কমলগঞ্জে গাইড বই বিক্রি জমজমাট, ঝুঁকে পড়ছে শিক্ষার্থীরা

7

পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে নিষিদ্ধ গাইড বই নিয়ে জমজমাট বাণিজ্য চলছে। নিষেধাজ্ঞার পরও লাইব্রেরীগুলোতে শোভা পাচ্ছে বহুজাতিক প্রকাশনীর নিষিদ্ধ গাইড বই। প্রশাসন ও আইনের তোয়াক্কা না করেই দেদারছে গাইড বই বিক্রি হচ্ছে লাইব্রেরী গুলোতে। সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে বছরের শুরু থেকে মাঠে নেমেছে দালালচক্র। প্রকাশনী সংস্থাগুলোও বিদ্যালয় বা শিক্ষকদের নানা রকম সুবিধা দিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে গাইড ও নোট বই তুলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের নামিদামী লাইব্রেরীগুলোতে শোভা পাচ্ছে মানহীন নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন লিমিডেট, অনুপম প্রকাশনী, প্রাইম পাবলিকেশন, পপি পাবলিকেশন, লেকচার পাবলিকেশন, গ্যালাক্সি, নিউটন পাবলিকেশন, কমপক্ষে দু’ডজন পাবলিকেশন মাঠে টাকা ছড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বিদ্যালয়ে ছুটছেন নিষিদ্ধ গাইড সরবরাহকারী প্রকাশনাগুলোর প্রতিনিধি। তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নানা সুযোগ-সুবিধাসহ উৎকোচ দিচ্ছে। আর শিক্ষকরাও নোট ও গাইড বই কিনতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানা যায়। ছাত্রছাত্রীরাও হুমড়ি খেয়ে পড়ছে এসব গাইড বইয়ে। একই চিত্রও উপজেলার প্রতিটি গ্রামগঞ্জের লাইব্রেরীতে। নিষিদ্ধ হওয়া সত্বেও বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নোট-গাইড বইগুলো বের করছে। আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে অনেক সময় তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। তবে বিক্রেতারা নিজেদের ব্যবসার কথা বললেও অভিভাবকদের দাবী ক্লাসরুমে পাঠ্যবইয়ের পড়া ঠিকমত পড়ানো হলে নোট গাইডের আর কদর থাকতো না।
কয়েকজন শিক্ষাবিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুখস্থ নির্ভর না হয়ে, বুঝে পড়ার জন্য সরকার নোট ও গাইডবই নিষিদ্ধ করেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতও এ নিষেধাজ্ঞার পক্ষে রায় দিয়েছেন। কিন্তু এরপরও দেদারছে বিক্রি হচ্ছে নোট ও গাইড বই। বাজারে মানহীন নোট গাইডের ছড়াছড়ির ফলে বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা মেধাহীন হয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদরা। তারা আইন যথাযথভাবে প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত নোট-গাইড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তা ছাড়া সরকার বিনা মূল্যে গ্রামার ও ব্যাকরণ বইও দিচ্ছে। তাই আলাদাভাবে গ্রামার ও ব্যাকরণ বই কেনার কোনো প্রয়োজন নেই। নোট ও গাইড ব্যবসা বহু বছর ধরে চলে এলেও বর্তমানে সৃজনশীল পদ্ধতির জন্য তা আরো বেড়ে গেছে। এই পদ্ধতিতে পাঠদানে শিক্ষকেরা যথেষ্ট দক্ষ নন বলে শিক্ষার্থীদের নোট ও গাইডের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর লাভবান হচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বই ব্যবসায়ী বলেন, নোট ও গাইড প্রকাশ না হলে আমরাও বিক্রি করতাম না। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো বের করায় আমরাও বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, অনেক সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পছন্দের প্রকাশনীর এসব নোট ও গাইড আমাদের আনতে বলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন,শিক্ষার্থীরা গাইড ও নোট বইয়ের উপর এমন ভাবে নির্ভর হয়েছে যে, মূল পাঠ্য বইয়ের উপর একেবারে অনিহা প্রকাশ করছে যা শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নের উপর হুমকি স্বরূপ। শিক্ষাবিদরা বলছেন, নিষিদ্ধ থাকার পরেও নোট-গাইড বিক্রি চলছে। এটি খুব খারাপ। বাজারে প্রচলিত নোট-গাইডগুলো খুবই নিন্মমানের। এগুলো পড়ে বর্তমান প্রজন্ম মেধাহীন হয়ে পড়ছে। সচেতন মহল মনে করেন শীঘ্রই প্রশাসনিক অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ গাইড বই চিরতরে জব্দ করা উচিত।