বিদেশ গমনে নিবন্ধন

12

বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে সুখবর। দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াই কর্মী হিসেবে সরকারিভাবে বিদেশ যেতে আগ্রহীদের দেশব্যাপী নিবন্ধন শুরু হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) কেন্দ্রীয় ডাটা ব্যাংকে এ নিবন্ধন কর্মসূচি শুরু হবে। দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক দক্ষ, স্বল্প দক্ষ, অদক্ষ ও পেশাজীবী নারী-পুরুষ অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন। আগ্রহীরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২০০ টাকা পাঠিয়ে এ নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারবেন।
কয়েক বছর আগে মালয়েশিয়ায় জিটুজি পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে এই নিবন্ধনপ্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। সেবার একজন কর্মী বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে অবস্থান করেও বিএমইটি কর্তৃক পরিচালিত নিবন্ধনকরণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে সক্ষম হয়েছিল। নিবন্ধিত কর্মীদের ক্রম স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এমনভাবে সাজানো হয়েছিল, যাতে নিয়োগের সময় সব জেলার কর্মীরা ন্যায়সংগত সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা কুয়ালালামপুরে ডাটা ব্যাংকে প্রবেশাধিকারপ্রাপ্ত মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের চাহিদাপত্র জমা দিতেন। প্রয়োজনীয় যাচাইয়ের পর মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিকদের বাছাই করে কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে আমাদের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে তালিকাটি পাঠিয়ে দিত। মেডিক্যাল ফিটনেস, ভিসা, বিমান টিকিট ইত্যাদি প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ নির্বাচিত কর্মীদের কুয়ালালামপুর পাঠিয়ে দিত।
একদিকে ভোগবিলাস ও প্রাচুর্যের হাতছানি; অন্যদিকে জীবনের রূঢ় কঠিন বাস্তবতার কারণে কিছু মানুষ জীবন বাজি রেখে বেঁচে থাকার উপায় খোঁজে। দালালের খপ্পরে পড়ে পাড়ি জমায় বিদেশে। আর তার মূল্যও দিতে হয়েছে বহু মানুষকে। নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে জিটুজি পদ্ধতিতে বিদেশে কর্মী পাঠানো গেলে একদিকে যেমন কর্মীদের ব্যয় কমবে, তেমনি প্রতারিত হওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকবে না। দালালচক্রের প্রতারণার খপ্পরে পড়তে হবে না কাউকে। এর পাশাপাশি আমাদের নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করতে হবে। দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে হবে। শ্রমশক্তি হিসেবে বিদেশ গমনেচ্ছুদের বিদেশি ভাষায় পারদর্শী করে তোলা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সঠিক প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। সব কর্মক্ষেত্র সবার জন্য উন্মুক্ত না হলেও দক্ষ জনশক্তি নিজ নিজ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে নিতে পারে। বিকাশমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাই জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। দেশের কর্মক্ষম তরুণ শ্রমশক্তি এই নিবন্ধনপ্রক্রিয়ায় অংশ নেবে এটাই প্রত্যাশিত।