করে চলে যেতে। বঙ্গবন্ধু আটজন ছাত্রকে থাকতে বলে বাকিদের চলে যেতে বললেন। ছাত্র প্রতিনিধিদের ধারণা, বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলে আন্দোলন চলবে। কারণ আন্দোলন ঝিমিয়ে আসছিল। একে চাঙ্গা করতে হলে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়া দরকার। বঙ্গবন্ধু তাদের কথা মেনে নিলেন। পাঁচ মিনিট পরে এসে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গ্রেফতারের হুকুম দিলেন। গাড়িতে তুলে একদম জেলগেটে নিয়ে এলেন বঙ্গবন্ধুকে। পরের দিন জনগণের মধ্যে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠল। পূর্ণ ধর্মঘট পালিত হলো। অনেককেই মুক্তি দেয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত শুধু বঙ্গবন্ধু ও বাহাউদ্দিন চৌধুরী রইলেন। কর্মী সম্মেলনের জন্য খুব তোড়জোড় চলছিল। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল মত নেয়ার জন্য। তিনি খবর দিয়েছিলেন আর মুসলিম লীগের পিছনে ঘুরে লাভ নেই, এ প্রতিষ্ঠান এখন গণবিচ্ছিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। মুসলিম লীগে নিতে চাইলেও যাওয়া উচিত হবে না। কারণ এরা কোটারি করে ফেলেছে। বঙ্গবন্ধুকে আরও জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি ছাত্র প্রতিষ্ঠান গঠন করবেন, না রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন হলে তাতে যোগদান করবেন? তিনি উত্তর পাঠিয়েছিলেন, ছাত্র রাজনীতি আর করবেন না, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানই করবেন। কারণ বিরোধী দল সৃষ্টি করতে না পারলে এ দেশে একনায়কত্ব চলবে। কোথাও হল বা জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেন বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল। শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, আল্লামা মাওলানা রাগীব আহসান, এমএলএদের ভিতর থেকে খয়রাত হোসেন, বেগম আনোয়ারা খাতুন, আলী আহমদ খান ও হাবিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে ধনু মিয়া এবং বিভিন্ন জেলার অনেক প্রবীণ নেতাও তাতে যোগদান করেছিলেন। সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন। তার নাম দেয়া হলো ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হওয়ার কয়েকদিন পরেই বঙ্গবন্ধু ও বাহাউদ্দিনের মুক্তির আদেশ এলো। গোপালগঞ্জে খবর দিয়ে বাড়িতে রওয়ানা করলেন তিনি। জুলাই মাসের মাঝামাঝি হবে, জনসভা ডাকা হয়েছিল। সভায় হাজার হাজার জনসমাগম হয়েছিল। হঠাৎ সকালবেলা ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সভা মসজিদ প্রাঙ্গণে করবেন বলে ঠিক করলেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, তাতে যদি ১৪৪ ধারা ভাঙতে হয় হবে। যখন সভা শুরু হলো তখন এসডিও মসজিদে ঢুকে মসজিদের ভিতর ১৪৪ ধারা জারি করলেন। ছাত্রনেতারা মানতে আপত্তি করলেন, পুলিশ মসজিদে ঢুকলে মারপিট শুরু হলো। বঙ্গবন্ধু ও সালাম সাহেব সভাস্থান ত্যাগ করতে আপত্তি করলেন। তাদের গ্রেফতার করা হলো। জনসাধারণও মসজিদ ঘিরে রাখল। রাত আট ঘটিকায় তাদের জামিন দিয়ে ছেড়ে দেয়া হলো। এটা আওয়ামী লীগের মফস্বলের প্রথম সভা এবং সে উপলক্ষে ১৪৪ ধারা জারি। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে কয়েকবার গ্রেফতার করার সরকারী গোপন নির্দেশ ছিল বলে বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়।
লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান-সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক।