এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ মামলায় চার্জশিট আমলে নিলেন আদালত

12
এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ মামলার অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আদালত। এ সময় আসামীদেরকে আদালতে হাজির করা হয়। ছবি- মামুন হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট মুরারিচাঁদ কলেজ (এমসি) ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) গ্রহণ করে তা আমলে নিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার সকাল ১১ টার দিকে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এর বিচারক মো. মোহিতুল হক চৌধুরীর আলোচিত এ ধর্ষণ মামলার চার্জশিট গ্রহণ করেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করে ট্রাইব্যুনালের পিপি রাশিদা সাঈদা খানম বলেন, আদালত চার্জশিট গ্রহণ করে তা আমলে নিয়েছেন। তবে এ মামলার চার্জ গঠনের তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
এদিকে পুলিশের প্রদান করা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলার এ চার্জশিটে কোনো ধরনের কোনো আপত্তিই জানাননি বাদী পক্ষের আইনজীবীরা।
অভিযোগপত্রে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান উরফে রনি, তারেকুল ইসলাম উরফে তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন উরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম উরফে রাজনকে দল বেঁধে ধর্ষণের জন্য অভিযুক্ত করা হয়। আসামি রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান উরফে মাসুমকে ধর্ষণে সহায়তা করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়।
এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকালে সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আবুল কাশেমের আদালতে ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মীকে অভিযোগ করে আলোড়ন তোলা এই মামলার অভিযোগপত্র প্রদান করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।
পরে ৩ জানুয়ারি (রোববার) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে চাঞ্চল্যকর এই মামলার অভিযোগ গঠনের তারিখ ছিলো। এদিন বাদীর পক্ষে আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করা হয়। বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে অভিযোগপত্র নিয়ে আপত্তি থাকলে তা জানাতে এক সপ্তাহের সময় প্রদান করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো: মোহিতুল হক চৌধুরী। আগামী ১০ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারত করেন আদালত। পরবর্তীতে ১০ জানুয়ারি (রবিবার) সকালে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মো. মোহিতুল হক চৌধুরী আদালতে বাদীপক্ষ ফের দুদিন সময় বাড়ানোর আবেদন করলে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার তারিখ ১২ জানুয়ারি চার্জ গঠনের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে গতকাল নির্ধারিত তারিখে এই মামলার অভিযোগপত্রভূক্ত ৮ আসামিকে কঠোর নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করে পুলিশ। আসামিদের উপস্থিতিতে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মীকে অভিযোগ করে আলোড়ন তোলা এই মামলার অভিযোগপত্র প্রদান করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।
অভিযোগপত্রে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়াকে সরাসরি ধর্ষণে সম্পৃক্ত এবং রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুমকে ধর্ষণের সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই আটজনই বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন। এরআগে ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রবাসে স্বামীকে আটকে রেখে নববধুকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্বামীকে নিয়ে শাহপরান মাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন নির্যাতনের শিকার তরুণী (২৫)। ফেরার সময় তারা গাড়ি থামিয়েছিলেন নগরের টিলাগড় এলাকার এমসি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে। স্ত্রীকে প্রাইভেটকারে রেখে স্বামী পাশ্ববর্তী দোকানে গিয়েছিলেন। ওইসময় প্রাইভেটকারটি ঘিরে ধরে কয়েকজন তরুণ। প্রাইভেটকারসহ ওই দম্পতিকে তারা নিয়ে যায় বালুচর এলাকার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ভেতরে। সেখানে স্বামীর সামনেই গাড়ির ভেতর সংঘবদ্ধভাবে তরুণীকে ধর্ষণ করে ৬ তরুণ। পরে তাদের মারধর করে টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয় ধর্ষকরা। আটকে রাখে তাদের গাড়িও। ঘটনার রাতেই নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে নগরের শাহপরান থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
ঘটনার পর আসামিরা পালিয়ে গেলেও ৩ দিনের মধ্যে ৬ আসামিসহ সন্দেহভাজন আরও ২ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব ও পুলিশ। সন্দেহভাজন দুই গ্রেফতারকৃত হলেন- আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়া। গ্রেফতারের পর তাদের প্রত্যেককে ৫ দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে সকলেই দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।