গ্যাস আমদানী করে এলএনজি প্রক্রিয়াজাত করে ভারতে রপ্তানি করা হবে – পররাষ্ট্র মন্ত্রী

11
সিলেটে ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

স্টাফ রিপোর্টার :
দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি নয়, বিদেশ থেকে গ্যাস এনে এলএনজি প্রক্রিয়াজাত করে তা ভারতে রপ্তানি করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামের আউটার স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, একটা ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে যে-ভারতকে বাংলাদেশ গ্যাস দিয়ে দিচ্ছে। আসলে বিদেশ থেকে আনা আমদানিকৃত গ্যাস প্রক্রিয়াজাতকরণ করে তা ভারতে রপ্তানি করা হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি অন্য দেশগুলোর এলএনজি প্রক্রিয়াজাত করে তা রপ্তানি করার উদাহরণ টেনে বলেন, এতে বাংলাদেশেরই লাভ হবে।
ভারতের সাথে পানি বিনিময় নিয়ে কিছু মানুষ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, মানবিক বিষয়ের কথা মাথায় রেখে ফেনি নদীর কিছু পানযোগ্য পানি ভারতকে দেওয়া হবে। ভারতের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রেখেই বিভিন্ন সময় আন্তঃচুক্তি হয়ে থাকে। তারই অংশ হিসেবে আরো নানা চুক্তি হয়েছে যা প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি নয়া দিল্লিতে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। এছাড়া তিনটি যৌথ প্রকল্প উদ্বোধন করেন তারা। গত শনিবার করা এসব চুক্তির মধ্যে রয়েছে-স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা স্মারকের আওতায় ফেনী নদীর ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করতে পারবে ভারত, ওই পানি তারা ত্রিপুরা সাবরুম শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যবহার করবে, উপকূলে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থার (কোয়েস্টাল সারভাইল্যান্স সিস্টেম-সিএসএস) বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে দুই দেশ, চট্টগগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের বিষয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই হয়েছে, চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নে, সহযোগিতা বিনিময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব হায়দরাবাদের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, এবং এছাড়া সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বিনিময় নবায়ন এবং যুব উন্নয়নে সহযোগিতা নিয়ে দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের সময়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ প্রমুখ।
এদিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সিলেটে চালু হয়েছে ট্যুরিষ্ট বাস সার্ভিস। ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে নগরীর জিন্দাবাজারে এ বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘সিলেটে ট্যুরিষ্ট বাস চালুর মধ্য দিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হলো। এর অংশ হেতে পেরে আমি খুবই ভাগ্যবান।’
‘পর্যটন শিল্পে বড় হাতিয়ার হচ্ছে অবকাঠামো’ এমনটি উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘হোটেল, বাস, রেস্তোরাঁ এগুলো অবকাঠামোর সাথে জড়িত। দিনে দিনে এগুলো তৈরি হচ্ছে, আরো ভালো হবে। এক্ষেত্রে আমার যতোটুকু সাহায্য প্রয়োজন, আমি অবশ্যই করবো। সিলেট অন্যান্য জেলাগুলো থেকে কিছুটা ডাউন আছে, যদিও এখানে সম্ভাবনা অনেক অনেক বেশি। সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সিলেট চেম্বার এগিয়ে আসছে। আমরা একসাথে কাজ করে সিলেটকে সত্যিকারের পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এ টি এম শোয়েবের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট ট্যুরস্ এন্ড ট্রাভেলস্ সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন সাহা, সহ-সভাপতি তাহমিন আহমেদ, পরিচালক আব্দুল রহমান জামিল, নিটল মটরস লি. এর ডিলার এহতেশামুল হক চৌধুরী, মামুন কিবরিয়া সুমন, মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, নিটল মটরস এর বাস সেগমেন্ট প্রডাক্ট প্রেসিডেন্ট মো. জাফর উল্লাহ, এরিয়া প্রেসিডেন্ট আনোয়ার হোসেন, এরিয়া ম্যানেজার সৈয়দ তাহমিদ, কো-অর্ডিনেটর শাহ মো. বাহাদুর আলম, বাংলাদেশ ক্যাটারিং এসোসিয়েশন ইউকের সিনিয়র সহ সভাপতি এনামুল হক চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সিলেট ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসের উদ্যোগে এই ট্যুরিষ্ট বাস দুটি চালু হয়েছে। আগামীতে আরো ৬টি ট্যুরিষ্ট বাস চালু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব বাসে এসি ও ওয়াইফাই আছে। বাসের কোনোটিতে ২২টি, কোনোটিতে ২৪টি করে আসন রয়েছে। সিলেট থেকে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে যাবে এসব বাস।