ব্রাজিলে একদিনে আরও অর্ধলাখ আক্রান্ত

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিশ্বজুড়ে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হয়েছে বলে মনে করছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। আর বিশ্বের সব অঞ্চলেই রেকর্ড করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের হটস্পট হয়ে ওঠা ব্রাজিলে একদিনে আরও ৫০ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারো অবশেষে করোনামুক্ত হয়েছেন। টুইটারে তিনি করোনা নেগেটিভের খবরটি জানান। যদিও কবে তিনি চতুর্থবার পরীক্ষা করেছেন তা উল্লেখ করেননি। বিশ্ব রাজনীতিতে সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন এশিয়ার দেশ উত্তর কোরিয়ায় প্রথম সন্দেহভাজন কোভিড-১৯ রোগী পাওয়া যাওয়ায় জররী অবস্থা জারি করলেন কিম জং উন। ভারতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৩২ হাজার ছাড়িযেছে। এছাড়া চীনে ফের করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। অস্ট্রেলিয়ায় একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের মতে, বিশ্বে ঝড়ের গতিতে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। ২৪ ঘণ্টায় দুই লাখ ৫৭ হাজার ৭৮৯ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন পাঁচ হাজার ৬৮৯ জন। তবে আশার আলো দেখাচ্ছে সুস্থতার হার। বিশ্বে ইতোমধ্যে ৯৯ লাখ ৩৩ হাজার ১৮২ জন মানুষ করোনাকে জয় করেছেন। সুস্থতার হার ৯৪ শতাংশ। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৯৩ শতাংশ। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন এক কোটি ৬২ লাখ ৩৩ হাজার ২৭৬ জন। মারা গেছেন ছয় লাখ ৪৯ হাজার ১৩৪ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ৫৬ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬৩ জন। যাদের মধ্যে ৬৬ হাজার ২৫১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিশ্ব তালিকায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৭৮ হাজার ৯ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ১৪১ জনের। যা আগেরদিন ছিল যথাক্রমে ৬৯ হাজার ৪৪৩ জন ও এক হাজার ১১৬ জন। এ নিয়ে দেশটিতে আক্রান্ত ৪৩ লাখ ১৫ হাজার ৯২৬ জন, মারা গেছেন এক লাখ ৪৯ হাজার ৪০০ জন। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ হাজার ২৪৯ জন, মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ১৭৮ জনের। যা আগেরদিন ছিল যথাক্রমে ৫৮ হাজার ৮০ ও এক হাজার ৩১৭ জন। এতে দেশটিতে রোগীর সংখ্যা ২৩ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩৪ জন, মৃত্যু হয়েছে ৮৬ হাজার ৪৯৬ জনের। বিশ্বে তৃতীয় স্থানে থাকা ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ হাজার ৮৯২ জন। সেই হিসেবে দেশটিতে প্রতি ঘণ্টায় করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন দুই হাজার ৫৫ জনের বেশি মানুষ। একই সময় মারা গেছেন ৭৬১ জন। এ নিয়ে ভারতে মোট রোগীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৬৭৫ জন, মারা গেছেন ৩২ হাজার ১৯০ জন। চতুর্থ স্থানে রাশিয়ায় রোগীর সংখ্যা আট লাখ ১২ হাজার ৪৮৫ জন, মারা গেছেন ১৩ হাজার ২৬৯ জন। পঞ্চম স্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকায় আক্রান্ত ৪ লাখ ৩৪ হাজার ২০০, মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৬৫৫ জনের। পেরুকে ছাড়িয়ে ষষ্ঠ স্থানে উঠে আসা মেক্সিকোতে রোগী ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৩৬, মৃত্যু হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৭৪ জনের। সপ্তম স্থানে থাকা পেরুতে আক্রান্ত ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮৪, মৃত্যু হয়েছে ১৮ হাজার ৩০ জনের।
করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু : বিশ্বের প্রত্যেক অঞ্চলে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হয়েছে। কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তে প্রতিদিনই আগের দিনের রেকর্ড ভাঙ্গছে। গত সপ্তাহে বিশ্বের প্রায় ৪০ দেশে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বিগত সপ্তাহের তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। রয়টার্সের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গত মাসে বেশ কয়েকটি দেশে করোনার সংক্রমণ অনেক বেড়েছে। এগুলোর মধ্যে সাত দেশে বাড়তে শুরু করেছে তিন সপ্তাহ আগে থেকেই। দুই সপ্তাহ আগে থেকে ১৩ দেশে, ২০ দেশে গত সপ্তাহ থেকে এবং চলতি সপ্তাহে ৩৭ দেশে বাড়তে শুরু করেছে।
সব অঞ্চলেই রেকর্ড রোগী : সংক্রমণ প্রতিরোধে বিভিন্ন দেশকে আরও তৎপর হতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বারবার তাগাদা ও হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও বিশ্বের সব অঞ্চলেই করোনা মহামারীর আরও বিস্তৃতি ঘটতে দেখা যাচ্ছে। ৪০ দেশে গত সপ্তাহের একাধিক দিনে রেকর্ড রোগী পাওয়া গেছে। আগের সপ্তাহেও এরকম দেশের সংখ্যা ছিল ২০। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও ভারতেই কেবল সংক্রমণের ঊর্ধগতিই দেখা যাচ্ছে না; অস্ট্রেলিয়া, জাপান, হংকং, বলিভিয়া, সুদান, ইথিওপিয়া, বুলগেরিয়া, উজবেকিস্তান ও ইসরাইলের মতো অনেক দেশেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করছে। লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করায় অনেক দেশ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলেও পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
