নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তে বিএনপির তৃণমূল নেতারা খুশি

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
এখন থেকে সকল নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা খুশি। সেই সঙ্গে একটি ভুল সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় দলের হাইকমান্ডের প্রতি সন্তুষ্ট তারা। এই ইতিবাচক সিদ্ধান্তের ফলে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা নির্বাচনমুখী হওয়ার পাশাপাশি তৃণমূলে দল চাঙ্গা হবে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি হাইকমান্ড এ সরকারের আমলে আর কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা হতাশ হয়। এর ফলে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি দলের অনেক তৃণমূল নেতা। আর দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দুই শতাধিক তৃণমূল নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এর ফলে মাত্র কয়েকটি উপজেলা ছাড়া অধিকাংশ উপজেলায়ই বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা পরাজিত হন। এ বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখেনি বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তারা কেন্দ্রে চিঠি লিখে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানায়।
বিএনপি পন্থী বুদ্ধিজীবীরাও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে থাকেন। এ পরিস্থিতিতে এক পর্যায়ে বিএনপি হাইকমান্ডেরও বোধোদয় হয়। সম্প্রতি তারেক রহমানের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের এক স্কাইপে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় এখন থেকে সকল নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। তবে দলীয় প্রতীকে নয় স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে দলের প্রার্থীরা। সকল নির্বাচনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে সর্বস্তরে দলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখার কৌশল হিসেবেই বিএনপি আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এমন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করা হলে তৃণমূল পর্যায়ে সামাজিক বন্ধন নষ্ট হয় বলে দলের নেতারা মনে করছেন। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, গ্রাম পর্যায়ে নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিভাজন দেখা দিলে আত্মীয়স্বজনসহ নিজ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও বিভাজন দেখা দেয়। আর একই দলে একাধিক প্রার্থী থাকলে চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাজনীতিতে কোন সিদ্ধান্তই চিরস্থায়ী নয়। আমরা সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এখন থেকে সকল নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নয় স্বতন্ত্রভাবে দলীয় প্রার্থীরা অংশ নেবে। কারণ, যখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার সরকারী সিদ্ধান্ত হয় তখন থেকেই আমরা এর বিরোধিতা করে আসছিলাম। আমরা মনে করি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবেই অর্থাৎ রাজনৈতিক দলের প্রতীকে না হওয়া উচিত।
সূত্র মতে, একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্ব সঙ্কটের কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও তৃণমূল পর্যায়ে এখনও দলের নেতাকর্মীরা সক্রিয়। কেন্দ্রীয় বিএনপি রাজপথে এখনও কোন কর্মসূচী পালন করতে না পারলেও তৃণমূল পর্যায়ে রাজপথের কর্মসূচী পালিত হয় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতেই। আর এ কারণে নির্বাচনের বিষয়ে কৌশল পরিবর্তন করে বিএনপি। এখন থেকে যখন যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে তখনই দলীয় প্রার্থী দিয়ে বিজয়ের জন্য নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় থাকবে বিএনপি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিএনপি আর কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ায় রাজনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় দলের শতাধিক নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার নিশ্চিত সুযোগ হারিয়েছে। শুধু তাই নয়, সারাদেশের প্রতিটি উপজেলায় এ নির্বাচনের সময় দলের নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ঘরে বসে থাকতে হয়। এর ফলে সরকারী দলের নেতাকর্মীরা উপজেলা পর্যায়ের রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। তাই বিএনপির অনেক নেতাকর্মী হতাশ হয়ে রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়ে। কেউ কেউ বিএনপি ছেড়ে অন্য দলে চলে যায়। আবার কেউ অন্য দলের প্রার্থী হয়ে বিজয়ীও হয়ে যায়। এ কারণে দলটি রাজনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এদিকে পরবর্তী সকল নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি কিভাবে নির্বাচনে দলের জন্য সুফল বয়ে আনা যায় সে কৌশলও নির্ধারণ করছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখতে নানামুখী কৌশল নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। দলীয়ভাবে নির্বাচন কমিশনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি রাখার পাশাপাশি বিদেশী কূটনীতিক ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখার চেষ্টা করা হবে। মোটামুটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে যে বিজয়ী হওয়া যায় সম্প্রতি বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচন থেকে সে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে বিএনপি।
এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। তাই সব সময়ই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে। তবে একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে বিএনপি এ সরকারের অধীনে আর নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে বাস্তবতার আলোকে। এখন থেকে সব নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করবে না বিএনপি। দলের যারা নির্বাচনে অংশ নেবে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই অংশ নেবে।