করোনা রোধে দায়িত্ববোধ

8

করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরুর আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এটি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। আমাদের প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে যে কোন সচেতন নাগরিক সাবধান হওয়ার কথা। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো আমরা সতর্ক ও সচেতন হচ্ছি না। গত বছরের জুন মাসের সঙ্গে বর্তমানের তুলনা করলেই সব স্পষ্ট হয়ে যায়। গত জুন মাসের তুলনায় এবারের জুনে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। শনাক্তের হিসাব নিলেই পরিস্থিতি যে খারাপের দিকে যাচ্ছে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। আর মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। অথচ ঘরে নিরাপদে থাকা মানুষের সংখ্যা ভীষণভাবে কমে এসেছে। রাস্তাঘাট, দোকানপাট জনসমাগম স্থল দেখলে মনেই হয় না আমরা বিশ্ব মহামারীর ভেতরে আছি। সবই স্বাভাবিক। সরকার যে দফায় দফায় বিধিনিষেধের সময়সীমা বাড়াচ্ছে তা যেন আমলেই নিচ্ছে না জনসাধারণ। এই আত্মঘাতী উপেক্ষা প্রবণতা থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে।
আগামী এক মাসের বিধিনিষেধ বা ‘লকডাউনে’ সব সরকারী-আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারী অফিস, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। চলমান বিধিনিষেধ আগামী ১৫ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়ে এ বিষয়ে বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ।
সরকার অফিস-আদালত খোলার অনুমতি দিয়েছে। আবার সেইসঙ্গে সুনির্দিষ্ট বিধিও স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছে। এর প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করার অত্যাবশ্যকতা রয়েছে এবং এটি শতভাগ নিশ্চিতও করতে হবে। আমরা আগেও বলেছি, করোনাভাইরাস বিশ্ব মহামারীর এই সময়টা পার করতে দেশের প্রতিটি নাগরিককেই সতর্কতা অবলম্বন করে সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করতেই হবে। বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে নিজেকে বাঁচাতে সচেষ্ট থাকলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে সমাজের ওপর, এতে কোন সন্দেহ নেই। সে কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছিলেন, সবাই সুরক্ষিত না হলে কেউই নিরাপদ নয়। কথাটির অন্য অর্থ হলো নিজে সুরক্ষিত থাকলেই অন্যেও সুরক্ষা পাবে।
রাজধানীর বেশিরভাগ মার্কেটে করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার সক্ষমতা আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। ছোট ছোট দোকানের কারণে সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাও বা কতটা সম্ভব হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যদি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়পক্ষই কড়াকড়িভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্ভব হয়, তাহলে এই করোনাকালে অর্থনীতির চাকা যেমন সচল থাকবে, তেমনি ঘরবন্দী মানুষের মনের ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছে সেটিও জানালা খুঁজে পাবে। তবে এর সবটাই নির্ভর করছে সবার দায়িত্বশীলতার ওপর। শতভাগ দায়িত্বশীল হলেই কেবল সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত থেকে সুফল পাওয়া সম্ভব।