শাবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন আজ, জয়ের গুটি বিএনপি-জামায়াতের হাতে

285

শাবি থেকে সংবাদদাতা :
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচন আজ সোমবার (১৫ মার্চ) অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিক্ষকরা। প্রতিবারের ন্যায় এবারও নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুই প্যানেল ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ ও বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার কয়েকবছর পর থেকেই নির্বাচনে টানা বিজয় লাভ করে আসছেন আওয়ামীপন্থী দুই প্যানেলের শিক্ষকরা। টানা হারের বোঝা মাথায় নিয়ে বেড়ালেও বিগত কয়েক বছর থেকে নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের কোন প্যানেল জিতবে তা নির্ধারণে বড় ভূমিকা পালন করে আসছেন বিএনপি জামায়াতপন্থী প্যানেলের শিক্ষকরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৯ সালের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী মতাদর্শিক শিক্ষকরাই নিয়োগ পেয়েছেন। সেই হিসেবে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের নিয়োগ না হওয়ায় ভোটের রাজনীতিতে অনেকটা হার মেনে নিয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আসছে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’। আওয়ামীপপন্থী শিক্ষকদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ভোটের রাজনীতিতে বিগত সময়ে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ প্যানেলের শিক্ষকরা জয়লাভ করে আসছেন। গুঞ্জন আছে বিগত কয়েকবছর ধরে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুটি প্যানেল ভোটের রাজনীতিতে এগিয়ে যেতে বিএনপি জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সাথে লিয়াজু করে আসছেন। এমতাবস্থায় বিএনপি জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা যাদের ভোট প্রদান করেন তারাই নির্বাচনে জয় লাভ করে আসছেন।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংখ্যা প্রায় ১২০ এর কাছাকাছি। ২০১৬ সাল পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফল ঘেটেও বিএনপি জামায়াতপন্থী প্যানেলের শিক্ষকদের প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ এমনটাই দেখা যায়। কিন্তু বিগত কয়েকবছর থেকে নির্বাচনে তাদের প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ গড়ে ৯০ এর নিচে নেমে এসেছে। সদস্য পদগুলোতে ১০০ এর উপরে ভোট পেলেও আশ্চর্যজনকভাবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে তাদের প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ ৮০ থেকে ৮৫ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এক্ষেত্রে বিএনপি জামায়াতপন্থী প্যানলের বাকি ২০ থেকে ৩০টি ভোট আওয়ামীপন্থী যে কোন একটি প্যানেলের প্রার্থীর জয়ের নির্ধারক হিসেবে বড় ভূমিকা পালন করে আসছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সিনিয়র শিক্ষকরা জানান, জামায়াত-বিএনপি শিক্ষকদের ভোটের সংখ্যা ১০০ এর অধিক হলেও বিগত কয়েক বছর থেকে নির্বাচনে তারা আওয়ামীপপন্থী শিক্ষকদের সাথে লিয়াজু করে আসছেন। যে প্যানলের সাথে তাদের যোগাযোগ ভালো, যাদের মাধ্যমে তাদের দাবি-দাওয়া আদায় হয়, তাদের সাথে চুক্তি করে নির্বাচনে তাদের নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোট দিয়ে আসছেন তারা। আওয়ামীপন্থী দুই প্যানেলের রিজার্ভ ভোট সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় এক্ষেত্রে বিএনপি জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সাথে লিয়াজু নির্বাচনের জয়ের নির্ধারক হিসেবে বড় ভূমিকা পালন করে।
সোমবার নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবারের নির্বাচনেও বিএনপি জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সাথে লিয়াজু করার গুঞ্জন উঠেছে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে এবারও নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সাথে করা লিয়াজু জয় নির্ধারণে বড় নির্ধারক হিসেবে কাজ করেবে বলে মনে করছেন অনেক শিক্ষকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, এ বছরের নির্বাচন অন্যান্য বছরের তুলনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এ বছর বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হবে। এ বছর নতুনভাবে উপাচার্য নিয়োগ হবে। তাই আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের কোন প্যানেলই নির্বাচনে হার মেনে নিতে চাচ্ছে না। তাই তারা অনেকটা সক্রিয় হয়ে কাজ করছে।