সক্রিয় নব্য জেএমবি, স্লিপার সেলের মতো হামলা করে পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা

16

কাজিরবাজার ডেস্ক :
নব্য জেএমবি নামের জঙ্গি সংগঠনের জঙ্গিদের চোরাগুপ্তা বোমা হামলার শিকার হচ্ছে পুলিশ। স্লিপার সেলের মতো ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে হামলা করে যাচ্ছে জঙ্গিরা। প্রতিশোধ নিতেই জঙ্গিরা মূলত: পুলিশকে বোমা হামলার টার্গেট করছে। মদদ দিচ্ছে দেশী-বিদেশী মহল। জঙ্গি হামলার মাধ্যমে পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দিয়ে দেশে অরাজক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের দাবি। তদন্ত কমিটি সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের একের পর এক জঙ্গি বিরোধী অভিযানে জঙ্গি সংগঠনগুলোর মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাওয়ার পর জঙ্গিরা এখন পলায়নমুখী। গুলশান হলি আর্টিজান বেকারি ও শোলাকিয়ায় ঈদগাহ মাঠে জঙ্গি হামলার পর গত তিন বছরে দেশে কোন জঙ্গি হামলা করতে পারেনি জঙ্গিরা। এখন আবার নতুন করে চলতি বছরে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায়, গুলিস্তান, মালিবাগ, পল্টন ও খামারবাড়িতে পুলিশের ওপর বোমা হামলা ও পুলিশ বক্সের কাছে বোমা রাখার ঘটনা ঘটছে। আকস্মিকভাবে এসব ঘটনা এমনভাবে ঘটানো হচ্ছে যে, কখন কোথায় কিভাবে ঘটানো হবে তা আগাম কেউই জানতে পারছে না। চোরাগুপ্তা স্টাইলে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাগুলো বড় ধরনের জঙ্গি হামলার ইঙ্গিত বলে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের দাবি। পুলিশের ওপর এ ধরনের হামলা যাতে না করতে পারে সে জন্য পুলিশের করণীয় কি তা নির্দেশ দিয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার প্রায় পাঁচ দিন পর রাজধানীর বছিলার জঙ্গি আস্তানায় দুই সন্ত্রাসীর আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একই দিনে রাজধানীর গুলিস্তানে ট্রাফিক পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপের ঘটনার পর আইএস এর দায় স্বীকার করে। শ্রীলঙ্কার জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশের জঙ্গিদের মধ্যে বেশি তৎপরতা দেখা গেছে। তারা নতুন করে হুমকি সংবলিত বিভিন্ন রকমের বার্তা পোস্ট করে জনমনে ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সম্প্রতি জঙ্গিদের প্রোপাগান্ডা চ্যানেল আল মুরসালাত মিডিয়া থেকে ‘শীঘ্রই আসছে, ইনশাল্লাহ’ লেখা একটি পোস্টার নিয়ে হইচই শুরু হয়। তবে এটি জঙ্গিদের একটি ভিডিও ‘নাশীদ’ প্রকাশের পোস্টার ছিল বলে জানিয়েছেন নিয়মিত জঙ্গিবাদ পর্যবেক্ষণ করেন এমন ব্যক্তিরা। কিন্তু এই ঘটনার তিন দিনের মাথায়, ঢাকার গুলিস্তানে তিন পুলিশ সদস্যকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায় মোটরবাইকে থাকা অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। এর আগে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা আইইডি এর মাধ্যমে সেদিন সকালেই ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি জঙ্গি আস্তানায় র‌্যাবের অভিযানের সময় দুই জঙ্গি আত্মঘাতী হয়। অথচ এতদিন পরও আত্মঘাতী জঙ্গিদের, পরিচয় উদঘাটিত হয়নি। মোহাম্মদপুরের বছিলায় আত্মঘাতী হওয়া জঙ্গি ক্যাম্প থেকে দুইটি পিস্তল ও চারটি আইইডি নিষ্ক্রিয় করা হয়। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই ধারণা করা হচ্ছে, জঙ্গিরা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে, ছক কষছে বড় ধরনের জঙ্গি হামলার।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, গত কয়েক মাসে চার-পাঁচটি ঘটনার বাইরে আগের সব সন্ত্রাসী ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং অধিকাংশ মামলার চার্জশিট হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু মামলার বিচার হয়েছে, কিছু বিচারাধীন রয়েছে। সে কারণে পুলিশের প্রতি হামলাকারী সন্দেহভাজন জঙ্গিদের প্রচ- একটা ক্ষোভ আছে। কারণ নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই গ্রেফতার হয়েছে, কেউ কেউ পুলিশি অভিযানে নিহত হয়েছে এবং আত্মঘাতী হয়েছে। তিনি বলেছেন, কিছুদিন আগে রাজধানীর দুটি পুলিশ বক্সের সামনে বোমা রাখা হয়েছিল, সেগুলো বিস্ফোরিত হয়নি। সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট সায়েন্সল্যাবের ঘটনা থেকে এখন পর্যন্ত যতটুকু তথ্যউপাত্ত পাওয়া গেছে তাতে পুলিশই মূলত এর টার্গেট ছিল। জঙ্গিরা যখনই সংগঠিত হতে চেয়েছে, পুলিশের তৎপরতায় তারা ব্যর্থ হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে। এই কাজটাকে তারা মেনে নিতে পারেনি। এ কারণে পুলিশের প্রতি তাদের সাংগঠনিক যে ক্ষোভ ছিল, সেটাকে তারা কাজে লাগাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এই কর্মকর্তা।