মা ইলিশ রক্ষায় পদক্ষেপ নিন

8

প্রধানত মা ইলিশ সংরক্ষণসহ প্রজননের নিমিত্ত ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নবেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন দেশের নদ-নদী এবং সমুদ্র উপকূলে ইলিশ ধরা ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নিয়মিত নজরদারিসহ আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এসব তদারকি করবে মাঠ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সর্বোপরি নৌবাহিনী, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড। ইতোমধ্যে অবশ্য এর বাস্তবায়নও দৃশ্যমান হয়েছে। উপকূল অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মৎস্যজীবী তাদের নৌযান তুলে রেখেছেন। জাল গুটিয়ে ফিরে এসেছেন ঘরে। এ সময় ইলিশ মিলবে না হাটে-বাজারেও। চোরাগোপ্তা কিছু ইলিশ ও জাটকা ধরা হলেও তা খুবই সীমিত এবং বাজারে এলেই তা জব্দ ও জরিমানা করা হবে। ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অন্যান্য মাছের উৎপাদনও কিছু বাড়ে বৈকি, যা আশাব্যঞ্জক। সরকার এ সময়ে জেলেদের নগদ প্রণোদনাসহ রেশনও দিয়ে থাকে। অবশ্য সবাই তা পায় না। তবু নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, এরই অনিবার্য সুফল পাওয়া যাচ্ছে সর্বত্র। দেশে বাম্পার ফলন হচ্ছে ইলিশের।
আপামর বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশের ভরা মৌসুম সদ্য শেষ হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই রসনাপ্রিয় বাঙালির হেঁসেলে ঢুকেছে অতি সুস্বাদু তদুপরি উপকারী এই মৎস্যটি। রন্ধনশিল্পীর নিপুণ হাতে তৈরি রকমারি রেসিপিতে পাক প্রণালীর পর পড়ছে ধনী-গরিব-বস্তিবাসী নির্বিশেষে বাঙালির পাতে। এমনকি গ্রামীণ জনপদও বাদ যাচ্ছে না জাতীয় মাছটির স্বাদ পাওয়া থেকে। যোগাযোগ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতিতে দিনে দিনে চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ধৃত ইলিশ পৌঁছে গেছে সুদূর পঞ্চগড় অথবা পার্বত্য জনপদে। দামও সাশ্রয়ী এবং নাগালের মধ্যে। ফলে কিছুটা হলেও কমেছে অন্যান্য মাছের দামও। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে রোল মডেল, এমনকি মৎস্য উৎপাদনেও চতুর্থ স্থান অধিকারী। বিশ্বের ৬৫ শতাংশ ইলিশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। উপকূলীয় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের প্রায় পাঁচ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি জড়িত। এছাড়া ২০ থেকে ৯৫ লাখ লোক জড়িত পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রফতানি ইত্যাদির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কাজে। বাঙালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম একটি অপরিহার্য উপাদান হলো ইলিশ। এর প্রজনন ও সুরক্ষার দায়িত্ব সকলের।