বানিয়াচংয়ে মেয়ে হত্যার বিচার চান অসহায় মা-বাবা

8

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার দক্ষিণ সাঙ্গরে ৭ মাসের অন্ত:সত্ত্বা গৃহবধূ জেসমিন আক্তারকে (১৯) যৌতুকের জন্য পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্বামী জুনাইদ মিয়াসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছেন নিহত জেসমিনের মা কুলসুমা বেগম। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে এফআইআর গণ্যে রুজু করে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বানিয়াচং থানাকে।
এদিকে, মামলা করে বিপাকে পড়েছেন নিহত গৃহবধূ জেসমিন আক্তারের বাবার বাড়ির লোকজন। স্বামীর বাড়ির লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় অব্যহতভাবে মামলা তুলার জন্য হুমকি দিয়ে আসছেন।
মামলার বিবরণে জানা গেছে- বানিয়াচং উপজেলার দক্ষিণ সাঙ্গর গ্রামের মৃত বাবর আলীর ছেলে জুনাইদ মিয়ার সাথে ১০/১২ বছর আগে বিয়ে দেয়া হয় একই গ্রামের আছকির আলমের মেয়ে রুসমিন আক্তারকে। বিয়ের পর তাদের একটি প্রতিবন্ধী ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এর কয়েক বছর পর আরও একটি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে নবজাতকসহ রুসমিন আক্তার মারা যান। সে মারা যাওয়ার পর জুনাইদ মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন আকছির আলমের দ্বিতীয় মেয়ে জেসমিনকে জুনাইদ মিয়ার সাথে বিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। এ সময় নিহত বড় মেয়ে প্রতিবন্ধি ছেলের কথা বিবেচনা করে আছকির আলম তার দ্বিতীয় মেয়ে জেসমিনকে জুনাইদের সাথে বিয়ে দেন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই যৌতুকের জন্য চাপ প্রয়োগ করে জুনাইদ ও তার পরিবার। প্রায় সময়ই জুনাইদ মিয়া জেসমিনকে মারপিট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতেন। এ নিয়ে গ্রামের ময়-মুরব্বিরা একাধিকবার সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করে দেন। জেসমিনকে খুনের কিছুদিন আগে আবারও টাকার জন্য মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দেন জুনাইদ মিয়া। পরে জেসমিন বাবার বাড়িতে চলে আসেন। কিছুদিন পর জুনাইদ মিয়ার গোষ্ঠির প্রধান সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রউপ জেসমিনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে শালিশ বৈঠকের মাধ্যমে স্বামীর বাড়িতে ফিরিয়ে নেন। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই গত ১ সেপ্টেম্বর স্বামী জুনাইদ মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা জেসমিনকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
পরদিন বুধবার সকালে সুজাতপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ওমর ফারুক লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করেন। ময়নাতদন্ত শেষে ওইদিন বিকালে জেসমিনের লাশ গ্রামের বাড়িতে দাফন সম্পন্ন হয়।
ঘটনার পর বানিয়াচং থানায় মামলা দায়ের করতে চাইলে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে গত ৭ সেপ্টেম্বর জেসমিনের মা কুলসুমা বেগম বাদি হয়ে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্বযাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলেন- নিহত জেসমিনের স্বামী জুনাইদ মিয়া, ভাসুর ছামেদ মিয়া, দেবর জুবায়ের মিয়া, আলমগীর মিয়া, আসামী ছামেদ মিয়ার স্ত্রী রুশেনা আক্তার ও ফরহাদ মিয়া। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে এফআইআর গণ্যে রুজু করে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বানিয়াচং থানাকে।
এ ব্যাপারে নিহত জেসমিনের বাবা আকছির আলম বলেন- ‘টাকার জন্য জুনাইদ মিয়া ও তার পরিবার লোকজন আমার মেয়েকে খুন করেছে। ঘটনার পরই মামলা দায়ের করেও আমি নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছি। আমার প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে তারা।’
মামলার বাদি ও নিহত জেসমিনের মা কুলসুমা বেগম বলেন- ‘আমার ৭ মাসের অন্তসত্বা মেয়েকে অনেক কষ্ট দিয়েছে তার স্বামী ও স্বামীর বাড়ির লোকজন। গর্ভবর্তী মেয়েকে তারা সবাই মিলে মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো। কিন্তু আব্দুর রউপ আমার মেয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়ায় আমি আমার মেয়েকে স্বামীর বাড়িতে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার মেয়েকে অনেক কষ্ট দিয়ে খুন করেছে। এখন আব্দুর রউপসহ আসামীরা আমাদেরকে মামলা তুলতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।’
তিনি বলেন-‘আমি গরিব মানুষ ও স্বামী প্রতিবন্ধি। টাকার পয়সার অভাবে কিছুই করতে পারি না। আমি সরকারের কাছে আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমরান হোসেন বলেন- ‘আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব বানিয়াচং থানাকে দিয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি তদন্তাধিন আছে। আমরা দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করব বলে আশা করছি।’