বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূতকে প্রধানমন্ত্রী ॥ প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ফিরে আসায় নতুন গতি আসবে

23
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জলবায়ু বিষয়ক বিশেস দূত জন কেরি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসা জলবায়ু কূটনীতির ক্ষেত্রে নতুন গতির সঞ্চার করবে। শুক্রবার বিকেলে তার সরকারী বাসভবন গণভবনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি সৌজন্য সাক্ষাত করলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বৈঠকে জন কেরি জানান, যুক্তরাষ্ট্র গ্রীন জলবায়ু তহবিলের এক মিলিয়ন ডলার ছাড়াও দুই মিলিয়ন ডলার দেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২২-২৩ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু বিষয়ক ভার্চুয়াল লিডার্স সামিটে অংশগ্রহণের জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানানোয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানান। মার্কিন প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণ গ্রহণ করায় তার বিশেষ দূত জন কেরিও এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশসহ প্রায় ৪০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা জলবায়ু বিষয় ‘লিডার্স সামিট অন ক্লাইমেটে’ অংশগ্রহণ করবেন।
বৈঠকে সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্টের জলবায়ু বিষয় বিশেষ দূত জন কেরি বলেন, বাংলাদেশ চাইলে তারাও বাংলাদেশকে কোভিড-১৯ এর টিকা দিতে পারে, কেননা যুক্তরাষ্ট্রে টিকার চাহিদা গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে উদ্বৃত্ত হবে।
জন কেরি দূষণের ঝুঁকি হ্রাস করতে জলবিদ্যুতের পাশাপাশি সৌর বিদ্যুতের নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিকল্প শক্তির উৎস ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাগুলো অন্যদের সঙ্গে অংশীদার হয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গ্রীন জলবায়ু তহবিলের এক মিলিয়ন ডলার ছাড়াও দুই মিলিয়ন ডলার দেবে। জন কেরি এ সময় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলার ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসা করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা নিঃসরণকারী (কার্বন) দেশ নয় এবং নিঃসরণে তাদের অবদান নগন্য। কিন্তু আমরাও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হব। তবে আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য জ্বালানির প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তারা ভারত, ভুটান এবং নেপালের সঙ্গে আঞ্চলিক ভিত্তিতে দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপক্ষীয় উপায়ে জলবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য কথা বলেছেন। তিনি বলেন, দেশে ৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন সৌর সংযোগ রয়েছে, সৌরশক্তি সেচের জন্য প্রয়োজনীয় বলেও তিনি যোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, তার সরকার জলবায়ু বিরুপ প্রভাব মোকবেলা করার জন্য অন্যান্য উদ্যোগের সঙ্গে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। পাশাপাশি সরকারী উদ্যোগে ইতোমধ্যে সারাদেশে প্রায় ১১ দশমিক ৫ মিলিয়ন গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে এবং তার দলীয় নেতাকর্মীরা ১০ মিলিয়ন অন্য গাছ লাগিয়েছেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা এবং সিক্রেট ডকুমেন্টস এগেইস্ট ফাদার অব দ্য নেশন বইয়ের ইংরেজী ভার্সন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত জন কেরিকে উপহার দেন।
এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডাকা জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন বিষয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার দুপুরে দিল্লী থেকে বিশেষ একটি ফ্লাইটে জন কেরি ঢাকায় আসেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার উপস্থিত ছিলেন। দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন জন কেরি।
যুক্তরাষ্ট্রে ৪০টি দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের অংশগ্রহণে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ক্লাইমেট লিডার্স সামিটের আয়োজন করা হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সশরীরে আমন্ত্রণ নিয়ে এসে তা তার হাতে হস্তান্তর করেন জন কেরি। শুক্রবার রাতেই তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।