বিশ্বনাথে পপি আত্মহত্যার মামলা ॥ গণধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে দুই ধর্ষকের জবানবন্দি

7
বিশ্বনাথে গণধর্ষণ মামলার আসামী জাহাঙ্গীর আলম ও আসামি বারিক মিয়া।

জাহাঙ্গির আলম খায়ের বিশ্বনাথ থেকে :
গণধর্ষণ মামলার মাত্র ১০দিনের মাথায় বিশ্বনাথে চাঞ্চ্যলকর পপি গণধর্ষণের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি জাহাঙ্গির আলম (৩৫) ও বারিক মিয়া (৩৭) গণধর্ষণের দায় স্বীকার করেছে। দীর্ঘ ৮দিন রিমান্ডে থাকার পর অবশেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেটের জুডিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক মো: মাহবুবুর রহমান ভূঁঈয়ার কাছে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে গণধর্ষণের দায় স্বীকার করে তারা। এর আগে গত ১৮ অক্টোবর শুক্রবার সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক বেগম নওরিন করিম পৃথকভাবে এ দুজনের ৮দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ধর্ষক জাহাঙ্গির পপির বোনজামাই ফয়জুল ইসলামের পাশের বাড়ি দক্ষিণ সুরমার তেতলীর চেরাগী গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে। দায় স্বীকারকারী বারিক মিয়াও একই গ্রামের আব্দুল মনাফের ছেলে। আর গণধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহননকারী ২১ বছর বয়সী পপি বেগম বিশ্বনাথের লালটেক গ্রামের দরিদ্র শুকুর আলী ও জ্যোৎস্না বেগম দম্পতির তৃতীয় মেয়ে।
আদালতে জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা বিশ্বনাথ থানার ওসি (তদন্ত) রমা প্রসাদ চক্রবর্তি। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, গত ৯ অক্টোবর বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বোন ও বোনজামাইর সঙ্গে অভিমান করে নিজ বাড়ি যেতে বের হন পপি। রাত পৌনে ১২টার দিকে বোনের বাড়ির পথ থেকে তুলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে জাহাঙ্গির আলম ও বারিক মিয়া। নিজের ইজ্জত বাঁচাতে না পেরে অবশেষে জাহাঙ্গিরকে পরিচয় দেন পপি বেগম। বলেন, জাহাঙ্গির ভাই ‘তুমি আমারে ছিন-না-নি (চিনতে পারনি), আমি তুমার পাশের বাড়ির ফয়জুলের হালি (শ্যালিকা) পপি’’। পরে বুঝিয়ে-সুজিয়ে ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টারদিকে পপিকে তার বোনের বাড়ি রেখে যান জাহাঙ্গির। এ সময় বোনের গালমন্দ সহ্য করতে না পেরে বোনজামাইকে সঙ্গে নিয়ে ওইদিন সকালে বাড়ি ফিরে একটি চিরকুটে বিস্তারিত লিখে দুপুরে আত্মহত্যা করেন তিনি। ওইদিন বিকেল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দায়সারাভাবে কাজ করেন বিশ্বনাথ থানা পুলিশের এসআই অরুপ সাগর চৌধুরী। তিনি লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে ময়না তদন্তের জন্যে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। আর ১১ অক্টোবর শুক্রবার ময়না তদন্ত শেষে পপিকে দাফন করা হয়। দাফনের চারদিন পর গত ১৩ অক্টোবর রবিবার পপির আত্মহত্যার ঘরেই তার হাতব্যাগে চিরকুট পান তার মা জ্যুৎ¯œা বেগম। পরদিন ১৪ অক্টোবর সোমবার রাতে পপির বাবা শুকুর আলী বাদী হয়ে জামাতা ফয়জুল ইসলামসহ ৪জনকে আসামি করে বিশ্বনাথ থানায় গণধর্ষণ ও আত্মহত্মার প্ররোচণা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন, (মামলা নং ৫)। মামলার প্রেক্ষিতে একে একে ৩ আসামিকে র‌্যাব-৯ ও থানা পুলিশ গ্রেফতার করে আর বারিক মিয়া আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে আটকা পড়েন।
বিশ্বনাথ থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ ওসি (প্রশাসন) শামীম মুসা রহস্য উদঘাটনের সত্যতা জানিয়ে বলেন, পত্রিকার সংবাদ দেখেই তারা (পুলিশ) গণধর্ষণের বিষয়টি জানতে পারেন। সংবাদ প্রকাশ না হলে পুলিশ কেন কেউই জানতো না পপি আত্মহত্যার রহস্য কি ছিলো।