ব্লগার অনন্ত বিজয় হত্যা মামলায় চিকিৎসকের সাক্ষ্যগ্রহণ

7

স্টাফ রিপোর্টার :
বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলায় গতকাল রবিবার আরো একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল আমিন বিপ্লবের আদালতে এই মামলায় সাক্ষ্য প্রদান করেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক সামসুল আমিন। সুরতহাল প্রতিবেদনের সাক্ষী হিসেবে তিনি সাক্ষ্যগ্রদান করেন।
২০১৫ সালের ১২ মে সকালে নিজ বাসার সামনে খুন হওয়ার পর অনন্ত বিজয়ের লাশ উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানেই মরদেহের সুরতহাল করা হয়। সুরতহালের সময় সাক্ষী হিসেবে ডা. সামসুল আমিন উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই মামলার ১৬ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করলেন।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম বলেন, এই মামলায় মোট ২৯ জন সাক্ষী রয়েছেন। এর মধ্যে ৫ বছরে মাত্র ১৬ জন সাক্ষ্য প্রদান করলেন। তিনি জানান, এরআগে গত ১ ডিসেম্বর আবুল কাশেম নামে এক কলেজ শিক্ষক এই মামলায় সাক্ষ্য প্রদান করেন। এছাড়া ৩ নভেম্বর ও ৬ অক্টোবর আরও ২ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল মজিদ খান বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীসহ ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ বাকি আছে। দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্নের প্রক্রিয়া চলছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১২ মে সকালে সিলেট নগরীর সুবিদবাজারে নিজ বাসার সামনে খুন হন বিজ্ঞান লেখক ও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অনন্ত বিজয় দাশ। কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হলে উগ্রবাদীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। সুবিদবাজারের রবীন্দ্র কুমার দাশ ও পীযূষ রানী দাশের ২ মেয়ে ও ২ ছেলের মধ্যে অনন্ত ছিলেন সবার ছোট। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে মাস্টার্স করার পর সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে যোগ দেন তিনি। হত্যাকান্ডের দিনই অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ এয়ারপোর্ট থানায় অজ্ঞাত ৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে এতে অভিযোগ করা হয়।
মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্ত ৬ জন হচ্ছে- কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বীরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫), কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া উরফে মান্নান রাহী উরফে এবি মান্নান ইয়াইয়া উরফে ইবনে মঈন (২৪), কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) ও সিলেট নগরীর রিকাবীবাজার এলাকায় বসবাসকারী সাফিউর রহমান ফারাবী উরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০)। এর মধ্যে আবুল, ফয়সাল ও হারুন পলাতক। ফারাবী ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলারও আসামি। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। গত বছরের ৭ মে সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার সর্বশেষ সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। এরপর সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে বারবার পিছিয়ে যায় সাক্ষ্যগ্রহণ। ফলে এখন পর্যন্ত এই মামলার আশাব্যঞ্জক কোনো অগ্রগতি হয়নি। দীর্ঘদিন সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলার পর গতবছর মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে।