ওসমানীনগরে হিজড়াদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি, অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ

30

ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
ওসমানীনগরে হিজড়াদের ওপেন দেহ ব্যবসা ও বখশিসের নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পেরেছেন এলাকাবাসী। প্রতি দিন মধ্য রাতে উপজেলার গোয়ালাবাজার, তাজপুরবাজার সহ বিভিন্ন বাজারে বসে দেহব্যবসায়ী হিজড়াদের ভাসমান হাট। উটতি বয়সী ছেলে স্কুল কলেজ পড়–য়া ছাত্র যুবক সহ বিভিন্ন বয়সী পুরুষদের খদ্দের হিসেবে ব্যবহার করছে হিজড়ারা। প্রায় প্রদিন মধ্যরাতে উল্লেখিত স্থানে হিজড়া দেহ ব্যববসায়রা অধ্যাধিক সাজগোজ করে মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায় খদ্দের অপেক্ষায়। কোনো কোনো সময় পূর্বে থেকে খদ্দের ঠিক করে রাখা হয় অনেক সময় আবার স্পটেই খদ্দেরদের সাথে দামদর করে বিছানা নিয়ে যাওয়া হয়। উপজেলার গোয়ালাবাজার, তাজপুরবাজার, উমরপুর খাদিমপুর রোড, গোয়ালাবাজার কালাসারা হাওর রোড সহ বিভিন্ন এলাকায় থানা পুলিশের নাকের ডগায় প্রতিনিয়ত অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে হিজড়ারা। দিনের বেলায় মহসড়ক সহ বিভিন্ন এলাকায় পূজা পার্বণ, বিয়ে বাড়ি বিয়ের গাড়ি ও প্রবাসীযাত্রীদের গাড়ির গতিরোধ করে চাঁদা আদায় করছে তারা। তাদের দাবীকৃত চাঁদা না দিলে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ নানা অঙ্গভঙ্গি সহ জনসাধারণের গায়ে পর্যন্ত হাত তুলে ফেলে হিজড়ারা। শুধু চাঁদাবাজি করে কান্ত নয় হিজরা গোষ্ঠীরা তারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেহ ব্যবসা অসামাজিক কার্যকলাপ সহ রাতের আধারে রাস্তাঘাটে মানুষদের ছিনতাই করে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের বেপরোয়া আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।
হিজড়াদের চাঁদাবাজি সহ নানা অপকর্মের বিষয়ে স্থানীয় থানা পুলিশকে জনপ্রতিনিধি সংবাদ কর্মীনা সচেতনরা ওয়াকিবহাল করলেও পুলিশ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করছে না। পুলিশ বলছে অপরাধী হিজড়াদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ দিলে তারা ব্যবস্থা নেবেন। এ ব্যাপারে একাধিকবার উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভা ও ওসমানীনগর থানায় ওপেন হাউস ডেতে সাংবাদিক সহ জনপ্রতিনিধিরা পুলিশকে অবহিত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সিলেট তথা এ অঞ্চলের সব চেয়ে বড় বাণিজ্যিক প্রাণ কেন্দ্র গোয়ালাবাজারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পুরো গোয়ালাবাজারে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও হিজড়াদের অপকর্ম বন্ধ হচ্ছে না।
এদিকে গাড়ির গতিরোধ করে হিজড়াদের চাঁদাবাজি কালে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশংকা প্রকাশ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বখশিসের নামে চাঁদা আদায় করতে গতিশীল গাড়ির সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে গতিরোধ এবং তাদের কাংখিত চাঁদা না দিয়ে যেতে চাইলে গাড়িতে ঝুলে থাকে তারা। অনেক সময় চলন্ত গাড়িতে ঝুলে থাকতেও তাদের দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে যখন-তখন বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। এছাড়া তাদের চাঁদাবাজিকালে মহাসড়কের যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে।
বেশ কিছুদিন ধরে ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার, তাজপুর, দয়ামীর ও শেরপুর এলাকায় মহাসড়কের পাশে ওৎ পেতে থাকে হিজরারা। কোন বিয়ের গাড়ি বা প্রবাসী যাত্রীর দামি গাড়ি দেখা মাত্রই গাড়ির সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে বখশিস হিসেবে ৫ হাজার টাকা দাবি করে। কোন কোন সময় গাড়ির চাবিও কেড়ে নেয়। টাকা পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিনś অশি¬ল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শনসহ অশালীন মন্তব্য শুরু করে তারা। হিজরাদের এমন আচরণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় বর, বরযাত্রী ও প্রবাসী যাত্রীদের। তাদের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে কমপক্ষে ১ হাজার টাকা গুণতে হয়।
সম্প্রতি এক যোগে গোলাবাজার, গয়নাঘাট, তাজপুর কদমতলা ও কদমতলা বালাগঞ্জ সড়কে কয়েকটি বিয়ের গাড়ি গতিরোধ করে আটকিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে পাখি হিজরা নামের অনুসারী কয়েজন হিজরা। শুভ কাজে বের হওয়া আর মানসম্মানের ভয়ে এক প্রকার বাধ্য হয়ে বরের পক্ষের লোকজন হিজরাদের চাঁদা দিয়ে ছাড়া পেতে হয়।
সরজমিন গত কয়েক দিন রাতে গোয়ালাবাজার ঘুরে দেখা যায়, পাখি হিজড়া নামের এক হিজড়ার নেতৃত্বে কতিপয় বেশ কিছু হিজরা রাতে দেহ ব্যবসা চারিয়ে যাচ্ছে। গত বুধবার রাত ৯টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের গোয়ালাবাজার হাজী মার্কের সম্মুখে পাখি হিজড়ার নেতৃত্বে একদল হিজড়া একটি বিয়ের গাড়ী আটকিয়ে চাঁদা দাবী করে। বর পক্ষ হিজড়াদের চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালো হিজড়ারা অশোভন আচরণ সহ নানা অঙ্গিভঙ্গি প্রদর্শন করে বরের গাড়ি বহর আটকিয়ে রাখে। এ সময় মহা সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে মানসম্মানের ভয়ে এক হাজার টাকা দিয়ে হিজড়াদের কবল থেকে মুক্তি পায় বর পক্ষ।
গোয়ালাবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সেক্রেটারি তাজ উদ্দিন বলেন, হিজড়াদের উৎপাতে আমরা এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। গোয়ালাবাজারে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে তা বন্ধ করা যাচ্ছে। হিজড়াদের ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনও অঅমারকে সাহায্য করছে না।
গোয়ালাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিক বলেন, হিজরাদের উৎপাতে অতিষ্ঠ এলাকার সাধারণ মানুষ। প্রতিনিয়ত হিজরাদের ব্যাপারে মানুষ বিচার দিচ্ছে। উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভা সহ পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করার পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে না। অপরাধার নির্মুলে গোয়ালাবাজারে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। তার পরও হিজড়াদের উৎপাত বন্ধ করা যাচ্ছে না।
ওসমানীনগর থানার ওসি এসএম আল মামুন বলেন, বিষয়টি আমাকে মৌখিক ভাবে অনেকেই বলেছেন, সুনির্দিষ্ট ভাবে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে হিজরাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।