বাংলাদেশে ৯ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা পাতা উৎপাদনের রেকর্ড

25

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
বিদেশি কোম্পানি ও সরকারী,ব্যক্তিমালিকানাধীন ছোটবড় মিলিয়ে বাংলাদেশে ১৬২ টি চা বাগান গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে ৯২ টি চা বাগান মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে।
চা সংশ্লিষ্টরা চায়ের বাম্পার ফলন এর কারণ হিসেবে চা-বাগানগুলোতে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত, অনুকূল আবহাওয়া, আর বিশেষ করে পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকা, খরার কবলে না পড়াসহ সর্বোপরি বাংলাদেশ চা বোর্ডের নজরদারিতে এবারও চা উৎপাদনে নতুন করে রেকর্ড করেছে।
দেশের চা-শিল্পের ১৬৫ বছরের ইতিহাসে চলতি চা উৎপাদন মৌসুমে (২০১৯) অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের মাধ্যমে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ চা-শিল্প।
গত (২০১৯) বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রায় ৯৫ মিলিয়ন চা উৎপাদন হয়েছে অথাৎ ৯ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা পাতা। বাংলাদেশ চা বোর্ড চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ মিলিয়ন অথাৎ ৮ কোটি কেজি চা পাতা।
শ্রীমঙ্গল জেমস ফিনলে টি কোম্পানির ভাড়াউড়া ডিভিশনের ডিজিএম ও বাংলাদেশ টি এসোসিয়েশন সিলেট ব্রাঞ্চের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, ‘চায়ের উৎপাদন ভাল হলেও চায়ের ন্যায্য মুল্য পাচ্ছি না। ভারত থেকে নিম্নমানের চা চোরাইপথে বাংলাদেশে আসছে। যা অত্যন্ত নিম্ন মানের খাওয়ার যোগ্য নয়। এতে বাজারে চায়ের কোয়ালিটি খারাপ করছে। এতে চা মালিকরা মূল্য ঠিকমতো পাচ্ছেন না।’ একই কথা জানালেন মৌলভীবাজার হামিদিয়া চা বাগানের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ও শ্রীমঙ্গলস্থ নাহার চা বাগানের পীষুশ কান্তি ভট্টাচার্য্য।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের (পিডিইউ) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. একে এম রফিকুল হক বলেন,আবারও চা উৎপাদনে নতুন করে রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মোট উৎপাদন ছিল ৯০ মিলিয়ন অর্থাৎ ৯ কোটি কেজি চা পাতা । গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের নভেম্বরে ৭৬ মিলিয়ন অর্থাৎ ৭ কোটি ৬০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় এ বছর একই সময়ে ১৪ মিলিয়ন অর্থাৎ ১ কোটি ৪০ লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ বছর চায়ের আভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশে চা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে চা শিল্প।’
বাংলাদেশ চা বোর্ড (বিটিবি) সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চা উৎপাদন মৌসুমে দেশে চা উৎপাদিত হয়েছে ৮২ দশমিক ১৩ মিলিয়ন অর্থাৎ ৮ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার কেজি চা পাতা। যা দেশের চা উৎপাদন মৌসুমের (২০১৮) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড। ২০১৮ সালের চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭২ দশমিক ৩ মিলিয়ন অর্থাৎ ৭ কোটি ২৩ লাখ কেজি চা পাতা। এর আগে ২০১৬ সালে সব রেকর্ড ভেঙে ১৬২ বছরের চা-শিল্পের ইতিহাসে দেশের সর্বোচ্চ চা উৎপাদন হয়েছিল ৮৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন অর্থাৎ ৮ কোটি ৫৫ লাখ কেজি চা পাতা।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের (বিটিবি) উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. মুনির আহমদ বলেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত চায়ের উৎপাদন প্রায় ৯৫ মিলিয়নের ওপরে। এটিই চায়ের ইতিহাসে দেশে সেরা রেকর্ড। চা উৎপাদনে সাফল্যের পেছনে সরকারের নানামুখী দিক নির্দেশনাগুলো সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। ঠিকমতো তদারকি আর কোনো ফ্যাক্টরী থেকে চা যাতে লিকেজ হতে না পারে এবং চা নিলামের বাইরে যাতে বেআইনিভাবে কোথাও বিক্রি না হয়, এগুলোর বিষয়ে কড়া নজরদারি ছিল। বর্তমান সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে চায়ের উৎপাদন ১৪০ মিলিয়নে উন্নীত করতে কাজ করে যাচ্ছে। ’