অক্সিজেনের ফেরিওয়ালা

14

গত বছরের ৮ মার্চ থেকে বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর আগে চীন এবং ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে করোনার বহুল সংক্রমণে সারা বিশ্ব পর্যন্ত, নাজেহাল। বাংলাদেশে এই সংক্রমণটি ক্রমে ক্রমে তার সর্বনাশা বিস্তারে সবাইকে হতচকিত করে দিলে সামনে চলে আসে নিরাময়ের প্রাসঙ্গিক বিষয়টিও। সংক্রমণের মূল লক্ষণগুলো যখন পরিষ্কার হতে থাকে তখন বুঝতে অসুবিধা হয়নি রোগটি শ্বাসতন্ত্রে, ফুঁসফুঁসে কি মাত্রায় ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে করোনা আক্রান্ত হলেই অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাওয়ার দুর্লক্ষণ সংশ্লিষ্টদের অতিমাত্রায়ই বিচলিত করে দেয়। সঙ্গত কারণে প্রয়োজন পড়ে বেশি মাত্রার অক্সিজেনের। আর এপ্রিল মে মাসে সারাদেশে অক্সিজেনের ঘাটতি মানুষকে যে পরিমাণ আতঙ্কিত করে তোলে, তাও সেই দুঃসময়ের এক অনিবার্য চিত্র। অক্সিজেনের চরম সঙ্কটে দেশের যে বিপন্নতা তাকে সামলাতে গিয়ে কিছু মানুষ যে সচেতন দায়বদ্ধতায় নিজেদের কর্তব্য সম্পাদনে এগিয়ে আসেন তাও অন্ধকারে আলোর নিশানা ছড়িয়ে দেয়ার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। জুন-জুলাই মাসে বাজার থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার উধাও হয়ে যাওয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য এক চরম বিভীষিকা বয়ে আনে। নগদ মূল্য দিয়েও অক্সিজেন না পাওয়ার কারণে আক্রান্ত রোগীসহ স্বজনরাও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটায়। এমন দুর্যোগে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিয়ে যে মানবিক কর্মদ্যোতনা চালিয়ে যান সেটা পরম আশীর্বাদ। এমনই তথ্য উঠে আসে নিরাময় লাভ করা আক্রান্ত রোগী আর নিকট জনের কাছ থেকে। ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’ নামে করোনা দুর্গত মানুষের কাছে সংবাদ পাওয়া মাত্রই ছুটে যেতে দ্বিধা করেনি। শুরু থেকেই সারা দিন রাত কোন ফোন কল পেলেই ছুটে গেছে আক্রান্ত রোগীর কাছে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে, যাদেরকে বলা হচ্ছে ‘ওরা অক্সিজেন ফেরিওয়ালা’। সোনালি ভোরের প্রতীক্ষার মহান বার্তা নিয়ে এগিয়ে চলা এই সেবা প্রকল্প চরম সঙ্কটকালে এক অনির্বাণ দীপ্তি। কত মানুষের জীবন সংশায়ক রুখে দিয়েছে তারা পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের মধ্য দিয়ে। করোনামুক্ত বিশ্বকে স্বাগত জানাতে তারা অধীর অপেক্ষায় দিনও গুনছে। এই মহান সেবা প্রকল্পটি ২৫ জুন থেকে রাজধানীতে শুরু করা হলেও পর্যায়ক্রমে তা বাংলাদেশের কিছু বিভাগীয় শহর এবং জেলাগুলোতে সম্প্রসারিত করা হয়। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, ফেনী, বগুড়া, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার জেলাতেও এই সেবা প্রকল্পটি গত ছয় মাসে এমন সেবা পেয়েছেন ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। অন্যান্য জটিল রোগ নিউমোনিয়া, ফুসফুসের প্রদাহ সংক্রান্ত কোন সঙ্কট তৈরি হলে সেখানেও প্রয়োজনে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেন স্বেচ্ছাসেবকরা। এই বিরাট কর্মযোগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আরও অনেকেই। বিনা মূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করে তারা পেয়েছেন মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা।