আদালতের নির্দেশে নিলাম স্থগিতের দাবী ব্যবসায়ীদের ॥ তৃতীয় দফায় লোভাছড়া কোয়ারীর জব্দকৃত পাথর নিলামে

9

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট লোভাছড়া পাথর কোয়ারীর দুই পাশে মজুদকৃত লক্ষ লক্ষ ঘনফুট পাথরের নিলাম নিয়ে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বার বার নাটকীয় ঘটনার জন্ম দেয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পূর্বের দুই দফা নিলাম প্রক্রিয়া বাতিল করে কোয়ারী এলাকায় জব্দকৃত ১ কোটি পাথর পুণরায় তৃতীয় দফায় মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) নিলামের আহ্বান করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অপরদিকে গত শুকনো মৌসুমে কোয়ারীর সাবেক ইজারাদার মস্তাক আহমদ পলাশের কাছ থেকে বৈধ রশিদ মূলে পাথর ব্যবসায়ীদের ক্রয়কৃত পাথর পরিবেশ অধিদপ্তর নিলামে তুলায় তা বাতিল করার জন্য বেশ কয়েকজন পাথর ব্যবসায়ী উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন মামলা দায়ের করেছেন।
জানা যায়, মঙ্গলবার হাইকোর্টের সুপ্রিমকোর্ট ডিভিশনের একটি ব্রাঞ্চে লোভাছড়া কোয়ারীর পাথর ব্যবসায়ী নুরুল আমিন, মুদরিছ আলী, সাবেল আহমদ নামে তিন ব্যক্তি তাদের ক্রয়কৃত পাথর জব্দ করে পরিবেশ অধিদপ্তর নিলাম ডাকায় সেই নিলাম বাতিল করে তাদের বৈধ পাথর বিক্রির সুযোগ করে দেওয়ার জন্য রীট পিটিশন মামলা দায়ের করেন। শুনানীকালে বিজ্ঞ বিচারপতিগণ রীট পিটিশনকারী এ তিন ব্যবসায়ীর পাথর নিলাম প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন। তবে পাথর ব্যবসায়ীরা বলেছেন ব্যবসায়ীদের রীট পিটিশন মামলার প্রেক্ষিতে নিলাম প্রক্রিয়া ১ মাসের জন্য স্থগিত করেছেন বিজ্ঞ আদালত। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি শুনেছি উচ্চ আদালতে কয়েকজন ব্যক্তির রীটের প্রেক্ষিতে নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে, কিন্তু এ ধরনের কোন আদেশের কপি আমি পাইনি। তবে নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিত করা হলেও বর্তমানে কোয়ারী এলাকায় জব্দকৃত পাথর কেউ সরাতে পারবে না সে ধরনের নির্দেশনা রয়েছে উচ্চ আদালতের শুনেছি।
জানা যায়, লোভাছড়া পাথর কোয়ারীর ইজারার মেয়াদ ১৩ এপ্রিল শেষ হলেও উচ্চ আদালত লোভাছড়া পাথর কোয়ারী থেকে সব ধরনের পাথর উত্তোলন, পরিবহন ও বিপননে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এ নিয়ে কোয়ারীর সাবেক ইজারাদার মস্তাক আহমদ পলাশ সহ কয়েকজন উচ্চ আদালতে একাধিক পক্ষে বিপক্ষে রীট পিটিশন মামলা দায়ের করেন। উচ্চ আদালতের এসব রীট পিটিশন মামলার প্রেক্ষিতে কোয়ারীতে পাথর পরিবহন ও উত্তোলনের নিষেধজ্ঞা বলবৎ রাখেন। এমতাবস্থায় সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা কোয়ারী এলাকায় পরিদর্শন করে কোয়ারীর দুই পারে গত শুকনো মৌসুমে উত্তোলনকৃত পাথর মেজরমেন্ট করে প্রায় ১ কোটি ঘনফুট পাথর অবৈধ আখ্যায়িত করে জব্দ করেন। জব্দকৃত প্রায় ১ কোটি ঘনফুট পাথর গত ১৯ জুলাই সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তর নিলামে বিক্রির জন্য টেন্ডার আহ্বান করেন। এতে বেশ কয়েকজন অশংগ্রহণ করে ৩০ কোটি ৫২ লক্ষ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে নিলামে নজরুল ইসলাম নামে সিলেটের গোটাটিকর এলাকার এক ব্যক্তি মনোনীত হন। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর ১ম দফা সেই নিলাম প্রক্রিয়া বাতিল করে গত ২১ জুলাই পুনঃনিলাম আহ্বান করা হয়। এতে কাঙ্খিত মূল্য না পাওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ১ম নিলামের সর্বোচ্চ দরদাতা ব্যক্তি হিসেবে নজরুল ইসলামকে ৩০ কোটি ৫২ লক্ষ টাকায় জব্দকৃত ১ কোটি ঘনফুট পাথর নিলামের চিঠি বুঝিয়ে দেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে নজরুল ইসলাম নিলামকৃত পাথর বুঝিয়ে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে বেকায়দায় পড়ে যান পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার ২৮ জুলাই পুনরায় তৃতীয় দফায় কোয়ারী এলাকায় মজুদকৃত ১ কোটি ঘনফুট পাথর নিলামের বিক্রির জন্য টেন্ডার আহ্বান করায় বেশ নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ১২ আগষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট আলমপুর বিভাগীয় কার্যালয়ে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে বলে পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের ওয়েবসাইটে এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও কানাইঘাট উপজেলা প্রশাসনের পেজ এ নিলামের কপি প্রকাশ করা হয়েছে। পর পর তিনবার নিলামে পাথর বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া পাথর ব্যবসায়ীরা তাদের বৈধভাবে ক্রয়কৃত পাথর নিলাম প্রক্রিয়ায় বিক্রি বন্ধের জন্য সরকারের কাছে দাবী জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন, প্রতিবাদ সমাবেশ করে আসছেন।