পেঁয়াজ চাষে প্রণোদনা দিন

10

শুল্ক কমিয়ে ১১টি দেশ থেকে আমদানির উদ্যোগ নেয়া হলেও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না কিছুতেই। সরকার টু সরকার পদ্ধতিতে মিয়ানমার থেকে জরুরী ভিত্তিতে টেকনাফ হয়ে পেঁয়াজ আসতে শুরু করলেও পেঁয়াজের দাম শত টাকা কেজির নিচে নামছে না। ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কিছু কম হলেও মান ভাল নয়। ভারত বাংলাদেশকে না জানিয়ে আকস্মিক রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় দেশে রাতারাতি বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। তুরস্ক থেকে চলতি মাসে এক লাখ টন পেঁয়াজ এসে পৌঁছলে দাম কি দাঁড়ায় সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এ নিয়ে বাণিজ্য, কৃষি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় একটি বৈঠকও হয়েছে। তৈরি হয়েছে প্রস্তাবনা ও গাইডলাইন কৃষককে ঋণ দেয়ার। বলতেই হবে, এটি একটি সময়োচিত ও সঠিক সিদ্ধান্ত। গত কয়েক বছরে ধান-চাল, শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস উৎপাদনে যথেষ্ট সক্ষম ও স্বাবলম্বী হয়ে উঠলেও পেঁয়াজ-আদা-রসুন, হলুদ-মরিচসহ মসলা উৎপাদনে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। বগুড়ায় একটি জাতীয় মসলা উৎপাদন গবেষণা খামার থাকলেও এর তৎপরতা আদৌ দৃশ্যমান নয়। অথচ বিশাল পার্বত্য অঞ্চলে অব্যবহৃত জমিতে নানাবিধ মসলা চাষের সমুজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। রংপুরসহ উত্তরবঙ্গ এবং চরাঞ্চল ভোলায়ও পেঁয়াজের আবাদ ও উৎপাদনে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। তবে এর জন্য স্থানীয় চাষীদের দিতে হবে নগদ অর্থ সহায়তাসহ আনুষঙ্গিক প্রণোদনা। মৌসুমের শুরুতে চাষীদের হাইব্রিড তথা উন্নত মানের পেঁয়াজের বীজ, সার, বালাইনাশক-সর্বোপরি উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা গেলে দেশের চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজের উৎপাদন খুবই সম্ভব।
দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ হাজার টন, বছরে ২৪-২৫ লাখ টন। দেশীয় পেঁয়াজের ৩০ শতাংশ নষ্ট হয় সংরক্ষণের অভাবে। ৮ থেকে ৯ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করে মেটাতে হয় অভ্যন্তরীণ চাহিদা, যার প্রধান উৎস ভারত। অতিরিক্ত এই নির্ভরতার ফলে প্রায়ই অস্থিরতা সৃষ্টি হয় পেঁয়াজের দামে। করোনা মহামারীর কারণে মন্দাবস্থা মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, গুঁড়া দুধ, ছোলা, লবণ ইত্যাদির দাম কমলেও দেশে বাড়ছে এসব নিত্যপণ্যের দাম। এ নিয়ে নানা কারসাজি ব্যবসায়ীরা করে থাকে প্রতি বছরই। প্রভাব পড়েছে শাক-সবজি-তরকারির বাজারেও। এ থেকে যা বোধগম্য তা হলো, অতিবৃষ্টি ও বন্যাকে পুঁজি করে সুযোগ নিতে চাইছে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।
সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে বাজার মনিটরিং ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে।