যানজট নিরসনে কোর্ট পয়েন্ট ও চৌহাট্টা সড়কে বন্ধ হচ্ছে রিক্সা চলাচল

63

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর প্রাণকেন্দ্র কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা সড়কে রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি চলাচলের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে সিলেট সিটি কপোরেশন। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে এ রাস্তা দিয়ে এসব যান চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যানজট নিরসন ও সড়ক নিরাপত্তায় এ সিদ্ধান্ত মেনে চলতে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ইতিপূর্বে মাইকিং করে প্রচার চালিয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্তকে জনস্বার্থবিরোধী বলছে কিছু রাজনৈতিক সংগঠন, জেলা রিক্্রা শ্রমিক ইউনিয়ন ও সিলেট জেলা শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন।
সিটি করপোরেশনের সূত্রে জানা গেছে, কোর্ট পয়েন্ট-জিন্দাবাজার থেকে চৌহাট্টা মোড় পর্যন্ত সড়কটি একমুখী (ওয়ানওয়ে) যান চলাচল থাকলেও সম্প্রতি সড়ক বিভাজক স্থাপন করে দ্বিমুখী যান চলাচলের ব্যবস্থা করে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সড়ক বিভাজকের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ এখনো চলছে। জিন্দাবাজার কোর্ট পয়েন্ট সড়ক এলাকায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধসহ সরকারি ও বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। এ ছাড়া নগরীর প্রধান প্রধান বিপণিবিতানগুলোও জিন্দাবাজারসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থিত। পুরো এলাকার বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ করে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। এসব উন্নয়ন কার্যক্রম শেষে পুরো এলাকাকে নগরীর একটি আদর্শ এলাকায় রূপান্তর করার পরিকল্পনায় যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে জিন্দাবাজার কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়টি ১৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার থেকে মাইকিং করে প্রচার করা হয়।
এ ব্যাপারে গতকাল রাতে সিলেট সিটি কপোরেশনের চীফ ইঞ্চিনিয়ার নুর আজিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে কেন্দ্রস্থলের এলাকাগুলোতে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধের পরিকল্পনা ট্রাফিক পুলিশকে নিয়েই হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, যানজট নিরসনসহ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নিরাপদ চলাচলের জন্য আগামী ১ জানুয়ারি থেকে এ পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে। এতে নাগরিকদের ভোগান্তি নয় বরং সুবিধার বিষয়টি বেশি করে বিবেচনা করা হয়েছে। এরপরও ছোট ছোট যানবাহনের জন্য বড় কোনো ভোগান্তি বা সমস্যার সৃষ্টি হলে, তা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানে সতর্ক দৃষ্টি থাকবে।
এদিকে ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বাসদ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ জনস্বার্থ পরিপন্থী। করোনায় বিপর্যস্ত শ্রমজীবীরা। রিকশা-ভ্যান চালিয়ে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করে শ্রমজীবীদের একটি অংশ। এসব যান বন্ধ হলে শ্রমিকদের আয়-রোজগার কমে যাবে। কেন্দ্রস্থলের এলাকাগুলোতে কায়িক শ্রমিকেরা বেকারও হয়ে যাবেন, যা অমানবিক। রিকশা চলাচল বন্ধ হলে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা বেশি ভোগান্তির মুখে পড়বেন উল্লে¬খ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জিন্দাবাজার-বন্দরবাজার-চৌহাট্টা সড়কে অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের প্রধান বাহন রিকশা। ফলে ভোগান্তিতে পড়বেন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে এসব এলাকার ছোট ও মাঝারি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অপরদিকে, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সিলেট