ছাতকের মৈশাপুর মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি

82

ছাতক থেকে সংবাদদাতা :
ছাতকের উত্তর খুরমা ইউয়িনের মৈশাপুর মুসলিমকোনা জামে মসজিদ ফান্ডের টাকা ও আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে মুসলিমকোনা গ্রামের দু’পক্ষের মধ্যে বিরাজ করছে উত্তেজনা। যেকোন মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসি। মঙ্গলবার দুপুরে মসজিদ প্রাঙ্গনে উভয় পক্ষ মখোমুখি হয়ে উত্তপ্ত বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় তা সংংঘর্ষে গড়ায়নি। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই মসজিদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে পক্ষে-বিপক্ষে আদালত ও থানায় পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ দু’পক্ষের মতবিরোধ ও পাল্টাপাল্টি মামলার কারনে মসজিদের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
জানা যায়, গ্রাম পঞ্চায়তের উদ্যোগে ১৯৯১ সালে মৈশাপুর মুসলিমকোনা গ্রামে সরকারী ভুমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় জামে মসজিদ। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দীর্ঘ প্রায় ২৮ বছর মসজিদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন গ্রামের মৃত শফি উল্লার পুত্র হাজী মখলিছ আলী। এ মসজিদের জন্য মখলিছ আলী ৪ শতক ভূমিও দান করেছেন বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মসজিদের দখলে থাকা প্রায় ৮ কেয়ার ফসলী জমি ও দুটি পুকুর এক বছর মেয়াদে মৌখিক লিজ দিয়ে লিজের টাকা মসজিদের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হচ্ছে। মসজিদের আয় ব্যয়ের হিসাব নিয়ে মুলত তখন থেকেই মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। ২০১১ সালের ১৫এপ্রিল এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় মসজিদের মোতওয়াল্লী ফিরোজ আলী বাদী হয়ে ছাতক থানায় একটি মামলাও দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকে দু’পক্ষের বিরোধ আরো তীব্রতর হতে থাকে। চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর মসজিদ ফান্ডের ১ লক্ষ ৯ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে হাজী মখলিছ আলী বাদী হয়ে গ্রামের ফিরোজ আলীসহ প্রতিপক্ষের ১২ জনের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ আমল গ্রহনকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, বর্তমানে মখলিছ আলী শারীরীরক অসুস্থতার কারনে মসজিদের ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব গ্রহন করেন তার পুত্র রফিকুল ইসলাম। এ বছর মসজিদের জমি লিজ দিয়ে প্রাপ্ত ২৫ হাজার টাকা মোতওয়াল্লী নজীর আলীর হাতে তুলে দেন রফিকুল ইসলাম। অপরদিকে পুকুর লিজের ৫৭ হাজার টাকা ও গাছের ডাল-পালা বিক্রিসহ মোট ১ লাখ ৯ হাজার টাকা মসজিদ ফান্ডে জমা না দিয়ে প্রতিপক্ষরা আত্মসাৎ করেন। মসজিদ ফান্ডের টাকা জমা দেয়ার কথা বলা হলে প্রতিপক্ষরা এসব টাকা দিতে অসম্মতি জানায়। এ ঘটনার দু’দিন পর ১৯ সেপ্টেম্বর ফিরোজ আলী বাদী হয়ে মখলিছ আলীসহ প্রতিপক্ষের ১১ জনের বিরুদ্ধে মসজিদের ১২০ টি গাছ বিক্রির ২লাখ ৫৭ হাজার টাকা আত্মসাতে অভিযোগে সুনামগঞ্জ আমল গ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পৃথক মামলা দায়ের করেন। স্থানীয়রা জানান, মসজিদের উন্নয়নের জন্য সম্প্রতি মসজিদ আঙ্গিনায় বড় হওয়া বিভিন্ন প্রজাতির ৩৬টি গাছ স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের কাছে ১লাখ ৪ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। যা মসজিদ ফান্ডে ক্যাশিয়ারের কাছে জমাও হয়েছে। ১২০ টি গাছ বিক্রির দাবী সঠিক নয়। অপর দিকে ফিরোজ আলী পক্ষের কাছে থাকা পুকুর ও জমি লিজের টাকা মসজিদ ফান্ডে জমা দেয়া হয়নি। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ব্যাপার হাজী মখলিছ আলী জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে তিনি এ মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। মসজিদের জন্য তিনি নিজের ৪ শতক ভূমিও দান করেছেন। এখনো মসজিদের কাজ চলমান রয়েছে। গ্রামের একটি পক্ষ উন্নয়ন না করে মসজিদ ফান্ডের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে আত্মসাত করতে চায়। তিনি আত্মসাতের পক্ষে না থাকায় তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তারা। সাবেক মোতাওয়াল্লী ফিরোজ আলী এ ব্যাপারে জানান, সরকারী খাস ভুমিতে প্রতিষ্ঠিত মসজিদের মালিকানা দাবী করে ইচ্ছে মত মসজিদ পরিচালনা করতে চান মখলিছ আলী। মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসেব গ্রাম-পঞ্চায়ের কাছে দিতে তিনি অসম্মতি জানান। যে কারনে গ্রাম-পঞ্চায়তের সাথে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদ আঙ্গিনায় বড় হওয়া চামল, রেন্টিসহ বিভিন্ন প্রজাতীর ১২০টি গাছ সম্প্রতি বিক্রি করে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন তিনি।