বিভক্ত হয়ে তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে জেএমবি

13

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সারাদেশের ৬৩ জেলায় সিরিজবোমা হামলা করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসা জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা জেএমবির বর্তমান প্রধান বা আমির কে? ২০০৫ সালের ১৭ আগষ্ট দেশব্যাপী বোমা হামলা করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসা জেএমবি এখন দুই নামের দুই ধারায় বিভক্ত। পুরনো জেএমবি ও নব্য জেএমবি; দুই নামের দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে জঙ্গি তৎপরতা চালাতে গিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ভেঙ্গে পড়লেও এখনও তাদের পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি। বিভিন্ন সময়ে নিত্যনতুন নামের প্রধান বা আমিরের নেতৃত্বে তাদের আবির্ভাব ঘটছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, একের পর এক শীর্ষ জঙ্গি নেতা আটকের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে একেক সময় একেকজনকে নব্য জেএমবির আমির বলে দাবি করা হয়। এ পর্যন্ত ১২ ব্যক্তির নাম নিষিদ্ধ এই সংগঠনের আমির হিসেবে আলোচনায় এসেছে বিভিন্নভাবে। জঙ্গিদের কয়েকটি শাখার নামও বিভিন্নভাবে আলোচনায় আসছে। কেউ কেউ আইএস ভাবাদর্শে শাখার নাম প্রচার করে আসছে। আসলে জঙ্গি সংগঠনের নাম যাই হোক না কেন মূল লক্ষ্য একই। সম্প্রতি আবু আল-বাঙালী নামে এক ব্যক্তিকে নব্য জেএমবির আমির বলে দাবি করা হয়। তবে এটাও যে সঠিক তাও নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারেন না। নব্য জেএমবির আমির আসলে কে? দাবিদার অনেকে থাকলেও আসলেই তারা নব্য জেএমবির প্রধান কিংবা আমির কিনা সে বিষয়ে সত্যতা পায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই বিভিন্ন সময় একেকজনকে নব্য জেএমবির আমির হিসেবে বলে আসছে।
জেএমবির নানা সময়ের নতুন আমিরের নেতৃত্ব তছনছ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে পর্যায়ক্রমে মাওলানা সাইদুর রহমান ও সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হকের নাম আসে জেএমবির আমির হিসেবে। সাইদুর রহমান আটক ও মেজর জিয়ার রহস্যজনক অন্তর্ধানের পর নব্য জেএমবি গঠিত হয়েছে বলে প্রচার রয়েছে। নব্য জেএমবির আমির হিসেবে আবদুর রহমান, আবুল কাশেম, সোহেল মাহফুজ, তামিম চৌধুরী, সারোয়ার জাহান, মাঈনুল হক মুসা ও সর্বশেষ আইয়ুব বাচ্চু ওরফে সাজিদের নাম প্রচার পেয়েছে। তবে কেবল আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে নব্য জেএমবির আমিরের যোগাযোগ থাকতে পারে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধারণা করছে। একের পর এক শীর্ষ নেতা আটক ও নিহতের পর নেতৃত্বে নতুন নতুন নাম আসায় নব্য জেএমবির আমিরের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর আলোচনা উঠে আসা জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির আমির কে তা নিয়ে রীতিমতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেও বিতর্ক দেখা দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে একবার বলা হয়েছে, সোহেল মাহফুজ আমির। র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সারোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট বলছে, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী। গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে, নব্য জেএমবির আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শায়খ মাওলানা আবুল কাশেম। এই আধ্যাত্মিক গুরু এখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। যদিও জেএমবি আমির হিসেবে যাদের নাম আলোচনা হচ্ছে তাদের অনেকের কর্মকা-ই তেমন আলোচিত নয়। হঠাৎ্ করে একেক নাম শুনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সংস্থার সদস্যদের কাছেও এ নিয়ে খটকা লাগছে বলে জানা গেছে।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, নব্য জেএমবির আমির কে এটা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। পুরনো জেএমবি নব্য জেএমবি হিসেবে আবির্ভূত হয়ে গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পরে বিভিন্ন অভিযানে নব্য জেএমবি জঙ্গি সংগঠনটির নেতৃত্ব তছনছ হয়ে গেছে। একেক সময় একেকজনের নাম পাওয়া যাচ্ছে নতুন আমির হিসেবে। সর্বশেষ কলকাতায় গ্রেফতার হওয়া চার জঙ্গির জবানবন্দীতে আমির হিসেবে নাম এসেছে ডনের। নব্য জেএমবির নতুন আমির ‘ডন ভাই’। কিন্তু কে এই ডন ভাই? এটা তার সাংগঠনিক নাম। প্রকৃত নাম কি? পরিচয় কি তার। এটাও সঠিক কিনা, কিংবা ডনইবা কে? তার অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তার দাবি। একের পর এক শীর্ষ জঙ্গি নেতা আটক বা নিহত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের নব্য জেএমবির আমির বলে দাবি করা হয়। আসলে নব্য জেএমবির আমির কে? বর্তমানে নব্য জেএমবির নেতৃত্বইবা আসছে কোথা থেকে?
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তারই প্রশ্ন, একের পর এক জঙ্গিবিরোধী অভিযানে শীর্ষ জঙ্গিরা হয় নিহত, নয়ত গ্রেফতার বা পলাতক থাকার মধ্যেই আত্মঘাতী জঙ্গি তৎপরতা চলে কিভাবে? তা হলে কি জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেপথ্যে কোন শক্তি বা মহল কাজ করে যাচ্ছে? নতুবা একজন নিহত বা আটক হলেই আরেক জনকে আমির ঘোষণা করা হচ্ছে কিভাবে? আর কিছুদিন পর পরই আত্মঘাতী জঙ্গি নিহত বা গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। চলমান জঙ্গিবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করে অধরা জঙ্গিদের আটক ও জঙ্গি নেতৃত্ব নিঃশেষ না করা পর্যন্ত জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই-এমন কথা বলার সময় এখনও আসেনি।