প্রতারক রিজেন্ট সাহেদের বিরুদ্ধে সিলেটে আরেকটি প্রতারণা মামলা

20

স্টাফ রিপোর্টার :
করোনা চিকিৎসায় প্রতারণায় দায়ে গ্রেফতার হওয়া আলোচিত মোহাম্মদ সাহেদ করিম (রিজেন্ট সাহেদ) বিরুদ্ধে সিলেটে আরেকটি মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাটিজস্ট্রেট ৩য় আদালতে এ মামলা দায়ের করেন সিলেট জৈন্তাপুরের পাথর ব্যবসায়ী মাওলা স্টোন ক্রাশার মিলের স্বত্ত্বাধিকারী শামসুল মাওলা।
সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এপিপি এডভোকেট মো. আবদুস সাত্তার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আব্দুস সাত্তার বলেন, সাহেদের বিরুদ্ধে শামসুল মাওলার পক্ষ থেকে আগে থেকেই ৩টি মামলা দায়ের করা আছে। গতকাল তিনি আরেকটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন।
তিনি জানান, ব্যবসায়ী শামসুল মাওলার কাছ থেকে সাহেদ পাথর কিনে নেন। এর বিপরীতে তাকে দেয়া সাহেদের একটি চেক তার বা তার কোম্পানির নয়। ভুয়া একটি চেকে (চেক নং- ৯০২৬৪৬৩০) ১০ লক্ষ টাকার অংক বসিয়ে স্বাক্ষর দিয়ে শামসুল মাওলাকে প্রদান করেন সাহেদ। পরবর্তীতে সেটি অন্য একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামের চেক বলে ধরা পড়ে। এ মর্মে বৃহস্পতিবার সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাটিজস্ট্রেট আদালতে আরেকটি প্রতারণা, জালিয়াতি ও আত্মসাৎ মামলা দায়ের করেন ব্যবসায়ী শামসুল মাওলা। মামলাটি আমলে নিয়ে এ বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত বছরের ৪ মার্চ সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে সাহেদের বিরুদ্ধে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকার তিনটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন ব্যবসায়ী শামসুল মাওলা। সাহেদের দেয়া ১০ লক্ষ টাকা করে ২ টি চেকে ২০ লক্ষ টাকা ও আরও একটি চেকে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারিত সময়ে না পাওয়ায় এ ৩ মামলা করেন তিনি।
করোনা পরিস্থিতিতে কিছুটা বিলম্বের পর গত ৮ নভেম্বর আলোচিত সেই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিকালে বিবাদিপক্ষের আইনজীবী সাহেদের জামিনের আবেদন করলে সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতের বিচারক হারুনুর রশিদ অভিযুক্ত সাহেদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
শামসুল মাওলা জানান, গতবছর হঠাৎ একদিন ঢাকার এক ভদ্রলোক তার কাছ থেকে এক গাড়ি পাথর কেনেন। যাথারীতি নগদে বিলও পরিশোধ করেন সেই ব্যক্তি। যাওয়ার সময় তিনি শামসুল মাওলাকে ঢাকায় গিয়ে তার বসের সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব দেন। বস সাহেদের সাথে দেখা করলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য পাথর সরবরাহের বড় একটি কন্ট্রাক্ট পাইয়ে দেবেন বলে শামসুলকে জানান ওই ব্যক্তি। শামসুল মাওলা সরল বিশ্বাসে ঢাকায় গিয়ে সাহেদ নামের কথিত সেই ‘বস’র সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় সাহেদ নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর পিএস পরিচয় দেন।
কথাবার্তার এক পর্যায়ে শামসুল মাওলার সঙ্গে ৩০ লাখ টাকার পাথর সরবরাহের চুক্তি করেন সাহেদ। এরপর আরেকদিন বিল আনতে ঢাকায় গেলে তাকে দশ লাখ টাকা করে ত্রিশ লাখ টাকার তিনটি চেক ধরিয়ে দেয় সাহেদ। কিন্তু পরদিন ব্যাংকে গিয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে শামসুলের। ফান্ড স্বল্পতার কারণে দুটি চেক ডিজঅনার হয়। আর অন্য চেকটি তার নিজের একাউন্টেরই নয়, ভুয়া চেক।
বিষয়টি সাহেদকে ফোনে জানাতেই সুর পাল্টে ফেলেস সাহেদ। শামসুল মাওলাকে উল্টো গালাগাল করে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। আচমকাই এমন প্রতারণায় দিশেহারা হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন শামসুল। এরপর টাকার জন্য বহুবার ঢাকায় গিয়ে সাহেদের অফিসে ধর্না দেন, কিন্তু প্রতিবারই শামসুলকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। রিজেন্ট কেলেংকারিতে শাহেদ গ্রেফতার হয়েছে খবর পেয়ে র‌্যাব সদর দফতরে গিয়ে হাজির হন শামসুল মাওলা। মামলার কাগজপত্র দেখান র‌্যাব কর্মকর্তাদের। পাওনা টাকা ফিরে পেতে তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পরে গত বছরের ৪ মার্চ সিলেট চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (১ম) আদালতে সাহেদের বিরুদ্ধে ২৫ লাখ টাকার তিনটি পৃথক প্রতারণা মামলা দায়ের করেন শামসুল মাওলা। এরপর আজ সাহেদের বিরুদ্ধে দায়ের আরেকটি প্রতারণা মামলা।
উল্লেখ্য, করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট প্রদান, অর্থ আত্মসাতসহ প্রতারণার গুরুতর অভিযোগ উঠার পর গত ১৫ জুলাই সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত এলাকা থেকে রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এর আগে ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। পরে রোগীদের সরিয়ে রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়।