আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো…

26

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বায়ান্নর রক্তক্ষরা দিনগুলো ইতিহাসের পাতায় পাতায় সোনার অক্ষরে লেখা। জাতির ভাষা কেড়ে নেয়ার চক্রান্ত প্রতিরোধ করতে ছাত্র-জনতা এক সঙ্গে রাজপথে নেমে আসে। ভাষার প্রশ্নে রাজপথ বুকের রক্তে রঞ্জিত করে বীর বাঙালি পৃথিবীর ইতিহাসে স্থান করে নেয়। মাতৃভাষা বাংলাকে যে কোন মূল্যে রক্ষার জন্য রাজপথে পাকি শাসকগোষ্ঠীর বন্দুকের নলের মুখে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেন বীর বাঙালি। সেদিন অনেক শহীদের রক্তে ভিজে লাল হয়েছিল ঢাকার কালো পিচঢালা রাজপথ। ভাষার জন্য একমাত্র বাঙালি জাতিই রাজপথে রক্ত দিয়েছে।
বদরুদ্দীন উমরের লেখা ‘পূর্ববাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি-১’ খন্ডে বলেছেন, ভাষা নিয়ে প্রথম রাজনৈতিক সংগ্রাম গণপরিষদে ভাষা বিষয়ক প্রস্তাব উত্থাপনের মধ্য দিয়ে। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। এই অধিবেশনে বিরোধী দল দুটি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করে। প্রথম প্রস্তাবে বছরে অন্তত একবার ঢাকায় গণপরিষদের অধিবেশন করতে হবে। দ্বিতীয় প্রস্তাব ছিল ভাষা বিষয়ক। এটিতে উর্দু ও ইংরেজীর সঙ্গে বাংলাকেও গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে ব্যবহারে দাবি উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন পূর্ব বাংলার প্রতিনিধি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ব্যক্তিগতভাবেই এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বদরুদ্দীন উমরকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন, ‘বাংলাভাষা’ আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা হোক তাই ছিল আমার প্রস্তাব। আমার পার্টির প্রস্তাব ছিল বলেন না। পরে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের এই প্রস্তাব কংগ্রেসের সমস্ত সদস্যই সমর্থন করেন। কয়েকজন সপক্ষে বক্তৃতা দেন। প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবটি ২৪ ফেব্রুয়ারি আলোচিত হয়, তমিজুদ্দীন খান এর বিরোধিতা করার পর পরিষদে তা বাতিল হয়ে যায়। ভাষা বিষয়ক দ্বিতীয় প্রস্তাবটি আলোচিত হয় অধিবেশনের তৃতীয় দিন। সেদিন ভাষা নিয়ে আলোচনাকালে গণপরিষদে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উত্থাপিত প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান। লিয়াকত আলী বলেন, এখানে এ প্রশ্নটা তোলাই ভুল হয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটি জীবনমরণ সমস্যা। আমি অত্যন্ত তীব্রভাবে এই সংশোধনী প্রস্তাবের বিরোধী আশা করি এ ধরনের একটি সংশোধনী প্রস্তাব গণপরিষদ অবশ্যই অগ্রাহ্য করবে।