নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল চাই

22

প্রতিবছর যেমনটি হয়, এবারও তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটল না। রমজানের আগেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। বিশ্বের সর্বত্র খুচরা বাজারের কিছু নিয়ম থাকে। আমাদের দেশে তা নেই। এখানে নানা ছুতায় জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো হয়। একটা পর্যায়ে যখন আর দাম বাড়ে না তখন বলা হয় পণ্যমূল্য স্থিতিশীল। আবার বাজার অস্থিতিশীল করতে নানা ছলের আশ্রয়ও নেওয়া হয়। কখনো কখনো তৈরি করা হয় কৃত্রিম সংকট। আমদানিপণ্যের ক্ষেত্রে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি কিংবা আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেওয়া হয়। বর্ষার ক্ষতি কিংবা সড়কপথে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাত দেখানো হয়। মূল লক্ষ্য হচ্ছে অনৈতিকভাবে অধিক মুনাফা অর্জন। সেই লক্ষ্যে ব্যবসায়ীরা সব সময় একজোট বলে ধরে নেওয়া যায়। বাজারে সরবরাহ ও মজুদ যথেষ্ট থাকার পরও ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর প্রবণতা কখনো দূর করা যায়নি। অন্যান্য দেশে যখন উৎসব-পার্বণ সামনে রেখে বাজারে পণ্যমূল্য কমানো হয় তখন আমাদের দেশে ব্যবসায়ীদের কাছে উৎসব মুনাফা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। বাজারে যেকোনো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হতে পারে সেই পণ্যের সরবরাহ বা মজুদ কমে যাওয়া। উৎপাদন কম হলেও অনেক সময় বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। কিন্তু আজকের দিনে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে যেকোনো পণ্য আমদানি করা যায়। উত্পাদন কম হলে বা চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে গেলে বাজারে সংকট দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে দ্রুত যেকোনো দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা যেতে পারে। এতে বাজারে পণ্যের দামে প্রভাব পড়ার কথা নয়।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে রাজধানীর সবজি বাজারে। প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। শবেবরাতের আগে বেড়ে যায় ব্রয়লার মুরগির দাম। আগের সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও চলতি সপ্তাহে তা আবার বেড়েছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৩৫ টাকা কেজি। রমজানের চাহিদাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের আলাদা মজুদ গড়ে তোলে। এতে নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু তার পরও দাম বাড়ানো হয়েছে। টিসিবির হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে আমদানি করা পেঁয়াজ ৮.৩৩ শতাংশ এবং দেশি পেঁয়াজে ১০.৬৭ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকা আদা-রসুনের দামও বেড়েছে। বোরো মৌসুমের নতুন ধান-চাল আসতে শুরু করলেও বাজারে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।
বাংলাদেশের বাজারে সঠিক নজরদারি নেই। ব্যবসায়ীদের কাছে ভোক্তারা জিম্মি। সঠিক নজরদারি ও বিকল্প বাজার ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে। টিসিবিকে সক্রিয় করার কোনো চিন্তা আছে বলে মনে হয় না। রমজান সামনে রেখে দুই দিন পর থেকে টিসিবিকে নামানোর কথা। তার প্রভাব বাজারে কতটা পড়ে, তা দেখতে হবে।