প্রয়োজনে ‘শাটডাউন’ হতে পারে

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মানুষকে বাঁচাতে প্রয়োজন অনুযায়ী সব ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একথা বলেন।
অন্য দেশের মতো ‘শাটডাউন’ করার সরকারের প্রস্তুতি আছে কি না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন শাটডাউন প্রয়োজন হলে করা হবে, যেখানে যেখানে প্রয়োজন। কারণ এখানে সবার আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে। ভাইরাসটির ছড়ানো ঠেকাতে আন্তঃজেলা যাত্রী পরিবহন বন্ধের বিষয়ে জানতে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, যাত্রী কমে যাওয়ায় এমনিতেই মালিক-শ্রমিকরা হতাশ। এগুলোতো অটোমেক্যালি কমে যাবে, পরিস্থিতি কমিয়ে ফেলবে। তারপরও যদি প্রয়োজন হয়, আমরা সেটা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
সকালে মন্ত্রীর ব্রিফিংয়ের পর বিকেলে যোগাযোগ করা হয় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি কার্যালয়ে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, করোনা আতঙ্কে সারাদেশে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এমন গুজব চলছে। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেইনি। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে যদি পরিবহন চলাচল বন্ধ করতে হয় তাতে তো আপত্তির কিছু নেই। অবশ্যই আমরা এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেব। সরকার যখন বলবে তখন আমরা যানবাহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেব।
তিনি বলেন, যাত্রী ও চালকের নিরাপত্তার স্বার্থে ইতোমধ্যে মালিক সমিতি ঢাকার চারটি টার্মিনাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি নগরীতে চলা সকল বাস পরিষ্কার রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনা রোধে সকলকে সচেতন হওয়ার তাগিদ দেন তিনি। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, পুরো টার্মিনালজুড়ে মাত্র চারজন পরিচ্ছন্ন কর্মী। তাদের দু’জন জটিল রোগে আক্রান্ত। যে কারণে টার্মিনাল পরিচ্ছন্ন রাখা কঠিন হচ্ছে। যাত্রী ও শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ও করোনা রোধে প্রতিটি টার্মিনালে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী নিয়োজিত রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে কোয়ারেন্টাইনে না থেকে বিদেশ ফেরতদের অবাধে ঘুরে বেড়ানো ঠেকাতে কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে কি না এবং কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য ও বিমান মন্ত্রণালয়ের কোন ব্যর্থতা দেখছেন কি না সাংবাদিকরা মন্ত্রীর কাছে তাও জানতে চান।
জবাবে কোয়ারেন্টাইনের বিষয়ে ‘সরকারীভাবে কঠোরভাবে নজর’ দেয়া হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমেরিকার মতো বিরাট শক্তি, আমি সিএনএন এ দেখলাম, তাদের বিভিন্ন এয়ারপোর্টে স্ক্রিনিং ব্যবস্থায় যথেষ্ট বিশৃঙ্খলা দেখা গিয়েছিল।
আমাদের তো অভিজ্ঞতা নেই, আমরা ভুল থেকে শিক্ষা নিচ্ছি এবং এ বিষয়ে আরও নিজেরা শক্তিশালী হয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
টেস্টিং কিট ও ফেইস মাস্কের সঙ্কট মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের কথা না বললেও চেষ্টার কোন ঘাটতি নেই বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। বলেন, যেখানে যেখানে সঙ্কট আছে সেগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা হচ্ছে। আশা করি টেস্টিংয়ে কীটের কোন সমস্যা হবে না। সারাবিশ্বের জন্য এটি নতুন অভিজ্ঞতা। মানসিকভাবে আমরা ওয়েল ইক্যুয়িপড। এটা একটা বড় শক্তি। যে ইক্যুয়িপমেন্ট দরকার তার যে ঘাটতি সেটি পূরণের চেষ্টা করছি। ঘাটতি পূরণে আন্তরিকতার ঘাটতি নেই।
করোনাভাইরাসের মহামারী ঠেকিয়ে আনতে সন্দেহভাজন রোগীদের পরীক্ষার কোন বিকল্প নেই মলে মন্তব্য করেছে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা। একই সঙ্গে সঙ্কট কাটাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের উৎপাদন বাড়াতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সোমবার সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস। তার বক্তব্যে কথা একটাই ছিল, টেস্ট এ্যান্ড টেস্ট, তিনবার এটি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন টেস্টের ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত, আমরাও সেটি অনুসরণ করে এগিয়ে যাব।
এর আগে থেকে বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষায় কিটসহ সরঞ্জাম সঙ্কটের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসে। জানা গেছে, এসব সরঞ্জাম সরবরাহকারী অন্যতম দেশ হলো চীন। যেখান থেকে করোনার উৎপত্তি। ফলে দেশটি পণ্য উৎপাদনে ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছে। যদিও আস্তে আস্তে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রথম আক্রান্ত দেশটি।
ভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে জমায়েতের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে কাদের বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সভা-সমাবেশে যাব না। যে কারণে বঙ্গবন্ধুর জন্ম উৎসবে অনুষ্ঠান সীমিত করেছি, জনগণের উপস্থিতির দিক থেকেও অনেক সীমিত করেছি।
করোনার যে আতঙ্কের, যাতে সামনের দিনে আর বাড়তে না পারে সে বিষয় সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করব। সব ধরনের গোষ্ঠী চেতনা-চিন্তার উর্ধে করোনা মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধভাবে করতে হবে।
সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, করোনা প্রতিরোধে সরকারীভাবে কঠোর নজর দেব। সাংবাদিকরাও সঠিক রিপোর্ট করবেন। এখানে প্রাণ বাঁচানোর বিষয়। প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। এখানে রাজনীতি না করে সব রাজনৈতিক দলের কাছে অনুরোধ, করোনা অভিন্ন শত্রু, কোন পলিটিক্স না করে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের শত্রু করোনা ভয়ঙ্কর। আমরা জাতি হিসেবে গতকালও প্রমাণ করেছি ভয়ঙ্কর করোনার যে শক্তি তার চেয়েও বড় শক্তি আমাদের সম্মিলিত শক্তি। এ যুদ্ধের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী। এটা প্রতিরোধযোগ্য। আমরা এটি পরাজিত করতে পারব বলে আশা করছি।