জেলা শাখার আহবায়ক মোখলেছুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, আগামী ১ জানুয়ারি ২০২১ সাল থেকে সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র ও ব্যস্ততম সড়ক কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা সড়কে বন্ধ করা হচ্ছে রিক্সা, ঠেলা, ভ্যান গাড়ি চলাচল। ইতিমধ্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে মাইকিং করেছে। সিটি কর্পোরেশন এ সড়ককে লন্ডনের আদলে গড়ে তুলছে বলে যুক্তি হাজির করছে। সৌন্দর্য বর্ধনের আয়োজনও চলছে জোরেশোরে। এর পূর্বে একই যুক্তিতে হকারদের উচ্ছেদ করেছে। বর্তমানে লোকদেখানো পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ সকল সৌন্দর্য বর্ধনের বলি হচ্ছে সাধারণ শ্রমিকরা। নগরীতে রিকশায় চলাচল করে সাধারণ মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মানুষেরা, তাদের চলাচলের একমাত্র বাহন রিক্সা। তারা নগরীর ভোটারও। নগরীতে অনেক ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার, মাইক্রো, জীপ গাড়ি চলাচল করে এ ব্যাপারে কোন নীতিমালা নেই। নেই কোন পার্কিং জোন। এসব গাড়ি মালিকরা কর্পোরেশনের রাস্তাকে পার্কিং এরিয়া হিসেবে ব্যাবহার করে। যত্রতত্র পার্কিং এর কারণে যানজট সৃষ্টি হয়, অপরিকল্পিত নগরায়ন এর জন্য দায়ী। অথচ এ ব্যাপারে মেয়র নীরব। গ্রাম থেকে সবকিছু হারিয়ে জীবিকার প্রয়োজনে গরীব মানুষেরা সবচেয়ে কষ্টকর কাজ অনেক অবহেলা ও বিবেকহীন আচরণের মধ্যেও রিকশা চালিয়ে, হকার হিসেবে ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচার সংগ্রাম করছে। এ সিদ্ধান্ত তাঁদের বেঁচে থাকার অধিকারকে কেড়ে নেয়ার সামিল। সামাজিক বৈষম্যের কারণে গরীব মানুষের এ গ্রোত চাইলেও বন্ধ করা যাবে না। কোর্ট পয়েন্ট থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত রিক্সা চলাচলের জন্য প্রয়োজনে বিকল্প লেনের ব্যবস্থা করুন। হঠাৎ কোন আলোচনা পর্যালোচনা ছাড়া ইচ্ছামাফিক, এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী। বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন এর পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি, অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাচ্ছি, সকল বিবেকবান মানুষের প্রতি এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানাই এবং সকল রিক্সা শ্রমিকদের সংগঠিত আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানাই।
এদিকে গত ১৯ ডিসেম্বর শনিবার রাতে সিলেট জেলা রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: চট্ট-১৬৬৯ এর উদ্যোগে বন্দরবাজার-চৌহাট্টা সড়কে রিক্সা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে এক প্রতিবাদ সভা সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিলেট জেলা রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন সহ-সভাপ্রতি শাহ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পদক মো: আবু বকর সিদ্দিকের পরিচালনায় এই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তারা বন্দরবাজার-চৌহাট্টা সড়কে রিক্সা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জোর দাবী জানিয়ে বলেন, নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার। অত্র এলাকায় স্কুল, কলেজ ও অফিসসহ বিপণী বিতান রয়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীর কম খরচে রিক্সা দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। সেই সুবাদে রিক্সা দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। সেই সুবাদে রিক্সা শ্রমিকরা জীবিকা নির্বাহ করে পরিবার চালাচ্ছেন। অথচ হঠাৎ করে সিটি কর্পোরেশন আগামী ১ জানুয়ারী থেকে উক্ত সড়ক দিয়ে রিক্সা যাতায়াত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে রিক্সা শ্রমিকগণ দুর্ভোগের শিকার হবেন। বক্তারা উক্ত সড় দিয়ে রিক্সা চলাচল আগের মত অব্যাহত রাখা এবং বন্ধ ঘোষণা প্রত্যাহারের জোর দাবী জানান। অন্যথায় রিক্সা শ্রমিকরা কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবে।