আদালতে রাতুলের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান ॥ বিশ্বনাথে লজিং বাড়ির পুত্রকে ব্ল্যাকমেইল করতে গিয়ে খুন হন গৃহশিক্ষক লায়েছ

5

স্টাফ রিপোর্টার :
বিশ্বনাথ উপজেলার সদর ইউনিয়নের পুরাণ সিরাজপুর গ্রামের গৃহকর্তার সেলিম মিয়ার কিশোর পুত্র আশফাক আহমদ রাতুলকে (১৬) ব্ল্যাকমেইল করতে গিয়ে খুন হন গৃহশিক্ষক লজিং মাস্টার (গৃহশিক্ষক) মাদ্রাসা ছাত্র হাফিজ আবদুর রহমান নূরুল আমীন উরফে লায়েছ। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বুকে, পেটে ও পায়ে একাধিক আঘাত করে খুন করা হয়।
সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মাহবুবুর রহমান ভূইয়ার আদালতে শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সকালে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আশফাক আহমদ রাতুল। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের পর তাকে সিলেট বাঘবাড়ীস্থ কিশোর সংশোধনাগারের প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম মূসা। ওসি শামীম মূসা জানান, আটকের পর আশফাক আহমদ রাতুল পুলিশের কাছে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে বলে, তাকে দীর্ঘদিন ধরে ব্লাকমেইল করে আসছিলেন লজিং মাস্টার আবদুর রহমান নূরুল আমীন উরফে লায়েছ।
তিনি রাতুলের নাম ও ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে একাধিক ফেইক আইডি খুলে তাদের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের কাছে অশ্লীল ছবি পাঠিয়ে তাকে (রাতুল) ব্লাকমেইল করতে থাকেন লায়েছ। এই ব্লাকমেইল থেকে রেহাই পেতে লায়েছকে প্রায় ২০ হাজার টাকা দেয় রাতুল। সর্বশেষ তার কাছে আরো ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন লায়েছ। এনিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে হাতাহাতি-মারামারির ঘটনাও ঘটে। এব্যাপারে নিজ পরিবারের কাছে রাতুল বিচার প্রার্থী হলেও পরিবারের লোকজন উল্টো মাদ্রাসা ছাত্র লায়েছের পক্ষাবলম্বন করেন। এতে লায়েছের উপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে রাতুল। একপর্যায়ে লায়েছকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় রাতুল এবং বিভিন্ন ক্রাইম সিনেমা দেখে সে পরিকল্পনা করতে থাকে।
গত বুধবার (৮ এপ্রিল) দিবাগত মধ্যরাতে জরুরী আলাপের কথা বলে লায়েছের কক্ষে প্রবেশ করে রাতুল। এসময় লায়েছ প্রস্রাব করার জন্য ঘরের বাহিরে গেলে রাতুল তার সঙ্গে থাকা ধারালো ছুরিটি বিছানার নিচে লুকিয়ে রাখে। কিছুক্ষণ পর লায়েছ কক্ষে ফিরলে তার সঙ্গে আলাপ শুরু করে রাতুল। এসময় পূর্বের পকিল্পনা মতো নিজেকে সুরক্ষিত রেখেই ধারালো ছুরি দিয়ে লায়েছের বুকে, পেটে ও পায়ে একাধিক আঘাত করে রাতুল। এক পর্যায়ে লায়েছ গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে ছুরিটি ঘরের বাহিরের ঝোপঝাড়ে ছুড়ে ফেলে দেয় রাতুল এবং সে চিকিৎকার করে বাড়ির লোকজনকে জড়ো করে বলতে তাকে কেউ একজন লায়েছকে মেরে পালিয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন গুরুত্বর আহত অবস্থায় নুরুল লায়েছকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়।
এঘটনার পরই আশফাক আহমদ রাতুল ও তার পিতা (বাড়ির গৃহকর্তা) সেলিম মিয়াকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে থানা পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে আশফাক আহমদ রাতুল এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করে পুলিশ। এঘটনায় নিহতের ছোটভাই নজরুল ইসলাম উরফে এলাইছ মিয়া বাদি হয়ে আশফাক আহমদ রাতুলকে আসামী করে বৃহস্পতিবার বিশ্বনাথ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৮ (তাং ৯.০৪.২০ইং)।
নিহত হাফিজ আব্দুর রহমান নূরুল আমীন উরফে লায়েছ বিশ্বনাথ দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার আলীম পরীক্ষার্থী ছিল ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীরামসী গ্রামের মৃত সজ্জাদ আলীর পুত্র। তিনি দীর্ঘ প্রায় চার বছর ধরে বিশ্বনাথ উপজেলার পুরাণ সিরাজপুর গ্রামের সেলিম মিয়ার বাড়ীতে লজিং থাকতেন। সম্প্রতি লজিং পরিবর্তনের জন্যে তার সহপাঠী ও শিক্ষকদের সহায়তা চেয়ে ছিলেন তিনি। শবে বরাত শেষে ওখান থেকে অন্যত্র চলে যাবার কথা ছিলো তার।