সংবাদপত্র শিল্প রক্ষায় প্রণোদনার বিকল্প নেই

11

বাংলাদেশের সংবাদপত্র শিল্প করোনার কারণে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে। আর্থিক সংকটে পড়ে কয়েকটি সংবাদপত্র কর্মীদের বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। আঞ্চলিক অনেক সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে গেছে। আগে কখনো সংবাদপত্র শিল্প এ ধরনের সংকটে পড়েনি। করোনার সময়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন কমেছে। অনেক গ্রাহকই ঘরে সংবাদপত্র রাখা বন্ধ করেছেন। কিন্তু এ অবস্থার মধ্যেও মূলধারার সংবাদপত্রগুলো তাদের প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছে। সংবাদপত্র মানুষকে শুধু তথ্যসেবাই দিচ্ছে না, সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত অনেক গুজব ও অসত্য তথ্য প্রচারকেও মোকাবেলা করছে। এই করোনাকালে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তথ্য। আর এই তথ্য সংবাদমাধ্যম সংগ্রহ করে মানুষকে জানায়। এই করোনার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদপত্র শিল্পে জড়িত কর্মীরা জরুরি সেবা দিয়ে চলেছেন। গণমাধ্যম ভালো না থাকলে সরকারের পক্ষে একা করোনা সংকট মোকাবেলা কঠিন হবে। সংবাদপত্র ঠিক না থাকলে সমাজের অগ্রগতি হতে পারে না।
অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব পড়ার পর সরকার বিভিন্ন শিল্প বাঁচাতে প্রণোদনা দিচ্ছে। কিন্তু সংবাদপত্র শিল্পে প্রণোদনা নেই। সরকারের কাছে পত্রিকাগুলোর কয়েক শ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। এই বকেয়া টাকা পরিশোধ হলেও পত্রিকাগুলো কিছুদিন চলতে পারত। কিন্তু সেটাও ছাড় করছে না সরকারি দপ্তরগুলো। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত সংবাদপত্রের বকেয়া বিজ্ঞাপন বিল দ্রুত পরিশোধ করা। আগামী অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করার আগে নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছিল। সংবাদপত্র শিল্পের ওপর করপোরেট কর ১৫ থেকে ১০ শতাংশ করা, নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর মূল্য সংযোজন কর পুরোপুরি বাতিল করা, বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর উৎস কর কমিয়ে ২ শতাংশ করা এবং উৎসস্থলে কাঁচামালের ওপর ৫ শতাংশের বদলে অগ্রিম কর শূন্য শতাংশ করার আবেদন ছিল সেই প্রস্তাবে। এগুলো বিবেচনার দাবি রাখে।
এই দুঃসময়ে বকেয়া পরিশোধ করলে সেটাই হতে পারত বড় প্রণোদনা। ব্যাংকসহ বেসরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে সংবাদপত্র টিকতে পারবে না। তাই সংবাদপত্রের জন্যও তাদের উদ্যোগ বা প্রণোদনার বিকল্প নেই। সেই প্রণোদনা কী হতে পারে? মিডিয়াবান্ধব সরকার এই সংকটকালে সংবাদপত্র শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।