করোনায় চা-শ্রমিক সন্তানের মৃত্যুতে চা-শ্রমিক সংঘের ক্ষোভ

8

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চন্ডিছড়া চা-বাগানের ৫ বছরের এক শিশুর মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করার সাথে সাথে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক রাজদেও কৈরী ও যুগ্ম-আহবায়ক হরিনারারায়ন হাজরা এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যেও দেশের ১৬৬ টি চা-বাগানের প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার চা ও রাবার শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে মজুরি-রেশনসহ সকল শ্রমিকদের ছুটি প্রদান করার দাবি জানিয়ে বলেন গত ২৬ মার্চ হতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গিয়ে ইতোমধ্যে দেশের অধিকাংশ জেলায় লকডাউন চলছে। সরকার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনগণকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দিচ্ছেন, এমন কি ১৬ এপ্রিল হতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও সারাদেশকে করোনা সংক্রমণের ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। গত ৪ এপ্রিল চা-বাগান সংলগ্ন রাজনগর উপজেলার টেংরাবাজারে একজন মুদিদোকানী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া ১৯ এপ্রিল জুড়ী উপজেলার সাগরনাল চা-বাগানে একজন করোনা উপসর্গ নিয়ে একজন মৃত্যুবরণ করলে তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। আর ২৫ এপ্রিল হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চন্ডিছড়া চা-বাগানের ৫ বছরের এক শিশু সিলেটের করোনা হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। তাছাড়া ইতোমধ্যে চা-বাগান অধ্য্যুষিত শ্রীমঙ্গল, রাজনগর, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার উপজেলাসহ সমগ্র হবিগঞ্জ জেলায় ব্যাপকভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া সিলেটেও করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে চা ও রাবার শ্রমিকদের আন্দোলন ও দাবি উপেক্ষা করে মালিকগোষ্টি তাদের অতি মুনাফার মানসে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করাচ্ছেন, যার কারণে করোন ভাইরাসের চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন ১০ লক্ষ চা-শ্রমিক জনগোষ্টি। মালিকদের স্বার্থরক্ষাকারী সরকারও শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করছেন না। চা-বোর্ড বাগান খোলার রাখার প্রেক্ষিতে স্বাস্থবিধি সংক্রান্ত নির্দেশনা জারী করলেও অধিকাংশ বাগানে তা না মেনেই কাজ করানো হচ্ছে। বলা বাহুল্য চা ও রাবার জীবনরক্ষাকারী এমন কোন জরুরী পণ্য নয় যে এই দুর্যোগের মুহূর্তেও উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। উপরন্তু চলতি বছর দেরিতে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় চা উৎপাদনের মৌসুমও দেরিতে শুরু হয়েছে, তাই চা শ্রমিকদের ছুটি প্রদান করলে মালিকদের আর্থিক ক্ষতিও খুব বেশি হবে না। প্রধানমন্ত্রী অনেকের জন্য কমবেশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, প্রণোদনা, ঝুঁকি ভাতা, স্বাস্থ্যবীমার ঘোষণা দিলেও চা ও রাবার শ্রমিকদের বিষয়ে রাষ্ট্র ও সরকারের নিরবতা বড়ই দুর্ভাগ্যজনক। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের চতুর্থস্তরে বাংলাদেশ প্রদান করেছে উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন চা-শ্রমিকরা কোলনীতে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ২২২ বর্গফুটের বাসাতে গাদাগাদি করে ৭/৮ জন বসবাস করেন, তাই চা-শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে এখনই যদি কঠোরভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিবে। যেখানে চা-শ্রমিকরা বসবাসের জন্য ন্যূনতম মাথা গোঁজার জন্য প্রাণাতিপাত করতে হয় সেখানে কোয়ারান্টাইন বা আইসোলেশনের কথা তো ভাবাই যায় না। এরকম পরিস্থিতিতে অবিলম্বে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করে মজুরি-রেশনসহ সকল চা ও রাবার শ্রমিকদের অবিলম্বে ছুটি প্রদানের জন্য জোর দাবি জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তি