ব্রাজিলে আরও ১১১১ মৃত্যু : ব্রাজিলে টানা চারদিন ধরে প্রতিদিনই ৫০ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নতুন করে আরও ৫১ হাজার ১৪৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এক সপ্তাহেই মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ২১ হাজার ৬২৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে মারা গেছেন এক হাজার ২১১ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৪৮০ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৬ লাখ ৯২ হাজার ৪৫৮। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন আট হাজার ৩১৮ জন। এদিকে নিজের বাসভবনে কয়েক সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর কোভিড-১৯ এর নতুন পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে বলে জানিয়েছেন ব্রাজিলীয় প্রেসিডেন্ট। শনিবার টুইটারে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের বাক্স হাতে নিজের একটি ছবি পোস্ট করেছেন বোলসোনারো, সঙ্গে দেয়া টেক্সটে লিখেছেন, সার্স-কোভ টু এর জন্য করা তার আরটি-পিসিআর পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। যদিও তিনি কবে পরীক্ষাটি করেছেন তা নিয়ে কিছু বলেননি বা বিস্তারিত কিছু জানাননি। ৭ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন বোলসোনারো। তারপর থেকে তিনবার টেস্ট করেও তিনি পজিটিভ ছিলেন। অবশেষে চতুর্থবারের পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ ফল এসেছে তার।
ভারতে আরও ৭০৫ : ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন আরও ৪৮ হাজার ৬৬১ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ২০ জুলাই ভারতে শনাক্ত মোট রোগীর সংখ্যা ১১ লাখ পেরিয়েছিল, এরপর ৬ দিনের মধ্যেই সংখ্যাটি ১৪ লাখের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এখন দৈনিক শনাক্তের পরিমাণও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যে টানা চারদিন ৪৫ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে স্পেন ও ফ্রান্সকে টপকে যাওয়া ভারতে আরও ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু মহারাষ্ট্রেই মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৩৮৯ জনের। দিল্লীতে তিন হাজার ৮০৬, তামিলনাড়ুতে তিন হাজার ৪০৯, গুজরাটে দুই হাজার ৩০০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনা। কর্নাটক, উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে মৃত্যু হাজার ছাড়িয়েছে। মহারাষ্ট্রে আক্রান্ত তিন লাখ ৬৬ হাজার ৩৬৮, তামিলনাড়ুতে দুই লাখ ছয় হাজার। কর্নাটকে মোট আক্রান্ত ৯০ হাজার ৯৪২ জন এবং অন্ধ্রপ্রদেশে ৮৮ হাজার ৬৭১ জন।
চীনে ফের বাড়ছে সংক্রমণ : বৈশ্বিক মহামারী করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের মূল ভূখণ্ডে অনেকদিন পর সম্প্রতি কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বেশিরভাগই উপসর্গহীন। এর আগে বেজিংয়ের একটি পাইকারি বাজার থেকে ক্লাস্টার সংক্রমণ শুরু হওয়ায় লাখ লাখ মানুষকে লকডাউন করে রাখা হয়। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, নতুন করে আরও ৩৪ জন করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন যা গত বৃহস্পতিবারের ২১ এবং বুধবারের ২২ জনের চেয়ে বেশি। তারও একদিন আগে মঙ্গলবার দেশটিতে ৩১ জন উপসর্গহীন কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগী পাওয়া যায়। নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ২০ জনই একেবারে পশ্চিমাঞ্চলীয় মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশ শিনজিয়াংয়ের। নয়জন উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় লিয়াওনিং প্রদেশের বাসিন্দা। অপর পাঁচজন বিদেশ থেকে আসা। একদিন আগে উপসর্গহীন রোগী ৪৩ থাকলেও এখন তা ৭৪ জন। গত বছরের শেষ নাগাদ চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহর থেকে মহামারী নোভেল করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। দেশটির সরকারের দেয়া হিসেব বলছে, শুক্রবার পর্যন্ত চীনে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত ৮৩ হাজার ৭৮৪। সুস্থ হয়েছেন ৭৮ হাজার ৮৮৯। আক্রান্তদের মধ্যে চার হাজার ৬৩৪ জন মারা গেছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু : অস্ট্রেলিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানির সংখ্যা। এই নিয়ে দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৫ জনে। একদিনে আরও ৪৫০ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর বেশিরভাগই ভিক্টোরিয়া প্রদেশের। রাজ্যের প্রধান প্রশাসক ড্যানিয়েল এ্যান্ডরুস জানিয়েছেন, মৃতদের বয়স ৪০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে। অস্ট্রেলিয়ায় এর আগে করোনায় একদিনে এত মানুষের মৃত্যু হয়নি। মাত্র ১৪ হাজার আক্রান্ত হয়েছেন।