ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রামে ট্রেন চলাচল শুরু, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রী কম ॥ নিহতদের মধ্যে ৮ জন হবিগঞ্জ ও চুনারুঘাটের

27

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কসবা এলাকার মন্দবাগ রেলস্টেশনে দু’টি ট্রেনের মুখামুখি সংঘর্ষে অনন্ত ১৬ যাত্রী নিহত হওয়ার ৮ ঘন্টার পর লাইন সংস্কার শেষে সিলেটের সাথে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার পর থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো: আফছার উদ্দিন।
গতকাল সন্ধ্যার দিকে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো: আফছার উদ্দিনের সাথে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, দুপুরের পর থেকে ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-চট্টগ্রামের সকল ট্রেন সিলেট থেকে ছেড়ে গেছে। তবে অন্যদিনের তুলনায় মঙ্গলবার সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন যাত্রীদের সংখ্যা কম ছিল। টিকেট কাউন্টারে তেমন একটা ভিড় ছিল না। ট্রেন দুঘর্টনার খবর পেয়ে অনেক যাত্রী আতংকে ট্রেন ভ্রমন করছেন না। তিনি বলেন, নিহত হওয়া অধিকাংশ যাত্রী সিলেট থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যান। এর মধ্যে নিহত ৮ জনের পরিচয় সনাক্ত করা গেছে। তারা হবিগঞ্জ ও চুনারুঘাটের বাসিন্দা।
নিহতরা হচ্ছেন- হবিগঞ্জ শহরতলীর আনোয়ারপুরের আলী মো. ইউনুছ (৩০), বহুলা গ্রামের আলমগীর আলমের পুত্র ইয়াছিন আলম (১২), চুনারুঘাট উপজেলার উলুকান্দি পশ্চিম তালুকদার বাড়ির ফটিক তালুকদারের পুত্র রুবেল তালুকদার (২২), একই উপজেলার পীরেরগাঁওয়ের আব্দুল হাসিমের পুত্র আশিকুর রহমান সুজন (২৪), বানিয়াচং উপজেলার মর্দন মুরত গ্রামের ইউসুফ মিয়ার পুত্র আল আমিন মিয়া (৩৪) ও একই উপজেলার টাম্বলী টুলা গ্রামের সোহেল মিয়ার মেয়ে আদিবা আক্তার সোহা (২) ও চুনারুবাগ উপজেলার আহমদাবাদ গ্রামের পেয়ারা বেগম (৬৫)। অপর একজনে নাম পরিচয় জানা যায়নি এবং আহতরা হচ্ছেন- লাখাই উপজেলার বুল্লা গ্রামের রফিক মিয়ার পুত্র আলমগীর মিয়া (৪০), নবীগঞ্জ উপজেলার মাঠবাজার গ্রামের মোজাম্মেল হকের পুত্র লোকমান মিয়া (২২), লাখাই উপজেলার বুল্লা এলাকার আদম আলীর পুত্র মুখলেছ মিয়া (৪৩), নবীগঞ্জ উপজেলার আতিক মিয়ার কন্যা আফসারা আক্তার (১৪), একই উপজেলার আনোয়ার হোসেনের কন্যা আসমা আক্তার (২৪), বানিয়াচং উপজেলার আলফু মিয়ার পুত্র আসিক মিয়া (৩২), নবীগঞ্জ উপজেলার আনোয়ার হোসেনের পুত্র উহুল হোসেন (১), চুনারুঘাট উপজেলার ফরিদ মিয়ার পুত্র রাজন মিয়া (২৮), বানিয়াচং উপজেলার সাধর দাসের পুত্র সুব্রত দাস (৪৫), নবীগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর এলাকার চুনু মিয়ার পুত্র আনোয়ার মিয়া (৩৩), বনিয়াচং উপজেলার খেজুর মিয়ার পুত্র রায়হান মিয়া (২০), চুনারুঘাট উপজেলার শহীদ মিয়ার পুত্র জনি আহমেদ (২৪), বানিয়াচং উপজেলার মুছা মিয়ার কন্যা মীম আক্তার (৭), একই উপজেলার সুহেল মিয়ার স্ত্রী নাজমা বেগম (৩০), সদর উপজেলার বাগলখাল গ্রামের আছকির মিয়ার পুত্র ধলাই মিয়া (৬৫), মখা কালিশপুর গ্রামের মনজব আলীর পুত্র রাকি হোসেন (২৮), বানিয়াচং উপজেলার দীঘলবাগ গ্রামের মনোয়ার উদ্দিনের পুত্র হাসান আলী (৭০) ও সদর উপজেলার নারায়নপুর এলাকার সুনা উল্লাহর পুত্র আবুল কালাম (৫২)। অপর আহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
