দেশে করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশে করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে যেমন আলোচনা-আগ্রহ রয়েছে, তেমনি শুরু থেকেই করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল নিয়েও আগ্রহ ছিল। আর সে আগ্রহে গতি পায় যখন চীনের সিনোভ্যাকের সঙ্গে সরকারের ট্রায়াল চুক্তি হয়। কিন্তু সিনোভ্যাক আর্থিক সহযোগিতা চাওয়ায় সে ট্রায়াল ঝুলে আছে। ট্রায়াল হওয়ার কথা ছিল সানোফিরও। প্রস্তুতিও শেষ করে এনেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। কিন্তু সেটাও কবে হবে, কেউ বলতে পারছে না।
এদিকে আগামী জানুয়ারি মাসে দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনকার ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসবে বলে আশা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে ভ্যাকসিন বিষয়ক জাতীয় পরিকল্পনা। সেটা চলে গেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে। দেশেও এ সংক্রান্ত সব কাজ শেষ হয়েছে। এখন কেবল ভ্যাকসিন পাওয়ার অপেক্ষা বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও একাধিকবার দেশে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের সুপারিশ করেছে। কমিটির সুপারিশ ছিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাতে যেসব ভ্যাকসিন শেষ ধাপে রয়েছে সেসবের ট্রায়ালেও যেন বাংলাদেশ অংশ নিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা। আবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেই সলিডারিটি ট্রায়াল নামে একটি ট্রায়াল দেবে কয়েকটি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা দেখার জন্য।
ফরাসি ওষুধ কোম্পানি সানোফির ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করার প্রস্তুতি নিয়েছিল বিএসএমএমইউ। তারা এজন্য অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি)।
জানতে চাইলে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ওরা (সানোফি) একটু পিছিয়ে দিয়েছে ট্রায়াল, একইসঙ্গে আমাদেরকেও ‘স্লো’ যেতে বলেছে। তাদের ডেডলাইন ছিল ১৫ ডিসেম্বর। কিন্তু এখন ‘ফিউ উইকস’ পেছানোর কথা বলেছে, নির্দিষ্ট করে কোনও সময় নির্ধারিত করে দেয়নি।
বিএসএমএমইউ প্রস্তুত রয়েছে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, আমরা প্রস্তুত, তবে এখন একটু অনিশ্চয়তা রয়েছে।
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সিনোভ্যাকের ট্রায়ালটা হলো না, অথচ পরামর্শক কমিটি সিনোভ্যাকের ট্রায়াল দিতে সুপারিশ করেছিল। একইসঙ্গে যদি সেটা ‘ভালো’ হতো, তাহলে আমাদের দেশের কোনও কোম্পানিকেও লাইসেন্স দিতে বলা যেতে পারে ‘প্রডিউস’ করার জন্য। কারণ দেশে প্রডিউস হলে দাম কম হওয়ার সুবিধাটাও আমরা পেতাম। সিনোভ্যাকের ট্রায়ালটা হলো না, তারা যাচাই-বাছাই করতে করতে সময় পার করলো, কিন্তু প্রথমে তো তারা আর্থিক সহায়তা চায়নিÍবলেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, একটা ফুটবল টিম মোটেই খেলতে পারে না, তার খেলা দেখার জন্য কি কেউ স্টেডিয়ামে বসে থাকবে নাকি? অথচ বাংলাদেশে একটা ট্রায়াল হওয়া দরকার ছিল, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী কীভাবে ভ্যাকসিনে রিঅ্যাক্ট করবে, সেটা দেখতে হবে না? দেশে যদি ট্রায়াল হতো, তাহলে ভ্যাকসিন চুজ করার অপশন থাকতো, তাতে করে অনেক সুবিধা হতো।
যে কোনও ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হওয়া উচিত মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম বলেন, এমনকি অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রোজেনকার ভ্যাকসিনেরও ট্রায়াল হয়ে আসা উচিত। এখন লাখ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিনকে দেওয়া হবে, কিন্তু তাদের মধ্যে যদি কেউ সাফার করে তাহলে সেটা দুঃখজনক বিষয়। তাই পরামর্শক কমিটি চেয়েছিল দেখেশুনে বাছাই করে পরীক্ষা করে নেওয়ার জন্য।
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনে বাংলাদেশে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে করণীয় কী হবে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এ ভ্যাকসিনে এখন পর্যন্ত তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। ভারতের জনগণ আর আমরা একই রকমের। একই আবহাওয়া, একই খাদ্যাভ্যাস। কাজেই আমরা আশা করি কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না।
ট্রায়াল প্রয়োজন আছে কিনা সে প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমরা এখন মোর কন্সেন্ট্রেটিং এবং টিকা আসা নিয়েই ব্যস্ত। এই মুহূর্তে ট্রায়ালের দরকার পড়ে না। অ্যাস্ট্রোজেনকার টিকার আর ট্রায়াল দরকার নেই, ভারত, আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যে ট্রায়াল হয়েছে। কিন্তু অন্যগুলো ট্রায়াল হলে ভালো হতো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যদি এখান থেকেই টিকা পেতে থাকি, তাহলে আর অন্যগুলোর দরকার হবে না।