অর্থনৈতিক অর্জন ধরে রাখার প্রচেষ্টা

11

করোনার কারণে সারা বিশ্ব আজ চরম সংকটে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। তার পরও থামানো যাচ্ছে না সর্বনাশা এই ভাইরাসকে। অন্যদিকে সংক্রমণ রোধে নানা ধরনের উদ্যোগের কারণে কার্যত সারা বিশ্বই আজ এক ধরনের লকডাউনে আবদ্ধ। বন্ধ হয়ে গেছে শিল্প, কলকারখানাসহ বিভিন্ন সেবা খাত। বিভিন্ন দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ বিশ্ব বাণিজ্যে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিরও আজ বিপর্যস্ত অবস্থা। অর্থনীতিবিদরা নজিরবিহীন অর্থনৈতিক মন্দা নেমে আসার আশঙ্কা করছেন। বাংলাদেশও এমন বিপর্যয়কর অবস্থার বাইরে নয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের উদীয়মান বেসরকারি খাত, বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলো। দ্রুত কমে যাচ্ছে রপ্তানির আদেশ। স্থায়ীভাবে বাজার হারানোর শঙ্কাও রয়েছে। তার ওপর লকডাউনের কারণে বন্ধ রয়েছে উৎপাদন। আয় না থাকলেও রয়েছে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, বাড়িভাড়া, ঋণের সুদসহ বিভিন্ন পরিচালনা ব্যয়। এই অবস্থায় অনেক শিল্প-কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর তাতে বেকার হয়ে পড়তে পারে লাখ লাখ শ্রমিক। তাই আসন্ন বিপর্যয় রোধে এখন থেকেই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
প্রায় সব দেশেই শিল্প-কারখানা তথা অর্থনীতি রক্ষায় ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে দুই ট্রিলিয়ন ডলারের বিশেষ অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশও এক লাখ কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কিন্তু পরিস্থিতির ভয়াবহতার তুলনায় তা মোটেও যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করছেন, প্রণোদনা প্যাকেজের পাশাপাশি নীতি-সহায়তা বাড়ানো জরুরি। ব্যবসায়ী নেতারা ও ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে এ ব্যাপারে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আছে আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত রাখা। জানা যায়, কিছু ব্যাংক ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখলেও চক্রবৃদ্ধি হারে ঋণের ওপর সুদ আরোপ করছে। এ সময়ে ঋণের ওপর এমন সুদ আরোপ আত্মঘাতী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্যবসায়ী নেতারা মনে করছেন, শিল্প-কারখানা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সমন্বিত ও পরিকল্পিত উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। মূলধন হারিয়ে শিল্প-কারখানা যেন বন্ধ হয়ে না পড়ে সে জন্য সহজ শর্তে মূলধন জোগানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। চলতি মূলধনের প্রয়োজন মেটাতে প্রয়োজন অনুযায়ী সুদবিহীন ঋণ সরবরাহের উদ্যোগ নিতে হবে।
অনেক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। অগ্রগতির এই ধারা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। করোনা সংকট যেন কোনোভাবেই আমাদের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত না হয়ে পড়ে সে জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে।