জুড়ীর শাহাপুর গ্রামের চারটি কাঁচা রাস্তার বেহাল দশা

46
জুড়ীর শাহাপুর গ্রামের কাঁচা রাস্তার বেহাল দশা।

শাহ আলম শামীম কুলাউড়া থেকে :
জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের ভুয়াই থেকে তেঘরিঘাট, জাকিরের বাড়ি থেকে উমানন্দের বাড়ি (পঞ্চিম শাহাপুর) পর্যন্ত, শাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শাহগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ও পঞ্চিম শাহাপুর জামে মসজিদ সম্মুখ থেকে শাহাগঞ্জ বাজার পর্যন্ত গ্রামের চারটি কাঁচা সড়কের বেহাল দশা। প্রায় সাত কিলোমিটার এই সড়গুলোতে এলাকাবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই। সামান্য বৃষ্টির হলে কাঁদা পানিতে চলাচলকারী মানুষকে জনদুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। বৃষ্টি হলে কোনো গাড়ী চলা চল করতে পারেন না। এ কাঁচা রাস্তাগুলো সংস্কারের কোনো পদক্ষেপ না থাকায় নিয়মিত চরম ভোগান্তীতে পড়ছেন এলাকাবাসী। বর্ষার মৌসুমে এ রাস্তা গুলোর করুন অবস্থা দেখার যেনো কেউ নেই। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১০-১২ সহস্রাধিক মানুষের চলাচল। পঞ্চিম শাহাপুর, পূর্ব শাহপুর গ্রামের চলাচলের একমাত্র এই চারটি রাস্তা কাঁচা। বেহালদশার কারণে বর্তমানে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তাগুলো দিয়ে স্থানীয় জনসাধারণ চলাচল করছেন। অন্যদিকে এলাকার মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা, চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ রাস্তাগুলো অতিগুরুত্বপূর্ণ। এই রাস্তাগুলো পাকা করার দাবি স্থানীয় এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শাহাপুর গ্রামের ভুয়াই থেকে তেঘরিঘাট, জাকিরের বাড়ি থেকে উমানন্দের বাড়ি (পঞ্চিম শাহপুর) পর্যন্ত ও শাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শাহগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ও পঞ্চিম শাহাপুর জামে মসজিদ সম্মুখ থেকে শাহাগঞ্জ বাজার পর্যন্ত গ্রামের চারটি কাঁচা রাস্তা বৃষ্টি হলেই একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বৃষ্টির ফোটা পড়ার পরেই কাঁদা পানিতে একাকার হয়ে যায়। প্রচন্ড এ কাঁদায় চলতে গিয়ে অনেকেই পড়ে গিয়ে গন্তব্যে যাবার আগেই বাড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। শিক্ষার্থীরা সময় মতো স্কুল কলেজে যেতে পারে না। স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে কাঁচা রাস্তা ব্যবহার করে। ওই অঞ্চলের পূর্ব শাহপাপুর-পঞ্চিম শাহাপুর, রাজাপুর, বাগদলীবাড়ী, নিশ্চিন্তপুর, মনহরপুর, তেঘরিঘাটসহ পাশের কুলাউড়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র জনগুরুত্বপূর্ণ এই চারটি রাস্তা। এছাড়া জুড়ী ও কুলাউড়া শহরের সঙ্গে যোগাযোগের মূল এই চারটি রাস্তা। রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় মানুষকে পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। এদিকে শাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,নিশ্চিতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয়, শাহাপুর জামিয়া ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসা, শাহাপুর লতিফিয়া (রা:) হাফিজিয়া মাদরাসা, আব্দুল জলিল একাডেমী, টিএনএম খানম ডিগ্রী কলেজ,কুলাউড়া উপজেলার সপ্তগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়, গৌড়করন আলিম মাদরাসায় প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের এই সড়কগুলো দিয়ে চলাচল করতে হয়। গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণের কারণে পুরো রাস্তাটি কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল এবং কিছু জায়গায় বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। ফলে মানুষকে জুতা খুলে পথ চলতে হচ্ছে। রাস্তায় কাদা থাকায় কোনো যানবাহন এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারছে না। আর যেসব যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছে, সেসব যানবাহন কর্দমাক্ত জায়গায় ও গর্তে আটকে পড়ছে। অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে সময় মতো নিতে না পারায় বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি আশায় বছরের পর বছর ভোগান্তীর স্বীকার এসব এলাকার জনসাধারণ স্থানীয় বড়লেখা-জুড়ী আসনের সংসদ সদস্য, জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যানস, জায়ফরনগর ইউপি চেয়ারম্যান এবং মেম্বারের কাছে আবেদন জানালেও রাস্তার কোনো উন্নয়ন হয়নি। এ চারটি রাস্তা শাহাপুর গ্রামের মানুষের চলাচলে জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাস্তাগুলো পাকা করণে স্থানীয় এলাকাবাসী বড়লেখা-জুড়ী আসনের সংসদ সদস্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী আলহাজ্ব মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপিসহ জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
স্থানীয় পঞ্চিম শাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রহমান, সমাজ সেবক ফয়জুল ইসলাম ফজলু, শিক্ষক মুজিবুর রহমান, বিশিষ্ট মুরব্বি লালা মিয়া, পাখি মিয়া, আব্দুল মতিন, যুবক সাইফুর রহমান, পূর্ব শাহাপুরের বাসিন্দা ছাত্র নেতা সাইফুল ইসলাম জয়, মামুন খাঁন সাজুল, মেহেদী হাসান আমন, জাহিদুল ইসলাম, শ্রীরাম বিশ্বাস ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, শাহাপুর এলাকাবাসীর কষ্টের বসবাস। বর্ষা কাল চলে এলো কিন্তু আমাদের শাহাপুরবাসির স্বপ্ন পূরণ হলো না। গ্রামে প্রায় ১০-১২ সহস্রাধিক মানুষের বসবাস প্রতিদিন এই ৪-৫টি রাস্তা দিয়ে অনেক রকমের মানুষ যাতায়াত করেন। এই কাঁচা রাস্তাগুলো দিয়ে অনেক ধরনের গাড়ী চলাচল করে খুব কষ্ট করে। হালকা বৃষ্টি হলে এই রাস্তা অবস্থা বেহাল হয়ে যায়। বৃষ্টি হলে কোনো রকম গাড়ীত দূরের কতা মানুষ চলা চল করতে পারেন না। বৃষ্টি হলে কাঁচা রাস্তায় কাদাপানি জমে থাকে। তখন রিক্সা ও সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চলতে পারে না। এমনকি হেঁটে চলাচলও কঠিন হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় সময়মতো যেতে পারে না। তাঁরা বলেন, কতো রাস্তাই তো ঠিক হয়, কিন্তু আমাদের এ রাস্তাটা পাকা হচ্ছে না কেন, বলতে পারেন? তারা আরো বলেন, প্রতি নির্বাচনে অনেক প্রার্থী এসে প্রতারণা করে ভোট নিয়ে যায় আর বলে যায় ইনশাআল্লাহ শাহাপুরের রাস্তা এবার করে দেবো? কিন্তু যখন তিনি চেয়ারে বসে যান তখন আর এই এলাকার রাস্তাগুলার কথা আর মনে রাখেন না। নির্বাচনের পর জনপ্রতিনিধিদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। কেন আমাদের সাথে এই প্রতারণা। এই এলাকার মানুষ কি তাদের ভোট দেয় না। তাদের শেষ বারের মতো একটি দাবি স্থানীয় এলাকাবাসীর অসুবিধা বিবেচনা করে কাঁচা রাস্তাগুলো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারা কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. বদরুল ইসলাম বলেন, ভুয়াই-তেঘরিঘাট রাস্তাটি বড় প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই কাজ করার জন্য পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমার জানামতে রাস্তাটি অবহেলিত নয়, আইনি সমস্যার সমাধান করে রাস্তাটি পাকা করণের জন্য মন্ত্রী আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আশা করি কিছুদিনের মধ্যেই পুরো রাস্তাটি পাকাকরণের কাজ হয়ে যাবে।
উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মতিন বলেন, ইতোমধ্যে রাস্তাটির এক কিলোমিটার পাকাকরণ করা হয়েছে। আইনি জটিলতায় রাস্তাটির পাকাকরণ বন্ধ রয়েছে। তবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীর নির্দেশনায় পিচের মুখ থেকে এক কিলোমিটার আরসিসি ঢালাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি পাস হওয়ামাত্র কাজ শুরু হবে।