স্টেশন মাস্টার আরো বলেন, প্রতিদিনের মতো গত সোমবার রাত পৌনে ৯টা ২০ মিনিটে ১৬টি বগিতে ৮৪০ জন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় উদয়ন এক্সপ্রেস ৭২৪ নং ট্রেনটি। ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এলাকার মন্দবাগ রেলস্টেশনে রাত পৌনে ৩ টার দিকে পৌঁছালে চট্রগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকামুখী ‘তূর্ণা নিশীথা’র সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে তূর্ণা নিশীথা ৩টি বগি উদয়ন ট্রেনের উপরে উঠে যায় এবং উভয় ট্রেনের বগি ও চাকাগুলো আশপাশ স্থানে লাইন থেকে ছিটকে ছঁড়িয়ে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে শিশুসহ নিহত হওয়া ১৬ যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। দুঘর্টনায় আরো শতাধিক ট্রেন যাত্রী আহতের হওয়ার শংঙ্কা করা হচ্ছে। তাদেরকে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।
কিভাবে এতবড় একটা দুঘর্টনা ঘটলো এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে আগে প্রবেশ করে ট্রেনটি ‘লোপ’ লাইনে ঢুকছে। এমন সময় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ‘তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস’-৭৪১নং ট্রেনটি তিনটি সিগন্যাল অমান্য করে। তখন অন্যান্য যাত্রীদের সাথে ‘তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস’র ট্রেন চালকও গুরুতর আহত হন। তবে এত বড় দুঘর্টনা থেকে আমরা ধারনা করছি ওই ট্রেন চালক এসময় পুরোপুরি ঘুমিয়ে ছিলেন।
তিনি বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭ টায় ঢাকা-সিলেট কালনী, সকাল ৮টা ৪০মিনিটে ঢাকা-সিলেট জয়ন্তিকা, সকাল ১০টায় সিলেট-চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে যথারীতি ছেড়ে গেছে। এবং অন্যান্য ট্রেনগুলো সিলেট এসে পৌছেছে। প্রতিটি ট্রেন আর্ধ ঘন্টা গন্তব্যস্থানে পৌছতে বা ছেড়ে যেতে দেরি হয়েছে। তবে চলাচল করা ট্রেনগুলোর সিডিউল বির্পজয় হয়নি।
গতকাল রাতের চট্টগ্রামের ট্রেন যাত্রী অরুণ বাবু এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি গত কয়েকদিন পূর্বে নগরীর কালিঘাট এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। তখন রির্টান মঙ্গলবারের ট্রেনের টিকেটও করে নিয়েছিলেন। এখন প্রায় যথা সময়ে ট্রেনটি ছেড়ে যাবে না। তাই ভাবছি বাস গাড়ী দিয়ে যাব।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের টিকেট কাউন্টারের মাসুদ সরকার জানান. অন্যদিনের তুলায় ট্রেনের টিকেট কম বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ভিড়ও অনেকটা কম।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, উদয়নের কোচগুলো বেশ পুরনো। এ কারণে দুর্ঘটনায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এ দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে তূর্ণা নিশীথার চালকের সিগন্যাল অমান্য করাকেই প্রাথমিকভাবে দায়ী করছেন রেল কর্মকর্তারা। মন্দবাগ রেলস্টেশনের মাস্টার জাকির হোসেন চৌধুরী জানান, আউটার ও হোম সিগন্যালে সর্তক সংকেত লাল বাতি ছিল। কিন্তু তূর্ণা নিশীথার চালক সিগন্যাল অমান্য করে ঢুকে পড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। একই কথা বলেছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সাংকেতিক ও যোগাযোগ প্রকৌশলী অসীম কুমার তালুকদার। তিনি বলেন, তূর্ণা নিশীথা সিগন্যাল অমান্য করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া, তূর্ণার ইঞ্জিন সরাসরি উদয়ন ট্রেনের পেছনের তিনটি কোচে আঘাত করে। এতে কোচগুলো দুমড়ে-মুচড়ে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে।