সিটি কর্পোরেশনের অভিযান কাজে আসেনি ॥ ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও ইজিবাইকের ব্যবসা আবারো রমরমা

118

ষ্টাফ রিপোর্টার  :
নগরীর লামাবাজার ও শেখঘাট এলাকায় রাস্তার দু’পাশে গড়ে উঠা ব্যাটা রিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক (টমটম) শো-রুম সিটি কপোরেশন কর্তৃক বন্ধ ও সিলগালা করে দেয়ার কয়েকদিনের মাথায় আবারও দোকান খুলে বসেছেন মালিকরা। বন্ধ ও সিলগালা করে দেয়া দোকান কি করে খোলা হল এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। তবে অনেকেই বলছেন সংশ্লি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই দোকান খোলার সাহস করেছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও মালিকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের বক্তব্য বিগত কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখেই তারা মেয়রকে বুঝিয়ে শুনিয়ে দোকান খোলার ব্যবস্থা করেছেন।
তবে সচেতনমহলের অনেকেই বলছেন, যদি সিটি কপোরেশন এমনটাই করবেন তাহলে এই লোক দেখানোর অভিযানের দরকারই বা কি? আর অভিযান চালানোর পর দোকান সিলগালা করে দিয়ে তাতে “এই স¤পত্তির মালিক সিটি কপোরেশন” এ ধরণের হাস্যকর নোটিশ টাঙ্গানোরই দরকারই বা কি ছিল?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০ জুলাই নগরীতে ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও ইজিবাইক (টমটম) চলাচল বন্ধ করতে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) অভিযান শুরু করেন। ওইদিন সন্ধ্যা থেকে নগরীর ভিআইপি রোডের লামাবাজার ও শেখঘাট এলাকায় গড়ে ওঠা বেশ কিছু ব্যাটারিচালিত রিক্সা, অটোরিক্সা ও ইজিবাইক (টমটম) কয়েকটি শোরুমে অভিযান চালানো হয়। এ সময় অনুমোদনহীন ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক (টমটম) বিক্রি ও বাজারজাত করার অপরাধে বেশ কয়েকটি শো-রুম সিলগালা করা হয়। তখন অভিযানের সহযোগিতায় ছিলো সিলেট মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।
অভিযান শেষে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও একটি চক্র দীর্ঘদিন থেকে নগরীর ভিআইপি রোডের লামাবাজার থেকে শেখঘাট পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অর্ধশতাধিক ছোট বড় শোরুমে ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিক্সা ও ইজিবাইক (টমটম) রেখে বাজারজাত করছে। সিসিকের পক্ষ থেকে একাধিকবার এ ধরণের রিক্সা বিক্রি ও বাজারজাত না করতে নিষেধ প্রদান করলেও সংশি¬ষ্টরা কোন কর্ণপাত করেনি। যার কারনে বাধ্য হয়ে অভিযানে নামতে হয়েছে। তিনি এও জানান, ধারাবাহিকভাবে এদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে।
অভিযানে তখন সিলেট মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার নিকুলিন চাকমা, সিটি কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত সন্তু, সিকন্দর আলী, রকিবুল ইসলাম ঝলকসহ সিসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে সরকারি এক আদেশে নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক (টমটম) বাজারজাত নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়। ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক সমিতি সরকারি এই নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে উচ্চ আদালতে একটি রিট করলে তা খারিজ হয়ে যায়।
গতকাল শনিবার লামাবাজার ও শেখঘাট এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক (টমটম) দোকানগুলো খোলে ব্যবসায়ীরা আগের মতোই তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া সিসিক কর্তৃক সিলগালা হওয়া দোকানগুলো খোলা রয়েছে। এদিকে, দক্ষিণ সুরমা এলাকায় চলাচল হওয়া প্রায় ৩শ’ ইজিবাইক (টমটম) চলাচল নিয়ে চলছে রাজনীতি খেলা। যেকোন সময় এনিয়ে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের আশংকা করছেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে লামাবাজার আমিনা অটোসের মালিক জিয়াউর রহমান জিয়া এ প্রতিবেদককে জানালেন, সিসিক কর্তৃপক্ষ ও আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর লোকজন ব্যাটারিচালিত রিক্সা, ও ইজিবাইক (টমটম) এর শোরুমে অভিযান চালিয়ে গত ২০ জুলাই সন্ধ্যায় অভিযান শুরু করে তাদের দোকানপাট বন্ধ ও সিলগালা করে যায়। পরে সকল ব্যবসায়ী মিলে বিষয়টি নিয়ে তারা সিটি কপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে যান। তখন মেয়র আরিফ তাদেরকে মৌখিকভাবে দোকানপাট খোলার অনুমতি দেন। সে থেকে আমরা সবাই ব্যবসা করে আসছি বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট সিটি কপোরেশন এর জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তা শাহাব উদ্দিন শিহাব বলেন, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, ও ইজিবাইক (টমটম) এর শোরুমের ব্যবসায়ীরা সিসিক মেয়রের কাছে লিখিতভাবে আগামী ৩ মাস গ্রাম্য ক্রেতাদের কাছে গাড়ীগুলো বিক্রির প্রতিশ্র“তি দিয়ে দোকানপাট খোলেছেন। তিনি জানান, ৩ মাস ব্যবসা করার পর ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা নিয়ে গ্রামে যেতে হবে, যদি না যান তাহলে আগের মতো অভিযান চালিয়ে তাদের দোকান বন্ধ করে দেয়া হবে।