বিজিবি সদস্যদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী ॥ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কমান্ড মেনে চলবেন

22
পিলখানা সদর দফতরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে বিজিবির মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য উপহার দেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ‘কমান্ড’ মেনে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বিজিবি সদস্যদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘বিজিবি দিবস-২০১৯’ উপলক্ষে বুধবার পিলখানায় সীমান্তরক্ষা বাহিনীর সদর দফতরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সরকার প্রধানের এই আহ্বান আসে। তিনি বলেন, ‘আমার আবেদন থাকবে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কমান্ড মেনে চলবেন। শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন। আপনারা সব সময় নিয়ম নীতি মেনে সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আপনাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।’
প্রায় ১১ বছর আগে পিলখানায় বিদ্রোহ আর নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর নাম, পতাকাসহ অনেক কিছু বদলে যাওয়া এ বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের কোন অসুবিধা হলে সেটা দেখার জন্য তো আমরা আছি।’ সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি যে কোন দুর্যোগে বিজিবি সদস্যরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে অনন্য নজির তৈরি করেছেন, সে কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশে এল, সরকার যখন তাদের আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত যখন নিল, বিজিবি তখন উদ্যোগ নিয়ে তাদের থাকা, রেজিস্ট্রেশন করা, ত্রাণ পৌঁছে দেয়াসহ সব ধরনের দেখাশোনা করেছে অত্যন্ত মানবিকতা আর দক্ষতার সঙ্গে। আপনাদের কাছে আমরা চাই যে আপনারা এই দেশকে ভালবেসে দেশের মানুষের প্রতি কর্তব্য পালন করবেন। দেশ যদি উন্নত হয়, আপনাদের পরিবার পরিজন তারাই উন্নত হবে। এদেশের মানুষই উন্নত হবে। সেই কথাটা সবসময় মনে রাখবেন। আমি আশা করি আপনারা সব সময় দেশপ্রেম, সততা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে এই বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা সমুন্নত রাখবেন।’ সীমান্তে মাদক চোরাচালান, শিশু ও নারী পাচার বন্ধ করার পাশাপাশি অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানোর দায়িত্ব বিজিবি সদস্যরা ‘যথাযথভাবে’ পালন করবেÑ সেই প্রত্যাশা রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই সব সময় এই বাহিনী সুরক্ষিত থাকুক। যেটা জাতির পিতা নির্দেশ দিয়ে গেছেন।’ সীমান্ত রক্ষায় বিজিবির ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ২২৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বারবার এর নাম, পোশাক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু তারপরও আমি বলব বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য, বিশেষ করে আমাদের সীমান্ত রক্ষার জন্য বিজিবির ভূমিকা অপরিসীম।’ একাত্তরে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা সমগ্র বাংলাদেশ পৌঁছে দিতে ডসয়ে জীবন দেয়া তৎকালীন ইপিআর সদস্যদের কথাও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে বিজিবি সদস্যদের ভূমিকা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাহিনীর প্রায় ১২ হাজার বাঙালী সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ২ বীরশ্রেষ্ঠ, ৮ বীর উত্তম, ৩২ বীর বিক্রম এবং ৭৭ জন বীর প্রতীক পদকে ভূষিত হন। এ বাহিনীর ৮১৭ সদস্য মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। ‘আমি তাদের মহান আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে তাদের বিরাট অবদান রয়েছে।’ বিজিবির উন্নয়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে তুলে ধরেন। শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায় করতে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনাও তিনি স্মরণ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিজিবি মহাপরিচালক মোঃ সাফিনুল ইসলামসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।