মামলা জট দূরীকরণে পদক্ষেপ নিন

21

ভুক্তভোগী যেকোনো মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে আদালত। কিন্তু আদালতে গিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না অনেকের। একের পর এক মামলার দিন পড়ে। মামলা যেন শেষই হতে চায় না। সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ হিসাব উল্লেখ করে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর শেষে অধস্তন আদালতে বিচারাধীন ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৬১৮। এর মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন দুই লাখ ২৯ হাজার ৭৭৪টি। পাঁচ বছরের বেশি বিচারাধীন দেওয়ানি মামলার সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি।
পুরান ঢাকার নিম্ন আদালতে বিচারপ্রার্থীদের নিয়ে সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা যাচ্ছে, আদালতে উপস্থিত ফৌজদারি মামলায় বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে আদালতে ঘুরছে। আর দেওয়ানির প্রায় ৭০ শতাংশ মামলা পাঁচ বছরের বেশি বিচারাধীন। দেওয়ানি মামলা এক-দুই যুগ ধরে চলছে এমন সংখ্যাই বেশি। বিশেষ আইনের কিছু মামলা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু ওই বিধানেরও কোনো কার্যকারিতা নেই। নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির হার ৫ শতাংশেও পৌঁছেনি। এ ধরনের ৩৭ হাজার মামলা বিচারাধীন। অন্যদিকে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে সীমাহীন খরচে হাবুডুব খেতে হয় অনেককেই। বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে অনেক পরিবার মামলায় জড়িয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। ব্যয় হয় বিপুল পরিমাণ টাকা। ফৌজদারি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নির্ধারিত দিনে সাক্ষীর উপস্থিতি ও তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের ফল আজও দেখা যায়নি।
সময় ও খরচ কমাতে বিচারিক প্রক্রিয়ায় দেশে দেশে সংস্কার আনা হয়েছে। বিচারকের সংখ্যা বাড়িয়ে নয়, প্রক্রিয়া সংস্কার ও অটোমেশন করেই পরিবর্তন এনেছে সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরে সংস্কারের সাফল্য এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার বিষয়। খরচ কমানোর উদ্যোগ আছে যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডসসহ ইউরোপের দেশগুলোতেও। অবশ্য গত শনিবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন ২০১৯-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিচার বিভাগের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন সরকারের ই-জুডিশিয়ারি কার্যক্রম চালুর পদক্ষেপের কথা। আমরা আশা করি, মামলাজট কমিয়ে আনা ও দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিচার বিভাগও দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।