করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে

12

কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের তীব্র সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার চলমান লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়েছে ১৬ মে পর্যন্ত। এই লকডাউন কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে ও হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে জনমনে এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। শুধু গণপরিবহন-লঞ্চ-স্টিমার ও রেলপথ ছাড়া আর সবই চলছে। প্রাইভেট গাড়ি ও রিক্সাতো বেসুমার। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হচ্ছে সাময়িক যানজট। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দোকানপাট-শপিংমল প্রথমে সীমিত সময়ের জন্য খোলার অনুমতি দেয়া হলেও ক্রমশ তা শিথিল হচ্ছে। তদুপরি ঢাকার বাইরে কোথাও তা কার্যকর হচ্ছে না। নিত্যপণ্য সামগ্রী যোগান অব্যাহত রাখার স্বার্থে হাটবাজার খোলা রাখা হয়েছে। পণ্য চলাচলও স্বাভাবিক। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষাসহ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বালাই নেই। যে কোন কারণেই হোক না কেন করোনার সংক্রমণের তীব্রতা ও মৃত্যু হার কমেছে কিছুটা। রোগীর ভিড়ও কমেছে হাসপাতালগুলোতে। চলতি সপ্তাহ থেকে মিনিবাস খুলে দেয়া হলেও দূরপাল্লার যানবাহন চলবে না। তবে ঈদের ছুটিতে মানুষ পড়িমরি করে বাড়িতে ছুটে যাবেই। তখন পরিস্থিতি কি দাঁড়ায় বলা যায় না। ৫ এপ্রিল থেকে ১৬ মে পর্যন্ত একটানা ১ মাস ১১ দিন অধিকাংশ সরকারী অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় এর অনিবার্য নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন আর্থিক খাতে। উল্লেখ্য, এ সময় ব্যাংকিং কার্যক্রমও ছিল সীমিত। এতে জাতীয় আয় এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রমে কিছুটা হলেও ব্যাঘাত ঘটেছে। জনস্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা, ত্রাণ কার্যক্রমসহ কিছু সেবা সচল থাকলেও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আর্থিক লেনদেন, বকেয়া বিল পরিশোধ, বিল আদায়, আমদানি-রফতানি ব্যয় মেটানো ইত্যাদিতে যে কিছু সমস্যা ও জটিলতা দেখা দিয়েছে, তা শিকার করতে হবে। আগামীতে এসব থেকে উদ্ধার পেতে হলে বের করতে হবে পরিত্রাণের পথ।
করোনা মহামারীজনিত দীর্ঘ লকডাউন-শাটডাউনে সর্বাধিক বিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে দেশের আর্থিক খাতসমূহ। যায় কমে। খেটে খাওয়া দিনমজুর ও কৃষি শ্রমিকদের দৈনিক রুটি-রুজি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম ঘটে। ফলে গরিব আরও গরিব হয়ে পড়ে। অন্য দিকে ক্ষতিগ্রস্ত হন ছোট-বড় শিল্প-কারখানার মালিক এবং উদ্যোক্তারাও। দৈনন্দিন ব্যবসাবাণিজ্য, আমদানি-রফতানি তদুপরি সব রকম যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় অর্থনীতির চাকা প্রায় অচল হওয়ার উপক্রম ঘটে।
বর্তমান সরকার অবশ্য বিশেষ করে দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে যথাসম্ভব দরিদ্রবান্ধব কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এক কোটি ওএমএস কার্ডের আওতায় অন্তত পাঁচ কোটি জনসংখ্যাকে নিয়ে আসার চেষ্টা চলেছে রেশনিংয়ের আওতায়। টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে দেয়া হচ্ছে নানাবিধ নিত্যপণ্য। ব্যক্তিগত সুরক্ষা, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে অনুমতি দিয়েছে পোশাকসহ কিছু শিল্প-কারখানা চালু রাখার। সে অবস্থায় যথাযথ সুরক্ষাসহ শিল্প-কারখানাসহ মেগা প্রকল্পগুলো সচল এবং সর্বস্তরের মানুষ উদ্যোগী হলে জীবন-জীবিকা চলতে পারে।