উপশহরে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের বাসার গৃহকর্মী নির্যাতন নিয়ে তুলকালাম

9
নগরীর শাহজালাল উপশহরে গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে নির্যাতনকারী গৃহকত্রীকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর শাহজালাল উপশহরে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেনের বাসায় কিশোরী গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর গতকাল বুধবার বিকেলে সিলেটে এ নিয়ে তুলকালমা কান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
তবে পুলিশ বলছে, ঘটনা এতটা সিরিয়াস নয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের স্ত্রী ও তাঁর গৃহকর্মীকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে মূল বিষয়টি বেরিয়ে আসে। গৃহকর্মীকে শারীরিকভাবে কখনও নির্যাতন করা হয়নি বলে সে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছেন গৃহকর্ত্রী। এমরান হোসেনের স্ত্রী ফারহানা আহমদ চৌধুরী দক্ষিণ সুরমার কদমতলি পূবালী ব্যাংক শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নগরীর শাহজালাল উপশহরের ই-ব্লকের ১ নং রোডের ১১ নং বাসা ফিরুজা মঞ্জিলের ৪ তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেন। গতকাল বুধবার সকালে এমরান হোসেনের বাসার একটি বাথরুম থেকে গৃহকর্মী রুনার চিৎকার শুনতে পান প্রতিবেশীরা। এ সময় তাকে বাথরুমে দরজা লাগিয়ে লাগিয়ে রাখা হয়েছে বলে সে অভিযোগ করে এবং মানুষকে ডেকে তাকে উদ্ধারের অনুরোধ জানায়। রুনার অভিযোগ শুনে এমরানের প্রতিবেশী বাসার বাসিন্দারা সিসিকের ২২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাহেল আহমদ সেলিমকে খবর দেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে শাহপরাণ থানা পুলিশকে খবর দেন। বিকেল ৪টার দিকে একদল পুলিশ এমরান হোসেনের বাসায় পৌঁছলে তার স্ত্রী ফারহানা প্রথমে পুলিশ বাসায় ঢুকতে বাধা দেন। পরে কয়েকজন মহিলা পুলিশ ঘরে ঢুকে গৃহকর্মী রুনাকে বের করে নিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিম বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। তবে পুলিশ ও আমাদের প্রথমে ঘরে ঢুকতে দেননি ফারহানা। এ সময় কয়েকজন মহিলা পুলিশ তাকে বুঝিয়ে ঘরে ঢুকেন এবং গৃহকর্মী কিশোরীকে বাইরে বের করে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, স্থানীয়দের ভাষ্যমতে- পরিবশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেনের স্ত্রী গৃহকর্মী রুনাকে প্রায় নির্যাতন করতেন।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেন ও তার স্ত্রী ফারহানা আহমদ চৌধুরী।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গত মাসের ২২ তারিখ ওই মেয়ে আমাদের বাসায় কাজের জন্য নিয়ে আসি। কিন্তু আসার পর থেকেই সে কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে এবং আমাদের বাসা থেকে চলে যাওয়ার বায়না ধরে। যার মাধ্যমে তাকে আমরা পেয়েছিলাম সেই ব্যক্তির কাছে আগামীকাল ওই মেয়েকে পৌঁছে দেয়ার কথা। কিন্তু এরই মাঝে গতকাল সে আমার দুই সন্তানকে মারধর করে বাথরুমের ভেতর গিয়ে নিজেই সিটকিনি লাগিয়ে অহেতুক চিৎকার-চেচামেচি করে একটি বিব্রতর পরিবেশ তৈরি করেছে।
রুনার শরীরে মরিচের গুড়ো ছিটিয়ে দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে ফারহানা আহমদ চৌধুরী বলেন, এটি সে মাঝে মাঝে নিজেই নিজেই করে। তাকে নাকি ভ তে ধরে- এই ধারণা থেকে সে নিজেই এটি করে। তবে আমার সামনে করতে চাইলে আমি বাধা দেই।
এদিকে, বিকেল ৫টার দিকে ফারহানা আহমদ চৌধুরী ও গৃহকর্মী রুনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় শাহপরাণ থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রুনার ইচ্ছে অনুযায়ী তার স্বজন অথবা পরিবেশ অধিদপ্তর পরিচালক এমরান হোসেনের জিম্মায় দিয়ে দেয়া হবে। এছাড়াও এমরান হোসেনের স্ত্রী ফারহানা চৌধুরীকেও ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, ঘটনা আসলে ততটা সিরিয়াস নয়। থানায় আসার পর দুপক্ষকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এসময় গৃহকর্মী রুনা তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের বিষয়ে কিছু বলেনি। তবে মাঝে মাঝে তাকে বকাঝকা করা হয় এ কথাটি বলেছে। ওসি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় এমরান হোসেনের স্ত্রী ফারহানা আহমদ চৌধুরী আমাদের জানান, তিনি কখনও রুনার শরীরে হাত তুলেননি। তবে মাত্রাতিরিক্ত দুষ্টুমি ও কাজ না করার কারণে মাঝে মাঝে বকঝকা করেন।
গতকাল বুধবারের ঘটনার বিষয়ে ফারহানা আহমদ চৌধুরী বলেন- সকালে অফিসে যাওয়ার আগমুহূর্তে খেলাচ্ছলে রুনা আমার দুই সস্তানের শরীরে মরিচের গুড়ো ছিটিয়ে দিতে চায়। এতে আমার বড় সন্তান ভয় পেয়ে বাথরুমে গিয়ে লুকায়। কিন্তু রুনা বাথরুমে গিয়েও তার শরীরে মরিচের গুড়ো ছিটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। যার ফলে বাথরুমে কিছুটা মরিচের গুড়ো পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে আমি অফিসে চলে যাওয়ার পর সে নিজেই বাথরুমের ভেতরদিকে ছিটকিনি লাগিয়ে চিৎকার-চেচামেচি করে মানুষ জড়ো করে। অবশেষে বিষয়টি মিমাংসা হবে বলে নিশ্চিত করেন সৈয়দ আনিসুর রহমান।